যাত্রাপুস্তক1 যাকোব তাঁর পুত্রদের নিয়ে মিশরের পথে চললেন| পুত্রদের সঙ্গে তাদের নিজ নিজ পরিবারও ছিল| ইস্রায়েলের পুত্ররা হল: 2 রূবেণ, শিমিযোন, লেবি, যিহূদা 3 ইষাখর, সবূলূন, বিন্যামীন, 4 দান, নপ্তালি, গাদ এবং আশের| 5 যাকোবের সবশুদ্ধ 70 জন উত্তরপুরুষ ছিল| য়োষেফ তাঁর বারোজন পুত্রের একজন, কিন্তু সে আগে থেকে মিশরে ছিল| 6 পরে য়োষেফ তাঁর ভাইরা এবং ঐ প্রজন্মের প্রত্যেকেই মারা গেলেও 7 ইস্রায়েলের লোকদের অসংখ্য সন্তান ছিল| তাদের লোকসংখ্যা খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে গিয়েছিল| ফলস্বরূপ মিশর দেশটি ইস্রায়েলীয়তে ভরে গিয়েছিল| 8 সেই সময় একজন নতুন রাজা মিশর শাসন করতে লাগলেন| এই রাজা য়োষেফকে চিনতেন না| 9 রাজা তাঁর প্রজাদের উদ্দেশ্যে বললেন, “ইস্রায়েলের লোকদের দিকে চেযে দেখ, ওরা সংখ্যায় অসংখ্য এবং আমাদের থেকে বেশী শক্তিশালী! 10 তাদের শক্তিবৃদ্ধি বন্ধ করবার জন্য আমাদের কিছু একটা চতুরতার সাহায্য নিতেই হবে| কারণ, এখন যদি যুদ্ধ লাগে তাহলে ওরা আমাদের পরাজিত করবার জন্য ও আমাদের দেশ থেকে বের করে দেবার জন্য আমাদের শত্রুদের সঙ্গে হাত মেলাতে পারে|” 11 মিশরের লোকরা তাই ইস্রায়েলের লোকদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলার ফন্দি আঁটল| অতএব ইস্রায়েলীয়দের তত্ত্বাবধান করবার জন্য মিশরীয়রা ক্রীতদাস মনিবদের নিয়োগ করল| এই দাস শাসকরা ইহুদীদের দিয়ে জোর করে রাজার জন্য পিথোম ও রামিষেষ নামে দুটি শহর নির্মাণ করাল| এই দুই শহরে রাজা শস্য এবং অন্যান্য জিনিসপত্র মজুত করে রাখলেন| 12 মিশরীয়রা ইস্রায়েলীয়দের কঠিন পরিশ্রম করতে বাধ্য করল| কিন্তু তাদের যত বেশী কঠিন পরিশ্রম করানো হতে থাকল ততই ইস্রায়েলের লোকদের সংখ্যাবৃদ্ধি এবং বিস্তার ঘটতে থাকল| ফলে মিশরীয়রা ইস্রায়েলের লোকদের আরও বেশী ভয় পেতে শুরু করল| 13 আর সেইজন্য তারা উদ্বিগ্ন হয়ে ইস্রায়েলের লোকদের প্রতি আরও বেশী নির্দয হয়ে উঠল| ফলস্বরূপ মিশরীয়রা ইস্রায়েলীয়দের আরো কঠিন পরিশ্রম করতে বাধ্য করল| 14 মিশরীয়রা ইস্রায়েলীয়দের জীবন দুর্বিসহ করে তুলল| তারা ইস্রায়েলীয়দের ইঁট তৈরি করবার জন্য গাদা গাদা ভারী ঢালাই এর মিশ্রণ বহন করতে এবং মাঠে লাঙল চালাতে বাধ্য করেছিল| তারা ইস্রায়েলীয়দের সব রকমের কঠিন কাজ করতে বাধ্য করেছিল| 15 ইস্রায়েলীয় মহিলাদের সন্তান প্রসবে সাহায্য করবার জন্য দুজন ধাইমা ছিল| তাদের দুজনের নাম ছিল শিফ্রা ও পূযা| 16 বয়ং রাজা এসে সেই দুই ধাইমাকে বললেন, “দেখছি তোমরা বরাবর হিব্রু মহিলাদের সন্তান প্রসবের সময় সাহায্য করে চলেছে| দেখ, যদি কেউ কন্যা সন্তান প্রসব করে তাহলে ঠিক আছে, তাকে বাঁচিয়ে রেখ, কিন্তু পুত্র সন্তান হলে সঙ্গে সঙ্গেই সেই সদ্যোজাত পুত্র সন্তানকে হত্যা করবে|” 17 কিন্তু ধাইমা দুজন ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস রেখে রাজার আদেশ অমান্য করে পুত্র সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখল| 18 রাজা এবার তাদের ডেকে পাঠিয়ে বললেন, “তোমরা এটা কি করলে? কেন তোমরা আমার অবাধ্য হয়েছ এবং পুত্র সন্তানদের বাঁচিয়ে রেখেছ?” 19 ধাইমারা রাজাকে বলল, “হে রাজা, ইস্রায়েলীয় মহিলারা মিশরের মহিলাদের থেকে অনেক বেশী শক্তিশালী| আমরা তাদের সাহায্যের জন্য পৌঁছাবার আগেই ইস্রায়েলীয় মহিলারা সন্তান প্রসব করে ফেলে|” 20 ঈশ্বর ঐ ধাইমাদের এই আচরণে খুশী হলেন| তাই ঈশ্বর ধাইমাদের আশীর্বাদ করলেন এবং তাদের নিজেদের পরিবার বানাতে দিলেন| ইস্রায়েলীয়রা সংখ্যায় আরও বাড়তে থাকল এবং আরও শক্তিশালী হয়ে উঠল| 21 22 পরে ফরৌণ নিজস্ব লোকদের আদেশ দিলেন, “তোমরা কন্যা সন্তান বাঁচিয়ে রাখতে পারো| কিন্তু পুত্র সন্তান হলে তাকে নীলনদে ছুঁড়ে ফেলতে হবে|”
1 লেবি পরিবারের একজন পুরুষ লেবি পরিবারেরই এক কন্যাকে বিয়ে করেছিল| 2 সে সন্তানসম্ভবা হল এবং একটা সুন্দর ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম দিল| পুত্র সন্তান দেখতে এত সুন্দর হয়েছিল য়ে তার মা তাকে তিন মাস লুকিয়ে রেখেছিল| 3 তিন মাস পরে যখন সে তাকে আর লুকিয়ে রাখতে পারছিল না, তখন সে একটি ঝুড়িতে আলকাতরা মাখালো এবং তাতে শিশুটিকে রেখে নদীর তীরে লম্বা ঘাসবনে রেখে এলো| 4 শিশুটির বড় বোন তার ভাইয়ের কি অবস্থা হতে পারে দেখবার জন্য দূরে দাঁড়িয়ে ভাইয়ের ঝুড়ির দিকে লক্ষ্য রাখছিল| 5 ঠিক তখনই ফরৌণের মেয়ে নদীতে স্নান করতে এসেছিল| সে দেখতে পেল ঘাসবনে একটি ঝুড়ি ভাসছে| তার সহচরীরা তখন নদী তীরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল| তাই সে তার সহচরীদের একজনকে ঝুড়িটা তুলে আনতে বলল| 6 তারপর রাজকন্যা ঝুড়িটা খুলে দেখল য়ে তাতে রযেছে একটি শিশুপুত্র| শিশুটি তখন কাঁদছিল| আর তা দেখে রাজকন্যার বড় দযা হল| ভাল করে শিশুটিকে লক্ষ্য করার পর সে বুঝতে পারল য়ে শিশুটি হিব্রু| 7 এবার শিশুটির দিদি আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে রাজকন্যাকে বলল, “আমি কি আপনাকে সাহায্যের জন্য কোনও হিব্রু যাত্রীকে ডেকে আনব য়ে অন্তত শিশুটিকে দুধ খাওয়াতে পারবে?” 8 রাজকন্যা বলল, “বেশ যাও|”সুতরাং মেয়েটি গেল এবং শিশুটির মাকে ডেকে আনল| 9 রাজকন্যা তাকে বলল, “আমার হয়ে তুমি এই শিশুটিকে দুধ পান করাও| এরজন্য আমি তোমাকে টাকা দেব|” তারই মা শিশুটিকে য়ত্ন করে বড় করে তুলতে লাগল| 10 শিশুটি বড় হয়ে উঠলে মহিলাটি তার সন্তানকে রাজকন্যাকে দিয়ে দিল| রাজকন্যা শিশুটিকে নিজের ছেলের মতোই গ্রহণ করে তার নাম দিল মোশি| শিশুটিকে সে জল থেকে পেয়েছিল বলে তার নামকরণ করা হল মোশি| 11 একদিন, মোশি বড় হয়ে যাবার পর সে তার নিজের লোকদের দেখবার জন্য বাইরে গেল এবং দেখল তাদের ভীষণ কঠিন কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে| সে এও দেখল য়ে একজন মিশরীয় একজন হিব্রু ছোকরাকে প্রচণ্ড মারধর করছে| 12 মোশি চারিদিকে তাকিয়ে দেখল কেউ ব্যাপারটা লক্ষ্য করছে না| তখন মোশি সেই মিশরীয়কে হত্যা করে তাকে বালিতে পুঁতে দিল| 13 পরদিন মোশি দেখল দুজন ইস্রায়েলীয় নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে| তাদের মধ্যে একজন অন্যাযভাবে আরেকজনকে মারছে| মোশি তখন সেই অন্যাযকারী লোকটির উদ্দেশ্যে বলল, “কেন তুমি তোমার প্রতিবেশীকে মারছো?” 14 লোকটি উত্তরে জানাল, “তোমাকে কে আমাদের শাস্তি দিতে পাঠিয়েছে? বলো, তুমি কি আমাকে মারতে এসেছ য়েমনভাবে তুমি গতকাল ঐ মিশরীয়কে হত্যা করেছিলে?”তখন মোশি ভয় পেয়ে মনে মনে বলল, “তাহলে এখন ব্যাপারটা সবাই জেনে গেছে|” 15 একদিন রাজা ফরৌণ মোশির কীর্তি জানতে পারলেন; তিনি তাকে হত্যা করতে চাইলেন| কিন্তু মোশি মিদিযন দেশে পালিয়ে গেল|মিদিয়নে এসে একটি কুয়োর সামনে মোশি বসে পড়ল| 16 সেখানে এক যাজক ছিল| তার ছিল সাতটি মেয়ে| কুযো থেকে জল তুলে পিতার পোষা মেষপালকে জল খাওয়ানোর জন্য সেই সাতটি মেয়ে কুযোর কাছে এল| তারা মেষদের জল পানের পাত্রটি ভর্তি করার চেষ্টা করছিল| 17 কিন্তু কিছু মেষপালক এসেছিল এবং তরুণীদের তাড়িয়ে দিয়েছিল| তাই মোশি তাদের সাহায্য করতে এলো এবং তাদের পশুর পালকে জল পান করালো| 18 তখন তরুণীরা তাদের পিতা রূয়েলের কাছে ফিরে গেল| সে বলল, “তোমরা আজ তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছ দেখছি!” 19 তরুণীরা উত্তর দিল, “হ্যাঁ, ওখানে কুযো থেকে জল তোলার সময় কিছু মেষপালক আমাদের তাড়িয়ে দিল| কিন্তু একজন অচেনা মিশরীয় এলো এবং আমাদের সাহায্য করল| সে আমাদের জন্য জলও তুলে দিল এবং আমাদের মেষের পালকে জল পান করালো|” 20 রূযেল তার মেয়েদের বলল, “সেই লোকটি কোথায? তোমরা তাকে ওখানে ছেড়ে এলে কেন? যাও তাকে আমাদের সঙ্গে খাবার নেমতন্ন করে এসো|” 21 মোশি রূযেলের সঙ্গে থাকবার জন্য খুশীর সঙ্গে রাজী হল| রূযেল তার মেয়ে সিপ্পোরার সঙ্গে মোশির বিয়ে দিল| 22 বিয়ের পর সিপ্পোরা একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিল| মোশি তার নাম দিল গের্শোম কারণ সে ছিল প্রবাসে থাকা একজন অপরিচিত ব্যক্তি| 23 দেখতে দেখতে অনেক বছর পেরিযে গেল| মিশরের রাজাও ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছেন| কিন্তু ইস্রায়েলীয়দের তখনও জোর করে কাজ করানো হচ্ছিল| তারা সাহায্যের জন্য কান্নাকাটি শুরু করল| এবং সেই কান্না বয়ং ঈশ্বর শুনতে পাচ্ছিলেন| 24 ঈশ্বর তাদের গভীর আর্তনাদ শুনলেন এবং তিনি স্মরণ করলেন সেই চুক্তির কথা যা তিনি অব্রাহাম, ইস্হাক এবং যাকোবের সঙ্গে করেছিলেন| 25 ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের দেখেছিলেন এবং তিনি জানতেন তিনি কি করতে যাচ্ছেন এবং তিনি স্থির করলেন য়ে শীঘ্রই তিনি তাঁর সাহায্যের হাত তাদের দিকে বাড়িযে দেবেন|
1 রূযেল ছাড়াও মোশির শ্বশুরের আর এক নাম ছিল য়িথ্রো| য়িথ্রো মিদিযনীর একজন যাজক| মোশি য়িথ্রোর মেষের পালের দেখাশোনার দায়িত্ব নিল| মোশি মেষের পাল চরাতে মরুভূমির পশ্চিম প্রান্তে য়েত| একদিন সে মেষের পাল চরাতে চরাতে ঈশ্বরের পর্বত হোরেবে (সিনয়) গিয়ে উপস্থিত হল| 2 ঐ পর্বতে সে জ্বলন্ত ঝোপের ভিতরে প্রভুর দূতের দর্শন পেল| মোশি দেখল ঝোপে আগুন লাগলেও তা পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে না| 3 তাই সে অবাক হয়ে জ্বলন্ত ঝোপের আর একটু কাছে এগিয়ে গেল| মনে মনে ভাবল কি আশ্চর্য় ব্যাপার, ঝোপে আগুন লেগেছে, অথচ ঝোপটা পুড়ে নষ্ট হচ্ছে না! 4 প্রভু লক্ষ্য করছিলেন মোশি ক্রমশঃ ঝোপের দিকে দৃষ্টিপাত করতে করতে কাছে এগিয়ে আসছে| তাই ঈশ্বর ঐ ঝোপের ভিতর থেকে ডাকলেন, “মোশি, মোশি!”এবং মোশি উত্তর দিল, “হ্যাঁ, প্রভু|” 5 তখন প্রভু বললেন, “আর কাছে এসো না| পায়ের চটি খুলে নাও| তুমি এখন পবিত্র ভূমিতে দাঁড়িয়ে আছো| 6 আমি তোমার পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর| আমি অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্হাকের ঈশ্বর এবং যাকোবের ঈশ্বর|”মোশি ঈশ্বরের দিকে তাকানোর ভয়ে তার মুখ ঢেকে ফেলল| 7 তখন প্রভু বললেন, “মিশরে আমার লোকদের দুর্দশা আমি নিজের চোখে দেখেছি| এবং যখন তাদের ওপর অত্যাচার করা হয় তখন আমি তাদের চিত্কার শুনেছি| আমি তাদের যন্ত্রণার কথা জানি| 8 এখন সমতলে নেমে গিয়ে মিশরীয়দের হাত থেকে আমার লোকদের আমি রক্ষা করব| আমি তাদের মিশর থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাব এবং আমি তাদের এমন এক সুন্দর দেশে নিয়ে যাব য়ে দেশে তারা স্বাধীনভাবে শান্তিতে বাস করতে পারবে| সেই দেশ হবে বহু ভাল জিনিসে ভরা ভূখণ্ড|নানা ধরণের মানুষ সে দেশে বাস করে: কনানীয, হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও য়িবুষীয গোষ্ঠীর লোকরা সেখানে বাস করে| 9 আমি ইস্রায়েলীয়দের কান্না শুনেছি| দেখেছি, মিশরীয়রা কিভাবে তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে| 10 তাই এখন আমি তোমাকে ফরৌণের কাছে পাঠাচ্ছি| যাও! তুমি আমার লোক ইস্রায়েলীয়দের মিশর থেকে বাইরে নিয়ে এসো|” 11 কিন্তু মোশি ঈশ্বরকে বলল, “আমি কোনও মহান ব্যক্তি নই! সুতরাং আমি কি করে ফরৌণের কাছে যাব এবং ইহুদীদের মিশর থেকে উদ্ধার করে আনব?” 12 ঈশ্বর বললেন, “তুমি পারবে, কারণ আমি তোমার সঙ্গে থাকব! আমি য়ে তোমাকে পাঠাচ্ছি তার প্রমাণ হবে; তুমি ইস্রায়েলীয়দের মিশর থেকে উদ্ধার করে আনার পর এই পর্বতে এসে আমার উপাসনা করবে|” 13 তখন মোশি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে বলল, ‘কিন্তু আমি যদি গিয়ে ইস্রায়েলীয়দের বলি য়ে, “তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর আমাকে পাঠিয়েছেন,’ তখন তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করবে, ‘তার নাম কি?’ তখন আমি তাদের কি বলব?” 14 তখন ঈশ্বর মোশিকে বললেন, “তাদের বলো, ‘আমি আমিই|’ যখনই তুমি ইস্রায়েলীয়দের কাছে যাবে তখনই তাদের বলবে, ‘আমিই’ আমাকে পাঠিয়েছেন|” 15 ঈশ্বর মোশিকে আরও বললেন, “তুমি অবশ্যই তাদের একথা বলবে: ‘য়িহোবা হলেন তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর, অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্হাকের ঈশ্বর এবং যাকোবের ঈশ্বর| আমার নাম সর্বদা হবে য়িহোবা| এই নামেই আমাকে লোকে বংশ পরম্পরায চিনবে|’ লোকদের বলো, ‘য়িহোবা তোমাকে পাঠিয়েছেন!”‘ 16 প্রভু আরও বললেন, “যাও, ইস্রায়েলের প্রবীণদের একত্র করে তাদের বলো, ‘য়িহোবা, তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর আমাকে দর্শন দিয়েছেন| অব্রাহামের, ইস্হাকের, এবং যাকোবের ঈশ্বর আমাকে বলেছেন: তোমাদের সঙ্গে মিশরে যা ঘটছে তা সবই আমি দেখেছি| 17 আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি য়ে মিশরের দুর্দশা থেকে তোমাদের উদ্ধার করব| আমি তোমাদের উদ্ধার করব এবং তোমাদের কনানীয, হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দের দেশে নিয়ে যাব| আমি তোমাদের বহু সুসম্পদে ভরা ভূখণ্ডে নিয়ে যাব|’ 18 “প্রবীণরা তোমার কথা শুনবে এবং তখন তুমি প্রবীণদের নিয়ে মিশরের রাজার কাছে যাবে| তুমি অবশ্যই যাবে এবং রাজাকে বলবে য়ে য়িহোবা, ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর আমাদের সামনে আবির্ভূত হয়েছিলেন| এখন আমাদের তিনদিন ধরে মরুভূমিতে ভ্রমণ করতে দাও| সেখানে আমরা য়িহোবা, আমাদের ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে উত্সর্গ দান করব|” 19 “কিন্তু আমি জানি য়ে মিশরের রাজা তোমাদের সেখানে য়েতে দেবে না| কেবলমাত্র একটি মহান শক্তিই তাকে বাধ্য করতে পারে তোমাদের যাবার অনুমতি দেবার জন্য| 20 তাই আমি আমার বিরাট ক্ষমতা দিয়ে মিশরীয়দের আঘাত করব| আমি ঐ দেশে আশ্চর্য় সব কাণ্ড ঘটাব| আমার ঐসব অদ্ভুত কাণ্ড ঘটানোর পরেই দেখবে য়ে সে তোমাদের য়েতে দিচ্ছে| 21 এবং আমি ইস্রায়েলীয়দের প্রতি মিশরীয়দের দযালু করে তুলব| ফলে তোমরা যখন মিশর ত্যাগ করবে তখন মিশরীয়রা তোমাদের হাত উপহারে ভরে দেবে| 22 প্রত্যেক ইস্রায়েলীয় মহিলা নিজের নিজের মিশরীয় প্রতিবেশীর বাড়ী যাবে এবং মিশরীয় মহিলার কাছে গিয়ে উপহার চাইবে| এবং মিশরীয় মহিলারা তাদের উপহার দেবে| তোমার লোকরা উপহার হিসাবে সোনা, রূপা এবং মিহি ও মসৃণ পোশাক পাবে| তারপর যখন তোমরা মিশর ত্যাগ করবে তখন সেই উপহারগুলি নিজের নিজের ছেলেমেয়েদের গায়ে পরিযে দেবে| এইভাবে তোমরা মিশরীয়দের সম্পদ নিয়ে আসতে পারবে|”
1 তখন মোশি ঈশ্বরকে বললেন, “কিন্তু আপনি আমাকে পাঠিয়েছেন বললেও ইস্রায়েলের লোকরা তা বিশ্বাস করতে চাইবে না| বরং তারা উল্টে বলবে, ‘প্রভু তোমাকে দর্শন দেন নি|”‘ 2 কিন্তু প্রভু মোশিকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার হাতে ওটা কি?”মোশি উত্তর দিল, “এটা আমার পথ চলার লাঠি|” 3 তখন প্রভু বললেন, “ঐ লাঠিকে মাটিতে ছুঁড়ে ফেল|”প্রভুর কথামতো মোশি তার হাতের পথ চলার লাঠিকে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলতেই ঐ লাঠি তত্ক্ষনাত্ সাপে পরিণত হল| মোশি তা দেখে ভয়ে পালাতে যাচ্ছে দেখে 4 প্রভু মোশিকে বললেন: “যাও কাছে গিয়ে সাপটিকে লেজের দিক থেকে ধরো|”সুতরাং মোশি সাপটির লেজ ধরে ঝোলাতেই দেখল সাপটি আবার লাঠিতে পরিণত হল| 5 তখন প্রভু বললেন, “লাঠি দিয়ে এই চমত্কারিত্ব দেখলেই লোকরা বিশ্বাস করবে য়ে তুমি প্রভু, তোমার পূর্বপুরুষের ঈশ্বরের দেখা পেয়েছ| দেখা পেয়েছ অব্রাহাম, ইসহাক এবং যাকোবের ঈশ্বরের|” 6 তারপর প্রভু মোশিকে বললেন, “আমি তোমাকে আরও একটি প্রমাণ দেব| আলখাল্লার নীচে হাত রাখো|”তাই মোশি আলখাল্লা খুলে হাত ভেতরে রাখলো| তারপর সে তার হাত বের করে দেখল হাতটি শ্বেতীতে ভরে গেছে| 7 তখন প্রভু বললেন, “এবার আবার আলখাল্লার ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দাও|” তাই মোশি আবার তার হাত আলখাল্লার ভেতরে ঢুকিয়ে দিল এবং তা বের করে আনার পর মোশি দেখল তার হাত আবার আগের মতোই স্বাভাবিক সুন্দর হয়ে গেছে| 8 তারপর প্রভু বললেন, “যদি লোকরা লাঠিকে সাপ বানানোর কীর্তি দেখার পরও তোমাকে বিশ্বাস না করে তাহলে হাতের ব্যাপারটি দেখাবে| তখন তোমাকে তারা বিশ্বাস করবে| 9 যদি এই দুটো প্রমাণ দেখানোর পরও লোকরা তোমাকে বিশ্বাস না করে তাহলে নীলনদ থেকে সামান্য জল নেবে| সেই জল মাটিতে ঢালবে এবং জল মাটিকে স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে তা রক্তে পরিণত হবে|” 10 তখন মোশি প্রভুর উদ্দেশ্যে বললেন, “কিন্তু প্রভু আমি তো একজন চতুর বক্তা নই| আমি কোনোকালেই সাজিযে গুছিযে কথা বলতে পারি না| এবং এখনও আপনার সঙ্গে কথা বলার পরেও আমি সুবক্তা হতে পারি নি| আপনি জানেন য়ে আমি ধীরে ধীরে কথা বলি এবং কথা বলার সময় ভাল ভাল শব্দ চযন করতে পারি না|” 11 তখন প্রভু তাকে বললেন, “মানুষের মুখ কে সৃষ্টি করেছে? এবং কে একজন মানুষকে বোবা ও কালা তৈরী করে? কে মানুষকে অন্ধ তৈরী করে? কে মানুষকে দৃষ্টিশক্তি দেয়? আমি যিহোবা| আমিই একমাত্র এইসব করতে পারি| 12 সুতরাং যাও| যখন তুমি কথা বলবে তখন আমি তোমায় কথা বলতে সাহায্য করব| আমিই তোমার মুখে শব্দ জোগাব|” 13 তবু মোশি বলল, “হে আমার প্রভু, আমার একটাই অনুরোধ, আপনি এই কাজের জন্য অন্য একজনকে মনোনীত করুন, আমাকে নয়|” 14 মোশির প্রতি প্রভু তখন ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, “বেশ! তাহলে তোমাকে সাহায্য করার জন্য আমি তোমার ভাই হারোণকে তোমার সঙ্গে দিচ্ছি| হারোণ লেবীয় পরিবারের সন্তান এবং সে বেশ ভাল বক্তা| হারোণ ইতিমধ্যেই তোমার সঙ্গে দেখা করার জন্য আসছে| এবং সে তোমাকে দেখে খুশীই হবে| 15 হারোণ তোমার সঙ্গে ফরৌণের কাছে যাবে| তোমাদের কি বলতে হবে তা আমি বলে দেব| কি করতে হবে তা আমি তোমাদের শিখিযে দেব এবং তুমি তা হারোণকে বলে দেবে| 16 তোমার হয়ে হারোণ লোকদের সঙ্গে কথা বলবে| তুমি হবে তার কাছে ঈশ্বরের মতো| আর হারোণ হবে তোমার মুখপাত্র| 17 সুতরাং যাও এবং সঙ্গে তোমার পথ চলার লাঠি নাও| আমি য়ে তোমার সঙ্গে আছি তা প্রমাণ করার জন্য লোকদের এই চিহ্ন-কার্য়্য়গুলি দেখাও|” 18 মোশি তখন তার শ্বশুর যিথ্রোর কাছে ফিরে গেল| মোশি তার শ্বশুরকে বলল, “অনুগ্রহ করে আমাকে মিশরে ফিরে য়েতে দিন| আমি দেখতে চাই আমার লোকরা এখনও সেখানে বেঁচে আছি কিনা|”যিথ্রো তার জামাতা মোশিকে বলল, “নিশ্চয়ই! আশা করি তুমি সেখানে ভালোভাবেই পৌঁছাবে|” 19 মিদিয়নে থাকাকালীন প্রভু মোশিকে বললেন, “মিশরে ফিরে যাওয়া এখন তোমার পক্ষে ভাল| কারণ যারা তোমায় হত্যা করতে চেযেছিল তারা এখন কেউ বেঁচে নেই|” 20 সুতরাং মোশি তখন তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের গাধার পিঠে চাপিয়ে মিশরে প্রত্যাবর্তন করল| সঙ্গে সে তার পথ চলার লাঠিও নিল| এটা সেই পথ চলার লাঠি যাতে রযেছে ঈশ্বরের অলৌকিক শক্তি| 21 মিশরে আসার পথে প্রভু মোশির সঙ্গে কথা বলেছিলেন| তিনি বলেছিলেন, “আমি তোমাকে অলৌকিক কাজ দেখানোর য়ে সব শক্তি দিয়েছি সেগুলো সব ফরৌণের সঙ্গে কথা বলার সময় তার সামনে করে দেখাবে| কিন্তু আমি ফরৌণকে একগুঁয়ে এবং জেদী করে তুলব| সে লোকদের কিছুতেই ছেড়ে দেবে না| 22 তখন তুমি ফরৌণকে বলবে: 23 প্রভু বলেছেন, ‘ইস্রায়েল হল আমার প্রথমজাত পুত্র সন্তান| এই প্রথমজাত সন্তান একটি পরিবারে জন্মেছিল| অতীত দিনে এই প্রথমজাত সন্তানের গুরুত্ব ছিল অসীম| এবং আমি তোমাকে বলছি আমার পুত্রকে আমার উপাসনার জন্য ছেড়ে দাও| তুমি যদি ইস্রায়েলকে ছেড়ে দিতে অস্বীকার করো তাহলে আমি তোমার প্রথমজাত পুত্র সন্তানকে হত্যা করব|” 24 মিশরে ফেরার পথে মোশি একটি পান্থশালায় রাত্রিযাপন করছিল| তখন প্রভু তাকে হত্যা করতে চেষ্টা করলেন| 25 কিন্তু সিপ্পোরা একটা ধারালো পাথরের ছুরি দিয়ে তার পুত্রের সুন্নত্ করল| এবং সুন্নত্ এর চামড়া (চামড়াটি লিঙ্গের মুখ থেকে ছিঁড়ে বেরিয়েছিল|) মোশির পায়ে ছোঁযাল| তারপর সে মোশিকে বলল, “আমার কাছে তুমি রক্তের স্বামী|” 26 সিপ্পোরা একথা বলেছিল কারণ তার ছেলের সুন্নত্ তাকে করতেই হত| তাই সে তাদের কাছ থেকে সরে এল| 27 প্রভু হারোণকে বললেন, “মরুপ্রান্তরে গিয়ে মোশির সঙ্গে দেখা করো|” প্রভুর কথামতো হারোণ ঈশ্বরের পর্বতে গিয়ে মোশির সঙ্গে দেখা করে তাকে চুম্বন করল| 28 প্রভু য়ে সব কথা বলবার জন্য মোশিকে পাঠিয়েছিলেন এবং প্রভুই য়ে তাকে পাঠিয়েছেন তা প্রমাণ করবার জন্য য়ে সব অলৌকিক কাজ করতে বলেছিলেন তার সম্বন্ধে, সবই মোশি হারোণকে জানাল| প্রভু যা বলেছেন তার সবকিছু মোশি হারোণকে খুলে বলল| 29 সুতরাং মোশি এবং হারোণ ইস্রায়েলের লোকদের মধ্যে প্রবীণ ব্যক্তিদের একত্র করার জন্য গেল| 30 তখন হারোণ সেই কথাগুলো বলল য়েগুলো প্রভু মোশিকে বলতে বলেছিলেন| আর মোশি লোকদের সামনে সেই সকল চিহ্ন কার্য়্য় করে দেখাল| 31 তার ফলে লোকরা বিশ্বাস করল য়ে প্রভু মোশিকে পাঠিয়েছেন| একই সঙ্গে ইস্রায়েলের লোকরা জানল য়ে, ঈশ্বর তাদের দুঃখ দুর্দশা দেখে তাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন| তাই তারা সকলে নতজানু হয়ে ঈশ্বরের উপাসনা করতে লাগল|
1 লোকদের সঙ্গে কথা বলার পর মোশি এবং হারোণ ফরৌণের কাছে গিয়ে বলল, “প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর বলেছেন, ‘আমার সম্মানার্থে উত্সব করার জন্য আমার লোকদের মরুপ্রান্তরে যাওয়ার ছাড়পত্র দাও|” 2 কিন্তু ফরৌণ বলল, “কে প্রভু? আমি কেন তাকে মানব? কেন ইস্রায়েলকে ছেড়ে দেব? এমনকি এই প্রভু কে আমি তাই জানি না| সুতরাং আমি এভাবে ইস্রায়েলের লোকদের ছেড়ে দিতে পারি না|” 3 তখন হারোণ এবং মোশি বলল, “ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন| তাই আমরা তিন দিনের জন্য মরুপ্রান্তরে ভ্রমণের অনুমতি প্রার্থনা করছি, সেখানে আমরা আমাদের প্রভু, ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য উত্সর্গ করব| আমরা যদি তা না করি তাহলে তিনি প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হয়ে আমাদের ধ্বংস করে দেবেন| আমাদের মহামারী অথবা যুদ্ধের প্রকোপে মেরে ফেলবেন|” 4 কিন্তু তখন মিশরের রাজা তাদের উত্তর দিলেন, “মোশি ও হারোণ, তোমরা কাজের লোকদের বিরক্ত করছ| ওদের কাজ করতে দাও| গিয়ে নিজের কাজে মন দাও| 5 দেখ, দেশে এখন প্রচুর কর্মী আছে এবং তোমরা তাদের কাজ করা থেকে বিরত করছ|” 6 একই দিনে ক্রীতদাস প্রভুদের এবং ইস্রায়েলীয় তত্ত্বাবধায়কদের ফরৌণ আদেশ দিলেন ইস্রায়েলীয় লোকদের আরো কিছু কঠিনতর কাজ দিতে| 7 ফরৌণ তাদের বললেন, “ইঁট তৈরির জন্য এতদিন তোমরা খড় সরবরাহ করেছো| কিন্তু ওদের বলো, এখন থেকে ইঁট তৈরির জন্য রয়োজনীয় খড় ওরা নিজেরাই য়েন খুঁজে আনে| 8 কিন্তু খড় খুঁজে আনতে হবে বলে ইঁটের উত্পাদন য়েন না কমে| আগে ওরা সারাদিনে য়ে পরিমাণ ইঁট তৈরি করতো নিজেরা খড় জোগাড় করে আনার পরও ওদের আগের মতো একই পরিমাণ ইঁট তৈরি করতে হবে| আজকাল ওরা ভীষণ অলস হয়ে গেছে| এবং সেজন্যই ওরা আমার কাছে মরুপ্রান্তরে যাওয়ার ছাড়পত্র চাইছে| ওদের হাতে বিশেষ কাজ নেই তাই ওরা ওদের ঈশ্বরকে নৈবেদ্য উত্সর্গ করতে য়েতে চায়| 9 তাই এই লোকদের আরও কঠিন পরিশ্রম করাও যাতে ওরা ব্যস্ত থাকে| তাহলে ওদের আর প্রতারণামূলক কথা শোনবার সময় হবে না|” 10 তাই মিশরের ক্রীতদাস প্রভু এবং ইস্রায়েলীয় তত্ত্বাবধায়করা ইস্রায়েলের লোকদের কাছে গিয়ে বলল, “ফরৌণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন য়ে ইঁট তৈরির জন্য তোমাদের আর খড় সরবরাহ করা হবে না| 11 এবার থেকে তোমরা নিজেরা খড় জোগাড় করে আনবে| সুতরাং যাও গিয়ে খড় জোগাড় করো| কিন্তু ইঁট তৈরির পরিমাণ আগের মতোই রাখতে হবে| খড় জোগাড়ের নাম করে কম ইঁট তৈরি করলে চলবে না|” 12 সুতরাং লোকরা মিশরের চারিদিকে খড়ের খোঁজে গেল| 13 ক্রীতদাস প্রভুরা ইস্রায়েলীয়দের আরো কঠিন কাজ করালো এবং তাদের একদিনে সমান সংখ্যক ইঁট তৈরি করতে বাধ্য করল যা তারা খড় থাকাকালীন করত| 14 মিশরীয় ক্রীতদাস প্রভুরা ইস্রায়েলীয়দের দিয়ে এই হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করানোর দায়িত্ব চাপালো ইস্রায়েলীয় তত্ত্বাবধায়কদের ওপর| মিশরীয় ক্রীতদাস প্রভুরা ইস্রাযেলীয তত্ত্বাবধায়কদের মারলো এবং তাদের বলল, “কেন তোমরা আগের মতো ইঁট তৈরি করতে পারছো না? তোমরা আগে যা করতে পারতে এখনও তোমাদের তাই পারা উচিত্|” 15 তখন ইস্রায়েলীয় তত্ত্বাবধায়করা ফরৌণের কাছে নালিশ জানাতে গেল| তারা ফরৌণকে বলল, “আমরা তো আপনার অনুগত ভৃত্য়, তাহলে আমাদের সঙ্গে কেন এরকম ব্যবহার করছেন? 16 আপনি আমাদের খড় সরবরাহ বন্ধ করেছেন| আবার বলছেন আগের মতোই ইঁটের উত্পাদন চালু রাখতে হবে| ইঁট তৈরির পরিমাণ কম হলেই আমাদের মনিবরা আমাদের মারধোর করছে| আপনার লোকরা এটা তো অন্যায় করছে|” 17 উত্তরে ফরৌণ জানালেন, “তোমরা কাজ করতে চাও না| তোমরা অলস হয়ে গেছ| সেজন্যই তোমরা প্রভুর উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য উত্সর্গ করতে যাবার ব্যাপারে আমার অনুমতি চেযেছো| 18 যাও, এখন আবার কাজে ফিরে যাও| আমরা আমাদের কোনও খড় সরবরাহ করব না এবং তোমাদের আগের মতোই সমপরিমাণ ইঁট তৈরি করতে হবে|” 19 তখন ইস্রায়েলীয় তত্ত্বাবধায়করা বুঝতে পারল য়ে তারা গভীর সঙ্কটে পড়েছে| তারা জানতো য়ে কিছুতেই তারা আগের পরিমাণ মতো ইঁট আর তৈরি করতে পারবে না| 20 ফরৌণের সঙ্গে দেখা করে ফেরার পথে মোশি এবং হারোণের সঙ্গে তাদের দেখা হল| মোশি ও হারোণ অবশ্য তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্যই অপেক্ষা করছিল| 21 সুতরাং ইস্রায়েলীয় তত্ত্বাবধায়করা মোশি ও হারোণকে বলল, “আমাদের যাওয়ার ছাড়পত্র চাওযার ব্যাপারে ফরৌণের সঙ্গে কথা বলে তোমরা একটা মারাত্মক ভুল করেছো| প্রভু য়েন তোমাদের শাস্তি দেন| কারণ তোমাদের জন্যই ফরৌণ ও তার শাসকরা আমাদের এখন ঘৃণা করে| তোমরাই তাদের হাতে আমাদের হত্যা করার অজুহাত তুলে দিয়েছ|” 22 তখন মোশি প্রভুর কাছে ফিরে গেল এবং বলল, “প্রভু কেন আপনি লোকদের এমন অমঙ্গল করলেন? কেন আপনি আমার এখানে পাঠিয়েছিলেন? 23 আপনি যা বলতে বলেছিলেন আমি সে কথাগুলো বলতেই ফরৌণের কাছে গিয়েছিলাম| অথচ সেই সময় থেকেই ফরৌণ আপনার লোকদের প্রতি অত্য়ন্ত খারাপ ব্যবহার করছে| এবং আপনি ঐসব লোকদের সাহায্যের জন্য কোনও কিছুই করছেন না|”
1 প্রভু তখন মোশিকে বললেন, “ফরৌণের এখন আমি কি অবস্থা করব তা তুমি দেখতে পাবে| আমি তার বিরুদ্ধে আমার মহান ক্ষমতা ব্যবহার করব এবং সে আমার লোকদের চলে য়েতে বাধ্য করবে| সে য়ে শুধু আমার লোকদের ছেড়ে দেবে তা নয়, সে তার দেশ থেকে তাদের জোর করে পাঠিয়ে দেবে|” 2 ঈশ্বর তখন মোশিকে আবার বললেন, 3 “আমিই হলাম প্রভু| আমি অব্রাহাম, ইসহাক এবং যাকোবের সামনে নিজেকে প্রকাশ করতাম| তারা আমায় এল্সদাই (সর্বশক্তিমান ঈশ্বর) বলে ডাকত| আমার নাম য়ে যিহোবা তা তারা জানত না| 4 আমি তাদের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিলাম| আমি তাদের কনান দেশ দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম| ঐ দেশে তারা বাস করলেও দেশটি কিন্তু তাদের নিজস্ব দেশ ছিল না| 5 এখন আমি ইস্রায়েলীয়দের বিলাপ শুনেছি যাদের মিশরীয়রা তাদের ক্রীতদাস করে রেখেছিল এবং আমি আমার চুক্তিকে মনে রাখব এবং আমি যা প্রতিশ্রুতি করেছিলাম তাই করব| 6 সুতরাং ইস্রায়েলের লোকদের গিয়ে বলো আমি তাদের বলেছি, ‘আমি হলাম প্রভু| আমি তোমাদের রক্ষা করব| আমিই তোমাদের মুক্ত করব| তোমরা আর মিশরীয়দের ক্রীতদাস থাকবে না| আমি আমার মহান শক্তি ব্যবহার করব এবং মিশরীয়দের ভয়ঙ্কর শাস্তি দেব| তখন আমি তোমাদের উদ্ধার করব| 7 আমি তোমাদের আমার লোক করে নিলাম এবং আমি হব তোমাদের ঈশ্বর| তোমরা জানবে য়ে আমি হলাম তোমাদের প্রভু, ঈশ্বর, য়ে তোমাদের মিশর থেকে মুক্ত করেছে| 8 আমি অব্রাহাম, ইসহাক এবং যাকোবের কাছে একটি মহান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম| আমি তাদের একটি বিশেষ দেশ দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম| তাই আমার নেতৃত্বে তোমরা ঐ দেশে যাবে| আমি তোমাদের ঐ দেশটি দিয়ে দেব| সেই দেশটি একান্তভাবে তোমাদেরই হবে| আমিই হলাম প্রভু|” 9 মোশি এই কথাগুলো ইস্রায়েলীয়দের বলল, কিন্তু তাদের ধৈর্য়্য়হীনতা ও তীব্র পরিশ্রমের দরুণ তারা তার কথা শুনতে অস্বীকার করল| 10 তখন প্রভু মোশিকে বললেন, 11 “যাও মিশরের রাজা ফরৌণকে বলো য়ে তার উচিত্ ইস্রায়েলীয়দের তার দেশ থেকে মুক্তি দেওয়া|” 12 কিন্তু মোশি উত্তরে জানাল, “ইস্রায়েলের লোকরাই আমার কথা শুনতে অস্বীকার করছে, সেক্ষেত্রে ফরৌণ আর কি শুনবে! সেও আমার কথা শুনতে রাজি হবে না| এ ব্যাপারে আমি একরকম নিশ্চিত| তার উপর আমি ভালোভাবে “কথা বলতেও পারি না|” 13 কিন্তু প্রভু মোশি এবং হারোণের সঙ্গে কথা বললেন এবং তাদের ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে ও ফরৌণের সঙ্গে কথা বলতে আদেশ দিলেন| ইস্রায়েলীয়দের মিশর থেকে উদ্ধার করে আনতে প্রভু তাদের আদেশ দিলেন| 14 ইস্রায়েলীয় পরিবারগুলির নেতাদের নাম ক্রমানুসারে এইরূপ: ইস্রায়েলের জ্যেষ্ঠ পুত্রের নাম ছিল রূবেণ| তার পুত্ররা ছিল: হনোক, পল্লু, হিষ্রোণ ও কর্ম্মি| 15 শিমিয়োনোর পুত্ররা ছিল: য়িমুয়েল, যামীন, ওহদ, যাখীন, সোহর এবং শৌল য়ে ছিল এক কনানীয়া মহিলার গর্ভজাত সন্তান| 16 লেবি 137 বছর জীবিত ছিলেন| লেবির পুত্রদের নাম হল গের্শোন, কহাত্ ও মরারি| 17 গের্শোনের আবার দুই পুত্র ছিল লিব্নি ও শিমিযি| 18 কহাত্ 133 বছর পর্য়ন্ত জীবিত ছিল| কহাতের পুত্ররা হল অম্রম, যিষ্হর, হিব্রোণ এবং উষীয়েল| 19 মরারির দুই পুত্র হল মহলি ও মুশি| এই প্রত্যেকটি পরিবারের প্রথম পূর্বপুরুষ ছিল ইস্রায়েলের সন্তান লেবি| 20 অম্রম বেঁচে ছিল 137 বছর| অম্রম তার আপন পিসি য়োকেবদকে বিয়ে করেছিল| অম্রম ও য়োকেবদের দুই সন্তান হল যথাক্রমে হারোণ এবং মোশি| 21 য়িষ্হরের পুত্ররা হল কোরহ, নেফগ ও সিখ্রি| 22 আর উষীয়েলের সন্তান হল মীশায়েল, ইল্সাফন ও সিথ্রি| 23 হারোণ অম্মীনাদবের কন্যা, নহোশনের বোন ইলীশেবাকে বিয়ে করেছিল| হারোণ ও ইলীশেবার সন্তানরা হল নাদব, অবীহূ, ইলিয়াসর ও ইথামর| 24 কোরহের পুত্র অসীর, ইল্কানা ও অবীযাসফ হল কোরহীয় গোষ্ঠীর পূর্বপুরুষ| 25 হারোণের পুত্র ইলিয়াসর পূটীয়েলের এক কন্যাকে বিয়ে করার পরে তাদের য়ে সন্তান হয় তার নাম দেওয়া হয় পীনহস| এরা প্রত্যেকেই ইস্রায়েলের পুত্র লেবির বংশজাত| 26 হারোণ এবং মোশি ছিল এই পরিবারগোষ্ঠীর| প্রভু তাদের দুজনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং বলেছিলেন, “আমার লোকদের মিশর থেকে দলে দলে বাইরে নিয়ে এসো|” 27 হারোণ এবং মোশি উভয়েই মিশরের রাজা ফরৌণের সঙ্গে কথা বলেছিল| তারাই ফরৌণকে বলেছিল ইস্রায়েলের লোকদের মিশর থেকে ছেড়ে দেওয়া হোক| 28 মিশরে য়েদিন প্রভু মোশির সঙ্গে কথা বললেন, 29 তিনি তাকে বলেছিলেন, “আমিই হলাম প্রভু| আমি তোমাকে যা কিছু বলেছি তা মিশরের রাজা ফরৌণকে গিয়ে বলো|” 30 কিন্তু মোশি উত্তর দিল, “আমি ভালোভাবে কথা বলতে পারি না| রাজা আমার কথা শুনবে না|”
1 প্রভু তখন মোশিকে বললেন, “আমি তোমাকে ফরৌণের কাছে একজন ঈশ্বর করে তুলেছি| আর হারোণ তোমার ভাই হবে তোমার ভাববাদী| 2 তোমার ভাই হারোণকে আমার সমস্ত আদেশগুলো বলো| তাহলে হারোণ রাজাকে আমার কথাগুলো জানাবে| ফরৌণ ইস্রায়েলীয়দের তার দেশ থেকে চলে য়েতে অনুমতি দেবে| 3 কিন্তু আমি ফরৌণকে জেদী করে তুলব| তাই সে তোমাদের কথা মানবে না| তখন আমি নিজেকে প্রমাণের উদ্দেশ্যে মিশরে নানারকম অলৌকিক অথবা অদ্ভুত কাজ করবে| তবুও সে তোমাদের কথা শুনবে না| তখন আমি মিশরকে কঠিন শাস্তি দেব এবং আমি মিশর থেকে আমার লোকদের বাইরে বের করে আনব| 4 5 যখন আমি তাদের বিরোধিতা করব তখন মিশরের লোকরাও জানতে পারবে য়ে আমিই হলাম প্রভু| সেই মুহুর্তে আমি আমার লোকদের মিশরীয়দের দেশ থেকে বের করে আনব|” 6 প্রভু তাদের যা বলেছিলেন মোশি এবং হারোণ তা মেনে চলেছিল| 7 যখন তারা ফরৌণের সঙ্গে কথা বলেছিল সেই সময় মোশির বয়স ছিল 80 এবং হারোণের বয়স ছিল 83 বছর| 8 মোশি এবং হারোণকে প্রভু বললেন, 9 “ফরৌণ তোমাদের শক্তির পরিচয়ের প্রমাণ হিসাবে কোনও অলৌকিক কাজ ঘটিযে দেখাতে বলবে| তখন হারোণকে বলবে তোমার পথ চলার লাঠিটি মাটিতে ছুঁড়ে ফেলতে| ফরৌণের চোখের সামনে মাটিতে পড়ে থাকা ঐ লাঠি নিমেষের মধ্যে সাপে পরিণত হবে|” 10 তাই মোশি এবং হারোণ প্রভুর কথামতো ফরৌণের কাছে গেল| হারোণ তার সামনে লাঠিটি মাটিতে ছুঁড়ে ফেলেছিল| ফরৌণ এবং তার সভাসদদের চোখের সামনেই লাঠি সাপের রূপ নিল| 11 রাজা এই ঘটনা দেখে তার জ্ঞানীগুণী ব্যক্তি ও যাদুকরদের ডাকলেন| রাজার নিজস্ব যাদুকররা তাদের মায়াবলে হারোণের মতো তাদের লাঠিটিও সাপে পরিণত করে দেখাল| 12 সেইসব যাদুকররাও নিজের নিজের হাতের লাঠিকে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে মুহুর্তে লাঠিগুলিকে সাপে রূপান্তরিত করে দেখাল| কিন্তু হারোণের লাঠি তাদের লাঠিগুলোকে গ্রাস করে নিল| 13 তবুও ফরৌণ উদ্ধত হয়ে থাকলেন| প্রভুর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ীরাজা মোশি এবং হারোণের কথায় কান দিলেন না| 14 তখন প্রভু মোশিকে বললেন, “ফরৌণ লোকদের ছেড়ে না দেবার জেদ ধরে রইল| 15 সকালে ফরৌণ নদীর দিকে যায| তুমিও তার সঙ্গে দেখা করার জন্য নীল নদের তীরে দাঁড়াবে| সাপে পরিণত হয় ঐ লাঠিকে সঙ্গে নেবে| 16 ফরৌণকে বলবে: ‘প্রভু ইস্রাযেলীযদের ঈশ্বর আমাকে পাঠিয়েছেন| আমায আপনাকে বলতে বলেছেন য়ে তাঁর লোকদের য়েন তাঁর উপাসনার জন্য মরুপ্রান্তরে য়েতে দেওয়া হয়| এখনও পর্য়ন্ত অবশ্য আপনি প্রভুর কথা শোনেন নি| 17 তাই প্রভু আপনার সম্মুখে নিজের স্বরূপ প্রমাণের উদ্দেশ্যে কিছু কাণ্ড ঘটাবেন| এবার দেখুন আমি আমার পথ চলার লাঠি দিয়ে নীল নদের জলে আঘাত করব এবং সঙ্গে সঙ্গে নদীর জল রক্তে পরিণত হবে| 18 নদীর সমস্ত মাছ মারা যাবে এবং নদীর জলে দুর্গন্ধ ছড়াবে| ফলে মিশরীয়রা আর এই নদীর জল পান করতে পারবে না|” 19 প্রভু মোশিকে বললেন, “হারোণকে বলো এই লাঠি নিয়ে সে য়েন মিশরের সমস্ত জলাশয, নদী, খাল, বিল, হ্রদ প্রত্যেকটি জায়গার জলে স্পর্শ করে| লাঠির স্পর্শে সমস্ত জলাশযের জল রক্তে পরিণত হবে| এমনকি কাঠ ও পাথরের পাত্রে সংগ্রহ করে রাখা পানীয় জলও রক্তে পরিণত হবে|” 20 সুতরাং মোশি এবং হারোণ প্রভুর আদেশ কার্য়কর করল| হারোণ ফরৌণ ও তার সভাসদগণের সামনেই তার হাতে লাঠি উঁচিযে ধরে নীল নদের জলে আঘাত করল| আর সঙ্গে সঙ্গে নদীর জল রক্তে পরিণত হল| 21 নদীর সমস্ত মাছ মারা গেল এবং নদীর জলে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করল| ফলে মিশরীয়রা আর সেই নদীর জল পান করতে পারল না| মিশরের সমস্ত জলাধারের জলই রক্তে পরিণত হল| 22 হারোণ ও মোশির মতো রাজার যাদুকররাও তাদের মাযাবলে একই ঘটনা ঘটিযে প্রমাণ করল তারাও কম জানে না| ফলে প্রভুর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ীফরৌণ আবার মোশি ও হারোণের কথা শুনতে অস্বীকার করলেন| 23 ফরৌণ মোশি ও হারোণের ঐ কথায় মনোয়োগ না দিয়ে নিজের প্রাসাদে ঢুকে গেলেন| 24 মিশরীয়রা নদীর জল পান করতে না পেরে তারা পানীয় জলের সন্ধানে নদীর চারপাশে কুঁযো খুঁড়তে লাগল| 25 প্রভুর নীলনদের জলকে রক্তে পরিণত করার পর সাতদিন পার হল|
1 প্রভু তখন মোশির উদ্দেশ্যে বললেন, “ফরৌণকে গিয়ে বলো য়ে প্রভু বলেছেন, ‘আমার লোকেদের আমাকে উপাসনার জন্য ছেড়ে দাও! 2 যদি তুমি ওদের ছেড়ে না দাও তাহলে আমি মিশর দেশ ব্যাঙে ভর্তি করে দেব| 3 নীল নদ ব্যাঙে ভর্তি হয়ে উঠবে| নদী থেকে ব্যাঙরা উঠে এসে তোমার ঘরে শয়্য়াকক্ষে প্রবেশ করে বিছানায উঠে বসবে| তোমার উনুনের চুল্লি, জলের পাত্র ব্যাঙে ভরে যাবে| তোমার সভাসদগণের ঘরও ব্যাঙে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে| 4 তোমাদের চারিদিকে ব্যাঙরা ঘুরে বেড়াবে| তোমার সভাসদগণ, তোমার লোকদের এবং তোমার গায়েও ব্যাঙ ছেঁকে ধরবে|” 5 প্রভু এরপর মোশিকে বললেন, “তুমি হারোণকে বলো সে য়েন তার হাতের পথ চলার লাঠি নদী, খালবিল ও হ্রদের ওপর বিস্তার করে মিশর দেশে ব্যাঙ এনে ভরিয়ে দেয়|” 6 হারোণ মিশরের জলের ওপর তার লাঠি সমেত হাত বিস্তার করতেই নদী, খালবিল ও হ্রদ থেকে রাশি রাশি ব্যাঙ উঠে মিশরের মাটি ঢেকে ফেলল| 7 হারোণের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে রাজার যাদুকররাও তাদের মাযাজাল বিস্তার করে একই কাণ্ড ঘটিযে দেখাল| ফলে মিশরের মাটিতে আরও অসংখ্য ব্যাঙ উঠে এলো| 8 ফরৌণ এবার বাধ্য হয়ে মোশি এবং হারোণকে ডেকে পাঠিয়ে তাদের বললেন, “প্রভুকে বলো তিনি য়েন আমাকে এবং আমার লোকদের এই ব্যাঙের উপদ্রব থেকে রেহাই দেন| আমি প্রভুকে নৈবেদ্য উত্সর্গ করার জন্য লোকদের যাবার ছাড়পত্র দেব|” 9 মোশি ফরৌণকে বলল, “বলুন, আপনি কখন চান য়ে এই ব্যাঙরা ফিরে যাক্| আমি আপনার জন্য, আপনার সভাসদগণ ও প্রজাদের জন্য তাহলে প্রার্থনা করব| তারপরই ব্যাঙরা আপনাকে এবং আপনার ঘর ছেড়ে নদীতে ফিরে যাবে| ব্যাঙরা নদীতেই থাকে| বলুন আপনি কবে এই ব্যাঙদের উপদ্রব থেকে অব্যাহতি চান?” 10 উত্তরে ফরৌণ জানালেন, “আগামীকাল|”মোশি বলল, “বেশ আপনার কথা মতো তাই হবে| তবে এবার নিশ্চয়ই আপনি বুঝতে পেরেছেন য়ে আমাদের প্রভু ঈশ্বরের মতো আর কোন ঈশ্বর এখানে নেই| 11 ব্যাঙরা আপনাকে, আপনার ঘর এবং আপনার সভাসদগণ ও প্রজাদের সবাইকে ছেড়ে ফিরে যাবে| কেবলমাত্র নদীতেই তারা এবার থেকে বাস করবে|” 12 এরপর মোশি এবং হারোণ ফরৌণের কাছ থেকে ফিরে এলো| ফরৌণের বিরুদ্ধে পাঠানো সমস্ত ব্যাঙদের সরিয়ে নেবার জন্য মোশি প্রভুর কাছে প্রার্থনা করল| 13 মোশির প্রার্থনায সাড়া দিয়ে প্রভু ঘরে, বাইরে, মাঠে ঘাটের সমস্ত ব্যাঙকে মেরে ফেললেন| 14 কিন্তু মৃত ব্যাঙের স্তূপ পচতে শুরু করল এবং সারা দেশ দুর্গন্ধে ভরে উঠল| 15 ব্যাঙদের উপদ্রব থেকে মুক্তি পাওয়ার পরই ফরৌণ আবার একগুঁয়ে ও জেদী হয়ে উঠলেন| প্রভুর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ীমোশি ও হারোণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাজা পালন করলেন না| 16 প্রভু তখন মোশিকে বললেন, “হারোণকে বলো তার হাতের লাঠি দিয়ে মাটির ধূলোয় আঘাত করতে, এবং তারপর সেই ধূলো মিশরের সর্বত্র উকুনে পরিণত হবে|” 17 হারোণ প্রভুর কথামতো ধূলোতে তার লাঠি আঘাত করতেই মিশরের সর্বত্র ধূলো উকুনে পরিণত হল| এবং সেই উকুনগুলো মানুষ ও পশুদের ঘায়ের ওপর চড়ে বসল| 18 রাজার যাদুকররা এবারও একই জিনিস করে দেখানোর চেষ্টা করল কিন্তু তারা কিছুতেই ধূলোকে উকুনে পরিণত করতে পারল না| কিন্তু সেই উকুনগুলো মানুষ ও পশুদের শরীরে রয়ে গেল| 19 যাদুকররা এবারে ব্যর্থ হয়ে গিয়ে রাজা ফরৌণকে বলল য়ে ঈশ্বরের শক্তিই এটাকে সম্ভব করেছে| কিন্তু ফরৌণ তাদের কথাতে কান দিলেন না| প্রভুর ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারেই অবশ্য এই ঘটনা ঘটল| 20 প্রভু মোশিকে বললেন, “সকালে উঠে ফরৌণের কাছে যাবে| ফরৌণ নদীর তীরে যাবে| তখন তাকে বলবে প্রভু বলেছেন, ‘আমার উপাসনার জন্য আমার লোকদের ছেড়ে দাও| 21 যদি তুমি তাদের ছেড়ে না দাও তাহলে তোমার ঘরে মাছির ঝাঁক ঢুকবে| শুধু তোমার ঘরেই নয় তোমার সভাসদগণ ও তোমার প্রজাদের ঘরেও মাছির ঝাঁক ঢুকবে| মিশরের প্রত্যেকটি ঘর মাছির ঝাঁকে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে| মিশরের মাঠে ঘাটে সর্বত্র শুধু ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি উড়ে বেড়াবে! 22 কিন্তু মিশরীয়দের মতো ইস্রায়েলের লোকদের আমি এই যন্ত্রণা ভোগ করাবো না| গোশন প্রদেশে, যেখানে আমার লোকরা বাস করে, সেখানে একটিও মাছি থাকবে না| কারণ সেখানে আমরা লোকরা বাস করে| এর ফলে তুমি বুঝতে পারবে য়ে এই দেশে আমিই হলাম প্রভু| 23 সুতরাং আগামীকাল থেকেই তুমি আমার এই বিভেদ নীতির প্রমাণ পাবে|” 24 সুতরাং প্রভু তাই করলেন যা তিনি বলেছিলেন| ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি মিশরে এসে গেল| ফরৌণের বাড়ী এবং তাঁর সভাসদগণের বাড়ী মাছিতে ভরে গেল| মাছিগুলোর জন্য সমগ্র মিশর ধ্বংস হল| 25 ফরৌণ মোশি এবং হারোণকে ডেকে বলল, “তোমরা তোমাদের ঈশ্বরকে এই দেশের মধ্যেই নৈবেদ্য উত্সর্গ করো|” 26 কিন্তু মোশি বলল, “না, তা এখানে করা ঠিক হবে না| কারণ প্রভু, আমাদের ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে পশু বলিদান মিশরীয়দের চোখে ভয়ঙ্কর ব্যাপার| আমরা যদি এখানে তা করি তাহলে মিশরীয়রা আমাদের দেখতে পেয়ে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করবে| 27 তাই তিন দিনের জন্য আমাদের প্রভু ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য উত্সর্গ করার জন্য আমাদের মরুপ্রান্তরে য়েতে দিন| প্রভুই আমাদের এটা করতে বলেছেন|” 28 সব শুনে ফরৌণ বলল, “বেশ আমি তোমাদের মরুপ্রান্তরে যাবার ছাড়পত্র দিচ্ছি| তোমাদের প্রভু ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য উত্সর্গ করার জন্য| কিন্তু মনে রেখো তোমরা কিন্তু বেশী দূর চলে যাবে না| এখন যাও এবং আমার জন্য প্রার্থনা করো|” 29 তখন মোশি ফরৌণকে বলল, “দেখুন, আমি যাব এবং প্রভুকে অনুরোধ করব যাতে আগামীকাল তিনি আপনার কাছ থেকে, আপনার লোকদের কাছ থেকে এবং আপনার সভাসদগণের কাছ থেকে মাছিগুলো সরিয়ে নেন| কিন্তু আপনি য়েন আবার আগের মতো প্রভুকে নৈবেদ্য উত্সর্গ করার বিষযটি নিয়ে পরে আপত্তি করবেন না|” 30 এই কথা বলে মোশি ফরৌণের কাছ থেকে ফিরে এল এবং প্রভুর কাছে প্রার্থনা করল| 31 এবং মোশির প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে প্রভু ফরৌণকে, সভাসদগণ ও প্রজাদের মাছির উপদ্রব থেকে রক্ষা করলেন| মিশর থেকে মাছিদের বের করে দিলেন| আর একটি মাছিও সেখানে রইল না| 32 কিন্তু ফরৌণ আবার জেদী হয়ে গেলেন এবং লোকদের য়েতে দিলেন না|
1 তারপর প্রভু মোশিকে বললেন, ফরৌণকে গিয়ে বল, “প্রভু, ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর বলেছেন, ‘আমার লোকদের আমার উপাসনা করার জন্য ছেড়ে দাও|’ 2 তুমি যদি তাদের ধরে রাখো এবং য়েতে বাধা দাও 3 তাহলে প্রভু তোমার গবাদি পশুদের ওপর তাঁর ক্ষমতা প্রযোগ করবেন| তোমার সমস্ত ঘোড়া, গাধা, উট, গরু ও মেষের পাল প্রভুর কোপে এক ভয়ঙ্কর রোগের শিকার হবে| 4 কিন্তু প্রভু মিশরের পশুদের মতো ইস্রায়েলের পশুদের দুর্দশাগ্রস্ত করবেন না| ইস্রায়েলের লোকদের কোনও পশু মারা যাবে না| 5 আগামীকাল এই ঘটনা ঘটাবার জন্য প্রভু সময় নির্বাচন করেছেন|” 6 পরদিন, প্রভু য়েমন বলেছিলেন তেমন করলেন| মিশরীয়দের সমস্ত গৃহপালিত পশু মারা গেল| কিন্তু ইস্রায়েলের লোকদের কোনও পশু মারা গেল না| 7 ইস্রায়েলীয়দের কোনও পশু মারা গেছে কিনা তা দেখে আসতে ফরৌণ তাঁর কর্মচারীদের পাঠালেন এবং সে জানতে পারলো য়ে ইস্রায়েলীয়দের একটি পশুও মারা যায নি| কিন্তু তবুও ফরৌণ তাঁর জেদ ধরে রইলেন এবং লোকদের য়েতে দিলেন না| 8 প্রভু মোশি এবং হারোণকে বললেন, “একটা উনুন থেকে এক মুঠো ছাই নাও| মোশি তুমি সেই ছাই ফরৌণের সামনে বাতাসে ছুঁড়ে দাও| 9 এই ছাই ধূলিকণা হয়ে সারা মিশরে ছড়িয়ে পড়বে| এবং যখনই এই ধূলো মিশরের কোনও মানুষ বা পশুর গায়ে পড়বে তখনই তাদের গায়ে ফোঁড়া হবে|” 10 তাই মোশি ও হারোণ উনুন থেকে ছাই নিয়ে ফরৌণের সামনে দাঁড়াল| মোশি সেই ছাই আকাশে ছুঁড়ে দিল আর পশু ও মানুষের গায়ে ফোঁড়া বের হতে লাগল| 11 যাদুকররা মোশির সঙ্গে প্রতিয়োগিতা করতে পারল না| কারণ তাদেরও সারা গায়ে ফোঁড়া ছিল| মিশরের প্রতিটি জায়গায় এই রোগ দেখা দিল| 12 কিন্তু এতে প্রভু ফরৌণকে আরও উদ্ধত করে তুললেন| তাই ফরৌণ তাদের কথা শুনতে অস্বীকার করল| প্রভুর কথামতোই এসব ঘটেছিল| 13 এরপর প্রভু, ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর মোশিকে বললেন, “সকালে উঠে ফরৌণের কাছে গিয়ে বলবে, প্রভু ঈশ্বর বলেছেন, ‘আমার লোকদের আমার উপাসনা করতে য়েতে দাও| 14 যদি তুমি তা না কর, তবে আমি তোমার জন্য, তোমার সমস্ত রাজকর্মচারীদের জন্য এবং লোকদের জন্য সমস্ত রকমের দুর্ভোগ পাঠাবো| তখন তুমি জানবে য়ে এই পৃথিবীতে আমার মতো ঈশ্বর আর নেই, 15 আমি আমার ক্ষমতা দিয়ে তোমাদের এমন রোগ দিতে পারি যা তোমাদের পৃথিবী থেকে মুছে দেবে| 16 কিন্তু আমি তোমাদের একটা কারণে এখানে রেখেছি| আমি তোমাকে আমার ক্ষমতা দেখানোর জন্য রেখেছি| যাতে সারা পৃথিবীর লোক আমার কথা শুনতে পারে| 17 তুমি এখনও আমার লোকদের সঙ্গে বিরোধিতা করছ এবং তাদের য়েতে দিচ্ছ না| 18 “তাই আগামীকাল এই সময় আমি এক ভয়ঙ্কর শিলাবৃষ্টি ঘটাবো| মিশরের শুরু থেকে আজ পর্য়ন্ত এই রকম ভয়ঙ্কর শিলাবৃষ্টি আর কখনও হয় নি| 19 এখন তুমি তোমার পশুদের একটি নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাও| তোমার ক্ষেতে যা কিছু আছে সব একটি নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাও| কেন? কারণ কোন লোক যদি ক্ষেতে পড়ে থাকে, তবে সে মারা যাবে; যদি কোন পশু মাঠে পড়ে থাকে সে মারা যাবে| তোমার বাড়ীর বাইরে যা কিছু পড়ে থাকবে সে সব কিছুর ওপরেই শিলাবৃষ্টি হবে|” 20 ফরৌণের সেই কর্মচারীরা যারা প্রভুর বার্তাকে গুরুত্ব দিয়েছিল তারা তাদের পশু ও ক্রীতদাসদের ক্ষেত থেকে নিয়ে এলো এবং ঘরে রেখে দিল| 21 কিন্তু য়ে সব কর্মচারীরা প্রভুর বার্তা অগ্রাহ্য করেছিল তারা তাদের ক্রীতদাসদের ও পশুদের মাঠে রেখে দিল| 22 প্রভু মোশিকে বললেন, “তোমার হাত আকাশের দিকে তুলে ধরো, তাহলে মিশরের ওপর শিলাবৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে| মিশরের সমস্ত ক্ষেতের মানুষ, পশু ও গাছপালার ওপর এই শিলাবৃষ্টি হবে|” 23 তাই মোশি তার হাতের ছড়ি আকাশের দিকে তুলল, তারপর প্রভু ভূমির ওপর বজ্রনির্ঘোষ, শিলাবৃষ্টি ও অশনি ঘটালেন| সারা মিশরে শিলাবৃষ্টি হল| 24 শিলাবৃষ্টি হচ্ছিল এবং চারিদিকে বিদ্যুত চমকাচ্ছিল| এই ধরণের ভয়ঙ্কর শিলাবৃষ্টি মিশরের শুরু থেকে আজ পর্য়ন্ত আগে কখনও হয়নি| 25 এই শিলাবৃষ্টি মিশরের ক্ষেতের সমস্ত কিছু, লোকজন ও পশুসহ গাছপালা ধ্বংস করে দিল| এই শিলাবৃষ্টিতে মাটির সমস্ত গাছ ভেঙ্গে পড়েছিল| 26 একমাত্র ইস্রায়েলের লোকদের বাসস্থান গোশন প্রদেশে শিলাবৃষ্টি হল না| 27 ফরৌণ মোশি ও হারোণকে ডেকে বললেন, “এইবার বুঝেছি য়ে আমি পাপ করেছি| প্রভুই ঠিক ছিলেন| আমি ও আমার লোকরা ভুল করেছি| 28 প্রভুর দেওয়া শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাত আর সহ্য হচ্ছে না| ঈশ্বরকে গিয়ে এই ঝড় থামাতে বল| তাহলে আমি তোমাদের য়েতে দেব, তোমাদের আর এখানে থাকতে হবে না|” 29 মোশি ফরৌণকে বললেন, “আমি যখন শহর ত্যাগ করে যাবো তখন আমি প্রভুকে প্রার্থনার ভঙ্গীতে আমার হাতগুলো ওপরে তুলব| এবং তারপর বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি থামবে| তখন তুমি জানবে য়ে এই পৃথিবী প্রভুর অধিকারে| 30 কিন্তু আমি জানি য়ে তুমি এবং তোমার কর্মচারীরা এখনও প্রভুকে শ্রদ্ধা করো না|” 31 য়ব ও শন গাছে ফুল এসে গিয়েছিল| তাই এই সমস্ত শস্য নষ্ট হয়ে গেল| 32 কিন্তু য়েহেতু গম ও জনার বড় হল না তাই সেগুলো নষ্ট হল না| 33 মোশি ফরৌণের কাছে থেকে শহরের বাইরে গেল, প্রভুকে প্রার্থনা করার ভঙ্গীতে তাঁর হাতগুলো ওপরে তুলল এবং তত্ক্ষণাত্ বজ্র, শিলাবৃষ্টি এমনকি বৃষ্টিও থেমে গেল| 34 যখন ফরৌণ দেখল বৃষ্টি, বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি থেমে গিয়েছে তখন তিনি আবার ভুল করলেন| তিনি ও তার কর্মচারীরা জেদী হয়ে গেল| 35 ফরৌণ উদ্ধত হলেন এবং ইস্রায়েলের লোকদের য়েতে দিতে অস্বীকার করলেন| এসবই হয়েছিল ঠিক প্রভু য়েমন মোশিকে বলেছিলেন সেইরকম ভাবেই|
1 তারপর প্রভু মোশিকে বললেন, “ফরৌণের কাছে যাও, আমি তাকে ও তার কর্মচারীদের জেদী করে তুলেছি যাতে আমি আমার অলৌকিক শক্তি তাদের দেখাতে পারি| 2 আমি এটা এই কারণেও করেছি যাতে তোমরা, তোমাদের সন্তান এবং নাতি-নাতনিদের আমি মিশরীয়দের বিরুদ্ধে কি কি করেছিলাম এবং মিশরে কেমন করে চিহ্ন-কার্য়্য়গুলি করেছিলাম তার সম্বন্ধে বলতে পারো| তাহলে তোমরা সবাই জানতে পারবে য়ে আমিই প্রভু|” 3 তাই মোশি ও হারোণ ফরৌণের কাছে গেল এবং বলল, “প্রভু, ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর বলেছেন, ‘তুমি আর কতদিন প্রভুকে অমান্য করবে? আমার লোকদের আমার উপাসনা করতে য়েতে দাও| 4 তুমি যদি আমার আদেশ অমান্য কর তবে আগামীকাল আমি তোমাদের এই দেশে পঙ্গপাল নিয়ে আসব| 5 পঙ্গপালরা সারা দেশ ঢেকে ফেলবে, চারিদিকে এত পঙ্গপাল আসবে য়ে তোমরা মাটি দেখতে পাবে না| শিলাবৃষ্টির হাত থেকে যা কিছু বেঁচে গিয়েছে সেসব পঙ্গপালরা খেযে ফেলবে, মাঠের প্রত্যেকটি গাছের সমস্ত পাতা এই পঙ্গপালরা খেয়ে ফেলবে| 6 তোমার সমস্ত ঘর, তোমার কর্মচারীদের ঘর এবং মিশরের সব ঘর পঙ্গপালে ভরে যাবে| এত পঙ্গপাল হবে যা তোমার পিতামাতা অথবা তোমার পিতামহরা কখনও দেখে নি| মিশরে জনবসতি গড়ে ওঠার সময় থেকে আজ পর্য়ন্ত এত পঙ্গপাল আর কখনও কেউ দেখে নি|”‘ তারপর মোশি পিছন ফিরে ফরৌণকে ছেড়ে চলে গেল| 7 এরপর ফরৌণের কর্মচারীরা তাকে জিজ্ঞাসা করল, “আর কতদিন আমরা এই লোকদের ফাঁদে পড়ে থাকব? এদের ঈশ্বর, প্রভুর উপাসনা করতে য়েতে দিন, আপনি যদি তা না করেন তবে আপনার বোঝার আগেই মিশর ছারখার হয়ে যাবে|” 8 তখন ফরৌণ তাঁর কর্মচারীদের বললেন মোশি ও হারোণকে ফিরিযে আনতে| তারা এলে ফরৌণ তাদের বললেন, “যাও, তোমরা তোমাদের প্রভু ঈশ্বরের উপাসনা কর| কিন্তু আমাকে বলে যাও ঠিক কারা কারা যাচ্ছে?” 9 মোশি উত্তর দিল, “আমাদের সমস্ত লোক যুবক ও বৃদ্ধ সকলেই যাবে| আমরা আমাদের পুত্রদের, কন্যাদের, মেষ, গবাদি পশু এবং প্রত্যেকটি জিনিস আমাদের সঙ্গে নিয়ে যাব| কারণ প্রভু আমাদের সকলকেই উত্সবে আমন্ত্রণ করেছেন|” 10 ফরৌণ তাদের বললেন, “আমি তোমাদের ও তোমাদের সন্তানদের মিশরে ছেড়ে য়েতে দেওয়ার আগে প্রভুকে সত্যিই তোমাদের সঙ্গে থাকতে হবে! দেখ তোমাদের নিশ্চয়ই কোন কু-মতলব আছে| 11 শুধুমাত্র পুরুষরাই প্রভুর উপাসনা করতে পারবে কারণ প্রথমে তোমরা একথাই বলেছিলে| কিন্তু তোমাদের সব লোক য়েতে পারবে না|” এরপর ফরৌণ মোশি ও হারোণকে বিদায় দিলেন| 12 প্রভু এবার মোশিকে বললেন, “তুমি মিশরের ওপর তোমার হাত মেলে দাও| তাতে পঙ্গপালরা আসবে| সারা মিশর পঙ্গপালে ভরে যাবে| শিলাবৃষ্টিতে য়ে সব গাছ নষ্ট হয় নি সেগুলি পঙ্গপাল খেযে ফেলবে|” 13 মোশি তার হাতের ছড়ি মিশরের ওপর তুলে ধরল| এবং প্রভু পূর্ব দিক থেকে এক প্রবল বাতাস পাঠালেন| সারা দিন সারা রাত ধরে সেই হাওযা বয়ে গেল| এবং সকালবেলা সেই হাওয়ায় পঙ্গপালরা এসে মিশরে ঢুকে পড়ল| 14 পঙ্গপালরা উড়ে এসে মিশরের মাটিতে বসল| এত পঙ্গপাল ইতিপূর্বে কখনও মিশরে দেখা যায় নি আর বোধ হয় পরবর্তী কালেও কখনও দেখা যাবে না| 15 পঙ্গপালরা মাটি ঢেকে ফেলল এবং সারা দেশ অন্ধকার হয়ে গেল| শিলাবৃষ্টি যা ধ্বংস করে নি সে সমস্ত গাছ এবং গাছের ফল পঙ্গপাল খেযে ফেলল, মিশরের কোথাও কোনও গাছ বা লতা-পাতাও অবশিষ্ট রইল না| 16 ফরৌণ তাড়াতাড়ি মোশি ও হারোণকে ডেকে পাঠিয়ে বললেন, “আমি তোমাদের ও তোমাদের প্রভু ঈশ্বরের কাছে পাপ করেছি| 17 এবারকার মতো আমার অপরাধ ক্ষমা করে দাও| তোমাদের প্রভুকে বল এই পঙ্গপালগুলোকে সরিয়ে নিতে|” 18 মোশি ফরৌণের কাছ থেকে চলে গেল এবং প্রভুর কাছে তার জন্য প্রার্থনা করল| 19 প্রভু হাওযার দিক পরিবর্তন করে পশ্চিম দিক থেকে বাতাস পাঠালেন, এই প্রবল হাওয়ায় সমস্ত পঙ্গপাল মিশর থেকে বেরিয়ে গিয়ে সূফ সাগরে পড়ল| মিশরে আর একটিও পঙ্গপাল রইল না| 20 কিন্তু প্রভু আবার ফরৌণকে জেদী করে তুললেন এবং ফরৌণ ইস্রায়েলের লোকদের য়েতে দিলেন না| 21 তারপর প্রভু মোশিকে বললেন, “তোমার হাত উপরে আকাশের দিকে তুলে দাও যাতে সারা মিশর অন্ধকারে ঢেকে যায| অন্ধকার এত গাঢ় হবে য়ে তোমরা তা অনুভব করতে পারবে|” 22 তাই মোশি আকাশের দিকে হাত তুলল, তখন কালো মেঘ এসে মিশরকে ঢেকে ফেলল| তিন দিন ধরে এই অন্ধকার রইল| 23 কেউ কাউকে দেখতে পেল না বা কেউ উঠে কোথাও য়েতে পারল না| কিন্তু ইস্রায়েলীয়রা যেখানে বাস করত সেখানে আলো ছিল| 24 আবার ফরৌণ মোশিকে ডেকে পাঠিয়ে বললেন, “যাও গিয়ে তোমাদের প্রভুর উপাসনা কর| তোমরা তোমাদের সন্তানদের নিয়ে য়েতে পারবে কিন্তু গরু বা মেষের দল নিতে পারবে না, এখানে রেখে যাবে|” 25 মোশি বলল, “না, আমাদের প্রভু ঈশ্বরকে উত্সর্গ এবং হোমবলি দেওয়ার জন্য আপনাকে আমাদের পশুসমূহ দিতে হবে| 26 হ্যাঁ, এবং আমরা আমাদের পশুসমূহ প্রভুর উপাসনার জন্য নিয়ে যাব| আমরা একটা ক্ষুরও ফেলে যাব না| কারণ আমরা জানি না আমাদের প্রভু ঈশ্বরের উপাসনার জন্য ঠিক কি কি লাগবে| একথা আমরা আমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে জানতে পারব| তাই আমরা এ সবকিছুই সঙ্গে নিয়ে যাব|” 27 প্রভু আবার ফরৌণকে জেদী করে তুললেন এবং ফরৌণ তাদের য়েতে বাধা দিলেন| 28 ফরৌণ মোশিকে বললেন, “এখান থেকে দুর হয়ে যাও, আর কখনও য়েন এখানে তোমাকে না দেখি, যদি তুমি এখানে আমার কাছে দেখা করতে আসো তবে তোমায় মরতে হবে|” 29 তখন মোশি বলল, “তুমি একটা কথা ঠিকই বলেছো, আমি আর কখনও তোমার কাছে আসব না|”
1 প্রভু তখন মোশিকে বললেন, “মিশর এবং ফরৌণের বিরুদ্ধে আমি আরেকটি বিপর্য়য বয়ে আনব| তারপর, সে তোমাদের সবাইকে পাঠিয়ে দেবে| বস্তুত সে তোমাদের চলে য়েতে বাধ্য করবে| 2 তুমি ইস্রায়েলের লোকদের এই বার্তা পাঠাবে: ‘নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে তোমরা নিজের নিজের প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সোনা ও রূপোর অলঙ্কার চাইবে| 3 প্রভু মিশরীয়দের তোমাদের প্রতি দযালু করে তুলবেন| মিশরের লোকরা, এমনকি ফরৌণের কর্মচারীরা মোশিকে এক মহান ব্যক্তির মর্য়াদা দেবে|”‘ 4 মোশি লোকদের জানাল, “প্রভু বলেছেন, ‘আজ মধ্যরাত নাগাদ আমি মিশরের মধ্যে দিয়ে যাব| 5 এবং তার ফলে মিশরীয়দের সমস্ত প্রথমজাত পুত্ররা মারা যাবে| রাজা ফরৌণের প্রথমজাত পুত্র থেকে শুরু করে য়াঁতাকলে শস্য পেষনকারিণী দাসীর প্রথমজাত পুত্র পর্য়ন্ত সবাই মারা যাবে| এমনকি পশুদেরও প্রথম শাবক মারা যাবে| 6 তারপর সমস্ত মিশরে এমন জোরে কান্নার রোল উঠবে যা অতীতে কখনও হয় নি এবং যা ভবিষ্যতেও কখনও হবে না| 7 কিন্তু ইস্রায়েলের লোকদের কোনরকম ক্ষতি হবে না| এমন কি কোনো কুকুর পর্য়ন্ত ইস্রায়েলীয়দের অথবা তাদের পশুদের দিকে ঘেউ ঘেউ করে চিত্কার করবে না| এর ফলে, তোমরা বুঝতে পারবে আমি মিশরীয়দের থেকে ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে কতখানি অন্যরকম আচরণ করি| 8 তখন তোমাদের সমস্ত (মিশরীয় কর্মচারীরা) নতজানু হবে এবং আমার উপাসনা করবে| তারা বলবে, “তুমি তোমার সমস্ত লোককে তোমার সঙ্গে নিয়ে চলে যাও|” তখন মোশি ক্রোধে ফরৌণকে ছেড়ে চলে গেল|” 9 প্রভু এরপর মোশিকে আরও বললেন য়ে, “ফরৌণ তোমার কথা শোনে নি| কেন শোনে নি? শোনে নি বলেই তো আমি মিশরের ওপর আমার মহাশক্তির প্রভাব দেখাতে পেরেছিলাম|” 10 মোশি ও হারোণ ফরৌণের কাছে গিয়েছিল এবং এই সমস্ত অলৌকিক কাজগুলো করেছিল| কিন্তু প্রভু ফরৌণের হৃদয়কে উদ্ধত করেছিলেন যাতে সে ইস্রায়েলীয়দের তার দেশ থেকে য়েতে না দেয়|
1 মোশি ও হারোণ মিশরে থাকার সময় প্রভু তাদের বললেন, 2 “এই মাস হবে তোমাদের জন্য বছরের প্রথম মাস, 3 এই আদেশ সমস্ত ইস্রায়েলবাসীর জন্য: এই মাসের দশম দিনে প্রত্যেকে তার বাড়ীর জন্য একটি করে পশু জোগাড় করবে| পশুটি একটি মেষ অথবা একটি ছাগলও হতে পারে| যদি তার বাড়ীতে একটি গোটা পশুর মাংস খাওয়ার মতো য়থেষ্ট লোক না থাকে তবে সে তার কিছু প্রতিবেশীকে মাংস ভাগ করে খাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ করবে| প্রত্যেকের খাওয়ার জন্য যথেষ্ট মাংস থাকবে| পশুটিকে হতে হবে একটি এক বছরের পুংশাবক এবং সম্পূর্ণরূপে স্বাস্থ্য়বান| 4 5 6 মাসের চতুর্দশ দিন পর্য়ন্ত এই পশুটির ওপর তোমাদের নজর রাখতে হবে| সেই দিন ইস্রায়েলীয় মণ্ডলীর সমস্ত লোকরা এই পশুটিকে গোধুলি বেলায হত্যা করবে| 7 তোমরা এই প্রাণীর রক্ত সংগ্রহ করবে, য়ে বাড়ীতে লোকরা ভোজ খাবে সেই বাড়ীর দরজার কাঠামোর ওপরে ও পাশে এই রক্ত লাগিয়ে দেবে| 8 “এই দিন রাতে তোমরা মেষটিকে পুড়িয়ে তার মাংস খাবে| তোমরা তেঁতো শাক ও খামিরবিহীন রুটিও খাবে| 9 মেষটিকে কাঁচা অথবা জলে সিদ্ধ করা অবস্থায় তোমাদের খাওয়া উচিত্ হবে না, কিন্তু আগুনের তাপে সেঁকবে| মেষশাবকটির মাথা, পা এবং ভিতরের অংশ সব কিছুই অক্ষুন্ন থাকবে| 10 তোমরা সব মাংস রাতের মধ্যেই খেযে শেষ করবে| যদি পরদিন সকালে কিছু অবশিষ্ট থাকে তবে তা পুড়িয়ে ফেলবে| 11 “যখন তোমরা আহার করবে তখন তোমরা যাত্রার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে থাকার পোশাকে থাকবে| তোমাদের পায়ে জুতো থাকবে, হাতে ছড়ি থাকবে এবং তোমরা তাড়াহুড়ো করে খাবে| কারণ এ হল প্রভুর নিস্তারপর্ব| 12 “আমি মিশরীয়দের প্রথমজাত শিশুগুলিকে এবং তাদের সমস্ত পশুর প্রথমজাত শাবকগুলিকে হত্যা করব| এইভাবে, আমি মিশরের সমস্ত দেবতাদের ওপর রায দেব যাতে তারা জানতে পারে য়ে আমিই প্রভু| 13 কিন্তু তোমাদের দরজায় লাগানো রক্ত একটি বিশেষ চিহ্নের কাজ করবে| যখন আমি ঐ রক্ত দেখব তখন আমি তোমাদের বাড়ীগুলোর ওপর দিয়ে চলে যাব| আমি শুধু মিশরের লোকদের ক্ষতি করব| এই সব মারাত্মক রোগে তোমাদের কোন ক্ষতি হবে না| 14 “তাই তোমরা সবসময় মনে রাখবে য়ে আজ তোমাদের একটি বিশেষ ছুটির দিন| তোমাদের উত্তরপুরুষরা এই ছুটির দিনের মাধ্যমে প্রভুকে সম্মান জানাবে| 15 এই ছুটিতে তোমরা সাতদিন ধরে খামিরবিহীন রুটি খাবে, ছুটির প্রথম দিনে তোমরা তোমাদের বাড়ী থেকে সমস্ত খামির সরিয়ে ফেলবে| এই ছুটিতে পুরো সাত দিন ধরে কেউ কোন খামির খাবে না| যদি কেউ সেটা খায় তবে সেই ব্যক্তিকে ইস্রায়েলীয়দের থেকে আলাদা করে দেওয়া হবে| 16 এই ছুটির প্রথম ও শেষ দিনে পবিত্র সমাগম অনুষ্ঠিত হবে| তোমরা এই দিনগুলোতে কোন কাজ করবে না| তোমরা এই দিনগুলিতে একমাত্র তোমাদের আহারের জন্য খাদ্য তৈরী করতে পারবে| 17 তোমরা খামিরবিহীন রুটির উত্সবের কথা মনে রাখবে| কেন? কারণ এই দিন আমি তোমাদের সব লোককে দলে দলে মিশর থেকে বের করে এনেছিলাম, তাই তোমাদের সব উত্তরপুরুষ এই দিনটি স্মরণ করবে, এই নিয়ম চিরকাল থাকবে| 18 তাই প্রথম মাসের চতুর্দশ দিন বিকেলে তোমরা খামিরবিহীন রুটি খাওয়া শুরু করবে| তোমরা ঐ রুটিটি ঐ মাসের একবিংশ দিনের সন্ধ্যা পর্য়ন্ত খাবে| 19 সাতদিন ধরে তোমাদের ঘরে কোন খামির থাকবে না, য়ে কোন ব্যক্তি সে ইস্রায়েলের নাগরিক হোক বা বিদেশী য়ে এই সময় খামির খাবে তাকে ইস্রায়েলের বাকি লোকদের থেকে আলাদা করে দেওয়া হবে| 20 এই ছুটিতে তোমরা অবশ্যই খামির খাবে না, তোমরা যেখানেই থাক না কেন খামিরবিহীন রুটি খাবে|” 21 তাই মোশি ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত প্রবীণদের ডেকে বলল, “তোমাদের পরিবারের জন্য মেষশাবক জোগাড় কর এবং নিস্তারপর্বের জন্য মেষশাবকটিকে হত্যা কর| 22 এক আঁটি করে এসোব নিয়ে পাত্রে রাখা রক্তে ডুবিয়ে তা দিয়ে দরজার কাঠামোর ওপর ও পাশের দিক রঙ করো| সকালের আগে কেউ নিজের বাড়ী ত্যাগ করবে না| 23 এই সময়, প্রভু মিশরের ভেতর দিয়ে মিশরীয়দের হত্যা করতে যাবেন| যখন তিনি দরজার কাঠামোর পাশে ও ওপরে রক্তের প্রলেপ দেখবেন, তখন তিনি সেই দরজাগুলোর ওপর দিয়ে যাবেন| প্রভু ধ্বংসকারীকে তোমাদের বাড়ীতে এসে আঘাত করতে দেবেন না| 24 তোমরা অবশ্যই এই আদেশ মনে রাখবে, এই নিয়ম তোমাদের ও তোমাদের উত্তরপুরুষদের জন্য চিরকাল থাকবে| 25 যখন তোমরা প্রভুর প্রতিশ্রুতি মত তাঁর দেওয়া ভূখণ্ডে যাবে তখন তোমাদের এই জিনিসগুলি অবশ্যই মনে রাখতে হবে| 26 যখন তোমাদের সন্তানরা জিজ্ঞাসা করবে, ‘আমরা কেন এই উত্সব করছি?’ 27 তখন তোমরা বলবে, ‘এই নিস্তারপর্ব প্রভুকে সম্মান জানাবার জন্য| কেন? কারণ যখন আমরা মিশরে ছিলাম তখন প্রভু আমাদের ইস্রায়েলবাসীদের বাড়ীগুলিকে নিস্তার দিয়েছিলেন| প্রভু মিশরীয়দের হত্যা করেছিলেন কিন্তু আমাদের লোকদের বাড়ীগুলো রক্ষা করেছিলেন| সুতরাং লোকে নত হয়ে প্রভুর উপাসনা করল|” 28 প্রভু মোশি ও হারোণকে এই আদেশ দিয়েছিলেন তাই ইস্রায়েলবাসী প্রভুর আদেশমতো কাজ করল| 29 মধ্যরাতে মিশরের সমস্ত প্রথম নবজাতক পুত্রদের প্রভু হত্যা করেছিলেন| ফরৌণের প্রথমজাত পুত্র থেকে জেলের বন্দীর প্রথমজাত পুত্র পর্য়ন্ত| সমস্ত পশুর প্রথমজাত শাবককেও হত্যা করা হল| 30 সেই রাতে মিশরের প্রত্যেক ঘরে কেউ না কেউ মারা গেল| ফরৌণ, তার কর্মচারী ও মিশরের সমস্ত লোক উচ্চস্বরে কান্না শুরু করল| 31 তাই, সেই রাতে ফরৌণ মোশি ও হারোণকে ডেকে বললেন, “উঠে পড়, আমাদের সকলকে ছেড়ে দাও এবং চলে যাও| তুমি ও তোমার ইস্রায়েলের লোকরা যা ইচ্ছা তাই করতে পার| তোমরা য়েমন বলেছিলে, গিয়ে প্রভুর উপাসনা কর| 32 তোমাদের চাহিদা মতো সমস্ত গরু ও মেষের দল তোমরা নিয়ে য়েতে পারো| যাও! যখন তোমরা যাবে আমায আশীর্বাদ করার জন্য প্রভুর কাছে প্রার্থনা করো|” 33 মিশরীয়রা তাদের তাড়াতাড়ি চলে যাবার জন্য মিনতি করল| কেন? কারণ তারা বলল, “তোমরা না চলে গেলে আমরা সকলে মারা যাব!” 34 ইস্রায়েলীয়রা তাদের রুটিতে খামির দেবার সময় পেল না| তারা ভিজে মযদার তালের পাত্র কাপড়ে জড়িয়ে কাঁধে বয়ে নিয়ে চলল| 35 তারপর ইস্রায়েলের লোকরা মোশির কথামতো তাদের মিশরীয় প্রতিবেশীদের কাছে গিয়ে কাপড় ও সোনা রূপার তৈরী জিনিস চাইল| 36 প্রভু মিশরীয়দের ইস্রায়েলীয়দের প্রতি দযালু করে তুললেন যাতে মিশরীয়রা তাদের ধনসইদ ইস্রায়েলবাসীদের হাতে তুলে দেয়! এইভাবে, ইস্রায়েলীয়রা মিশরীয়দের লুন্ঠন করল| 37 ইস্রায়েলের লোকরা রামিষেষ থেকে সুক্কোতে যাত্রা করল| শিশুরা ছাড়াই সেখানে প্রায় 6,00,000 লোক ছিল| 38 সেখানে প্রচুর মেষ, গবাদি পশু এবং জিনিসপত্র ছিল| তাদের সঙ্গে অনেক অ-ইস্রায়েলীয় লোক গিয়েছিল| 39 য়েহেতু তাদের মিশরের বাইরে য়েতে বাধ্য করা হয়েছিল, সেই হেতু তারা মাখা ময়দায়, য়েটা তারা মিশর থেকে এনেছিল, খামির মেশাবার সময় পাযনি| এবং যাত্রার জন্য কোন বিশেষ খাবার প্রস্তুত করারও সময় হয় নি| তাই তারা খামিরবিহীন রুটিই সেঁকে নিয়েছিল| 40 ইস্রায়েলীয়বাসীরা 430 বছর ধরে মিশরে বাস করেছিল| 41 প্রভুর সৈন্যরা430 বছর পর সেই বিশেষ দিনে মিশর ত্যাগ করেছিল| 42 তাই সেটা ছিল একটি বিশেষ রাত্রি কারণ প্রভু তাদের মিশর থেকে বাইরে বের করে আনার জন্য লক্ষ্য রাখছিলেন| সেইভাবে, সমস্ত ইস্রায়েলবাসীরা প্রভুকে সম্মান জানানোর জন্য চিরকাল এই বিশেষ রাতটির প্রতি লক্ষ্য রাখবে| 43 প্রভু মোশি ও হারোণকে বললেন, “এই হল নিস্তারপর্বের বলির নিয়মাবলী: কোন বিদেশী এই নিস্তারপর্বে আহার করবে না| 44 কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি কোন দাস কেনে এবং তাকে সুন্নত্ করায তাহলে সেই দাস নিস্তারপর্ব খেতে পারবে| 45 কিন্তু য়ে লোক তোমার দেশের একজন সাময়িক বাসিন্দা বা ভাড়া করা কর্মী তার নিস্তারপর্ব ভোজ খাওয়া উচিত্ নয়| এই নিস্তারপর্ব শুধুমাত্র ইস্রায়েলের লোকদের জন্য| 46 “প্রত্যেক পরিবার একটি বাড়ীতেই আহার করবে| কোনও খাবার বাড়ীর বাইরে যাবে না, মেষ শাবকের কোন হাড় ভাঙ্গবে না| 47 সমস্ত ইস্রায়েল প্রজাতির মানুষ এই উত্সব পালন করবে| 48 যদি ইস্রায়েলীয় ছাড়া অন্য কোন উপজাতির লোক তোমাদের সঙ্গে থাকে এবং তোমাদের খাবারে ভাগ বসাতে চায় তবে তাকে এবং তার পরিবারের প্রত্যেক পুরুষকে সুন্নত্ করাতে হবে| তাহলে সে অন্যান্য ইস্রায়েলীয়দের সমকক্ষ হয়ে যাবে এবং তাদের সঙ্গে খাবার ভাগ করে খেতে পারবে| কিন্তু যদি কোন ব্যক্তির সুন্নত্ না করানো হয় তবে সে এই খাবার আহার করতে পারবে না| 49 এই নিয়ম সকলের জন্যই প্রযোজ্য| এই নিয়মটি ইস্রায়েলীয় অথবা অ-ইস্রায়েলীয় সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য|” 50 তাই প্রভু মোশি ও হারোণকে যা আদেশ দিয়েছিলেন সমস্ত ইস্রায়েলের লোক তা পালন করল| 51 তাই সেই দিন প্রভু এইভাবে দলে দলে ইস্রায়েলবাসীদের মিশর দেশ থেকে বের করে আনলেন|
1 তখন প্রভু মোশিকে বললেন, 2 “ইস্রায়েলের প্রতিটি নারীর প্রথমজাত পুত্র সন্তানকে আমার উদ্দেশ্যে দান কর| এমনকি প্রত্যেকটি পশুর প্রথম পুরুষ শাবকটিও আমার হবে|” 3 মোশি লোকদের বলল, “এই দিনটিকে মনে রেখো| তোমরা মিশরের ক্রীতদাস ছিলে| কিন্তু প্রভু তাঁর মহান শক্তি দিয়ে এই দিনে তোমাদের দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেছেন| তোমরা খামিরবিহীন রুটি খাবে| 4 আজ আবীব মাসের (বসন্তকালের) এই দিনে তোমরা মিশর ত্যাগ করেছ| 5 প্রভু তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে কনানীয়, হিত্তীয়, ইমোরীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দের দেশ তোমাদের দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন| প্রভু তোমাদের এই বিশাল সম্পদে ভরা শস্য শ্যামল দেশে নিয়ে আসার পর তোমরা অবশ্যই প্রতি বছর প্রথম মাসের এই বিশেষ দিনে উপাসনা করবে| 6 “সাতদিন ধরে তোমরা খামিরবিহীন রুটি খাবে| সাত দিনের দিন ভোজন উত্সব করবে| এই মহাভোজ উত্সব হবে প্রভুকে সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে| 7 তাই সাতদিন ধরে তোমরা খামিরবিহীন রুটি খাবে| তোমাদের দেশের কোথাও কোন খামিরবিশিষ্ট রুটি অবশ্যই থাকবে না| 8 সেইদিন তোমরা তোমাদের সন্তানদের বলবে, ‘প্রভু আমাদের মিশর দেশ থেকে উদ্ধার করে এনেছেন বলে আমরা এই মহাভোজ উত্সব পালন করি|” 9 “এই বিশ্রামের দিনটিকে কোনও বিশেষ দিনে হাতে বাঁধা সুতোর মতো তোমাদের মনে রাখা উচিত্|মনে রাখবে দুই চোখের মাঝখানে কপালে লাগানো তিলকের মতো| এই ছুটির দিনটি তোমাদের প্রভুর শিক্ষামালাকে মনে রাখতে সাহায্য করবে| এটা তোমাদের সাহায্য করবে প্রভুর মহান শক্তিকে মনে রাখতে যিনি তোমাদের মিশর থেকে মুক্ত করেচেন| 10 সুতরাং প্রতি বছর ছুটির দিনটিকে তোমরা প্রতি বছর সঠিক সময় স্মরণ করবে| 11 “তোমাদের পূর্বপুরুষদের এবং তোমাদের কাছে প্রতিশ্রুতি মতো প্রভু তোমাদের কনানীযদের দেশে নিয়ে যাবেন| কিন্তু প্রভু তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন য়ে তোমাদের তিনি এই দেশ দিয়ে দেবেন| ঈশ্বর তোমাদের এই দেশ দেওয়ার পর, 12 তোমরা কিন্তু তাঁকে তোমাদের প্রথম পুত্র সন্তান এবং ভূমিষ্ট হওয়া প্রথম পুরুষ শাবককে প্রভুর উদ্দেশ্যে দান করবে| 13 প্রতিটি গাধার প্রথমজাত পুরুষ শাবককে প্রতিটি মেষ শাবকের বিনিময়ে প্রভুর কাছ থেকে কিনে মুক্ত করে আনতে পারবে| যদি মুক্ত করতে না পারো তাহলে গাধার শাবকটিকে ঘাড় মটকে হত্যা করবে| এবং সেটাই হবে প্রভুর প্রতি নৈবেদ্য| কিন্তু মানুষের প্রথমজাত পুত্র সন্তানদের অবশ্যই প্রভুর কাছ থেকে ফেরত্ নিয়ে আসতে হবে| 14 “ভবিষ্যতে তোমাদের সন্তানরা জিজ্ঞাসা করবে, তোমরা এগুলো কেন করলে, ‘এগুলোর মানেই বা কি?’ তখন তোমরা বলবে, ‘আমরা মিশরে দাসত্ব করতাম| কিন্তু প্রভুই তাঁর মহান শক্তি প্রয়োগ করে আমাদের মিশর দেশ থেকে উদ্ধার করে এনেছিলেন| 15 মিশরে ফরৌণ ছিলেন ভীষণ জেদী| তিনি কিছুতেই আমাদের মুক্তি দিচ্ছিলেন না| তাই প্রভু তখন সে দেশের প্রত্যেক প্রথমজাত সন্তানদের হত্যা করেছিলেন| প্রভু মানুষ ও পশু উভয়েরই প্রথমজাত পুরুষ সন্তানদের হত্যা করেছিলেন| সেইজন্যই আমরা সমস্ত প্রথমজাত পুং পশুদের প্রভুর কাছে উত্সর্গ করি এবং প্রভুর কাছ থেকে আমাদের প্রথমজাত পুত্র সন্তানদের কিনে নিই|’ 16 এরই চিহ্ন হিসাবে তোমাদের হাতে সুতো বাঁধ! এবং দুই চোখের মাঝখানে তিলক| যাতে তোমরা মনে রাখতে পার য়ে প্রভু তাঁর পরাক্রম শক্তি প্রযোগ করে আমাদের মিশর দেশ থেকে উদ্ধার করে এনেছেন|” 17 ফরৌণ যখন লোকদের চলে য়েতে দিলেন, ঈশ্বর তাদের পলেষ্টীয় দেশের মধ্যে দিয়ে ভূমধ্যসাগর বরাবর সহজ সমুদ্র পথ ব্যবহার করতে দেন নি, যদিও সো রাস্তা ছিল| ঈশ্বর বলেছিলেন, “ঐ দিক দিয়ে গেলে যুদ্ধ করতে হবে| তখন লোকরা মত পরিবর্তন করে আবার মিশরেই ফিরে য়েতে পারে|” 18 তাই ঈশ্বর তাদের সূফ সাগরের দিকবর্তী মরুভূমির মধ্যে দিয়ে নিয়ে এসেছিলেন| মিশর ত্যাগ করার সময় ইস্রায়েলের লোকরা য়ুদ্ধের পোশাকে নিজেদের সজ্জিত করল| 19 মোশি য়োষেফের অস্থি বয়ে নিয়ে চলল| (য়োষেফ মারা যাবার আগে ইস্রায়েলের পুত্রদের এই কাজ করার প্রতিশ্রুতি করিযে নিয়েছিল| য়োষেফ বলেছিল, “ঈশ্বর তোমাদের যখন রক্ষা করবেন তখন তোমরা মিশর দেশ থেকে আমার অস্থি সকল বয়ে নিয়ে এসো|”) 20 ইস্রায়েলীয়রা সুক্কোত্ ছেড়ে এসেছিল এবং এথমে, য়েটা মরুভুমির কাছে ছিল, সেখানে তাঁবু গাড়ল| 21 প্রভু সেই সময় তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে এলেন| সেই যাত্রার সময় প্রভু পথ দেখানোর জন্য দিনের বেলায় লম্বা মেঘ স্তম্ভ এবং রাতের বেলায আগুনের শিখা ব্যবহার করতেন| ঐ আগুনের শিখা রাতের বেলায় তাদের পথ চলার আলো জোগাতো| 22 লম্বা মেঘ স্তম্ভ সারাদিন তাদের সঙ্গে থাকত এবং রাতে থাকত আগুনের শিখা|
1 তারপর প্রভু মোশিকে বললেন, 2 “ওদের বলো, মিগ্দোল এবং সূফ সাগরের মাঝখানে বাল্সফোনের সামনে রাত্রিযাপন করতে| 3 তাহলে ফরৌণ ভাববে য়ে ইস্রায়েলের লোকরা মরুভূমিতে হারিয়ে গেছে| ওদের আর কোথাও যাবার জায়গা নেই| 4 তখন আমি ফরৌণকে সাহসী করে তুলব যাতে সে তোমাদের তাড়া করে| কিন্তু শেষ পর্য়ন্ত আমি ফরৌণ ও তার সেনাদের পরাজিত করব| এটা আমার সম্মান বাড়াবে| এবং মিশরের লোকরা তখন জানতে পারবে য়ে আমিই প্রভু|” ইস্রায়েলের লোকরা ঈশ্বরের কথামতোই কাজ করল| 5 মিশরের রাজা খবর পেলেন য়ে ইস্রায়েলীয়রা পালিয়েছে| এই খবর শুনে ফরৌণ ও তাঁর সভাসদরা আগের মত মন পরিবর্তন করলেন| ফরৌণ বললেন, “আমরা কেন ইস্রায়েলীয়দের য়েতে দিলাম? কেন ওদের পালাতে দিলাম? এখন আমরা আমাদের ক্রীতদাসদের হারালাম|” 6 সুতরাং ফরৌণ তাঁর রথে চড়ে লোকজন সমেত ফিরে গেলেন| 7 ফরৌণ তাঁর সব চেযে ভালো 600 জন সারথীকে নিলেন| প্রত্যেকটি রথে একজন করে বিশিষ্ট সভাসদ ছিল| 8 ইস্রায়েলীয়রা তাদের যুদ্ধ জয়ে উঁচু করা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ছেড়ে যাচ্ছিল| কিন্তু মিশরের রাজা ফরৌণ, য়াঁর হৃদয় প্রভুর দ্বারা উদ্ধত হয়েছিল, ইস্রায়েলীয়দের তাড়া করলেন| 9 মিশরীয় সৈন্যরা তাদের তাড়া করল| ফরৌণের সমস্ত অশ্বারোহী, রথারোহী এবং সৈন্য ইস্রায়েলীয়দের ধরে ফেলল যখন তারা সূফ সাগরের কাছে বাল্সফোনের পূর্বে পী-হহীরোতে শিবির করেছিল| 10 ইস্রায়েলের লোকেরা দেখতে পেল ফরৌণ এবং তাঁর সেনারা তাদের দিকে এগিয়ে আসছে| তখন তারা ভয় পেয়ে প্রভুর কাছে সাহায্যের জন্য চিত্কার করে উঠল| 11 তারা মোশিকে বলল, “কেন তুমি আমাদের মিশর থেকে বের করে আনলে? কেন মরার জন্য তুমি আমাদের এই মরুভূমিতে নিয়ে এলে? আমরা অন্ততঃ মিশরে তো শান্তিতে মরতে পারতাম| সেখানে আর কিছু থাক না থাক প্রচুর কবর ছিল| 12 এরকম য়ে ঘটতে পারে তা কিন্তু আমরা আগেই বলেছিলাম| আমরা বলেছিলাম, ‘অনুগ্রহ করে আমাদের বিরক্ত কোরো না| আমাদের এখানেই থাকতে দাও, মিশরীয়দের সেবা করতে দাও|’ এই মরুভূমিতে এসে মরার থেকে মিশরীয়দের দাসত্ব অনেক ভাল ছিল|” 13 কিন্তু মোশি উত্তরে বলল, “ভয় পেয়ে পালিয়ে য়েও না| দেখো, প্রভু কিভাবে আজ তোমাদের রক্ষা করেন| তোমরা আর কোনও দিন মিশরীয়দের দেখতে পাবে না| 14 তোমাদের কিছুই করতে হবে না| শুধু শান্ত হয়ে দেখে যাও কি ঘটছে| প্রভুই তোমাদের হয়ে যুদ্ধ করবেন|” 15 সেই সময় প্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি এখনও কেন আমার সামনে কাঁদছো! ইস্রায়েলীয়দের এগিয়ে য়েতে বলো| 16 যখন তুমি সূফ সাগরের ওপর তোমার হাতের লাঠি তুলে ধরবে সূফ সাগর দুভাগ হয়ে যাবে| তখন লোকরা সমুদ্রের মাঝখানে তৈরি হওয়া সেই শুকনো পথ দিয়ে পায়ে হেঁটে য়েতে পারবে| 17 আমিই মিশরীয়দের সাহসী করে তুলেছি| তাই ওরা তোমাদের তাড়া করছে| কিন্তু আমি তোমাদের দেখাব য়ে আমি ফরৌণ, তার সমস্ত সৈন্য, তার অশ্বারোহীসমূহ এবং সারথীদের চেযে অনেক বেশী শক্তিশালী| 18 তখন মিশরও জানবে য়ে আমিই প্রভু| মিশরীয়রাও আমাকে সম্মান জানাবে যখন আমি ফরৌণ, তার অশ্বারোহীগণ এবং সারথীদের পরাজিত করব|” 19 এরপর প্রভুর দূত, য়ে সামনে থেকে ইস্রায়েলীয়দের নেতৃত্ব দিচ্ছিল, সে ইস্রায়েলীয়দের পিছন দিকে চলে এলো| তাই এক লম্বা মেঘস্তম্ভ মুহুর্তের মধ্যেই লোকদের সামনে থেকে পিছনে চলে এল| 20 এইভাবে ঐ মেঘস্তম্ভ মিশরীয়দের মাঝখানে বিরাজ করতে থাকল| তখন মিশরীয়দের জন্য অন্ধকার থাকলেও ইস্রায়েলীয়দের জন্য আলো ছিল| তাই ঐ রাত্রে মিশরীয়রা ইস্রায়েলীয়দের কাছে আসতে পারল না| 21 মোশি সূফ সাগরের ওপর তার হাত মেলে ধরল| প্রভু পূর্ব দিক থেকে প্রবল ঝড়ের সৃষ্টি করলেন| এই ঝড় সারারাত ধরে চলতে লাগল| দু’ভাগ হয়ে গেল সমুদ্র| এবং বাতাস মাটিকে শুকনো করে দিয়ে সমুদ্রের মাঝখান বরাবর পথের সৃষ্টি করল| 22 ইস্রায়েলের লোকরা ঐ পথ দিয়ে হেঁটে সূফ সাগর পেরিয়ে গেল| তাদের দুদিকে ছিল জলের দেওয়াল| 23 পিছনে ফরৌণের সমস্ত অশ্বারোহী সেনা ও রথ ধাওয়া করল| 24 পরদিন সকালে মেঘস্তম্ভ ও অগ্নিশিখার ওপর থেকে প্রভু মিশরীয় সেনাদের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন| তখন প্রভু ইস্রায়েলীয়দের পক্ষ নিয়ে মিশরীয় সৈন্যবাহিনীকে আতঙ্কে ফেলে দিলেন| 25 রথের চাকা আটকে গিয়ে রথ চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়ালো| মিশরীয়রা চিত্কার করে উঠল, “চলো এখান থেকে বেরিয়ে যাই| প্রভুই ইহুদীদের হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন|” 26 তখন প্রভু মোশিকে বললেন, “সমুদ্রের ওপর তোমার হাত তুলে ধর| দেখবে তীব্র জলোচ্ছ্বাস গ্রাস করছে মিশরীয়দের রথ ও অশ্বারোহী সেনাদের|” 27 মোশি তার হাত সমুদ্রের ওপর মেলে ধরলো| তাই দিনের আলো ফোটার ঠিক আগে সমুদ্র তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে গেল| মিশরীয়রা জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঁচার তাগিদে প্রাণপনে দৌড়তে লাগল| কিন্তু প্রভু তাদের সমুদ্রের জলে ঠেলে দিলেন| 28 জলোচ্ছ্বাস গ্রাস করল রথ ও অশ্বারোহী সেনাদের| ফরৌণের য়ে সমস্ত সেনারা ইস্রায়েলীয়দের তাড়া করে আসছিল তারা সব ধ্বংস হল| কেউ বেঁচে থাকল না| 29 ইস্রায়েলের লোকরা সমুদ্রের মাঝখানে তৈরি হওয়া পথ দিয়ে সূফ সাগর পেরিয়ে গেল| তাদের পথের দুপাশে ছিল জলের দেওয়াল| 30 সুতরাং সেইদিন এইভাবে প্রভু মিশরীয়দের হাত থেকে ইস্রায়েলীয়দের রক্ষা করলেন| পরে ইস্রায়েলীয়রা সূফ সাগরের তীরে মিশরীয়দের মৃত দেহের সারি দেখতে পেল| 31 মিশরীয়দের সেই পরিণতি দেখার পর থেকে ইস্রায়েলের লোকরা প্রভুর শক্তি সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হল| তারা প্রভুকে ভয় ও সম্মান করতে শুরু করল| তারা বিশ্বাস করতে শুরু করল প্রভুকে এবং তাঁর দাস মোশিকে|
1 এরপর মোশি এবং ইস্রায়েলের লোকরা প্রভুর উদ্দেশ্যে এই গানটি গাইল:“আমি প্রভুর উদ্দেশ্যে গান গাইব! তিনি মহান কাজ করেছেন| তিনি ঘোড়া এবং ঘোড়সওয়ারদের সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন| 2 প্রভুই আমার শক্তি| তিনি আমার পরিত্রাতা এবং আমি তাঁর প্রশংসার গান গাইব| প্রভু আমার ঈশ্বর, আমি তাঁর প্রশংসা করব| প্রভু হলেন আমার পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর| এবং আমি তাঁকে সম্মান করব| 3 প্রভু হলেন মহান য়োদ্ধা| তাঁর নাম হল প্রভু| 4 ফরৌণের রথ এবং সেনাদের তিনি সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন| ফরৌণের সেরা সৈন্যরা সূফ সাগরে ডুবে গেছে| 5 জলের গভীরে তারা তলিয়ে গেছে| পাথরের মতো তারা জলে ডুবে গেছে| 6 “প্রভু আপনার ডান হাত অসম্ভব শক্তিশালী| প্রভু আপনার ডান হাত শত্রুবাহিনীকে চুরমার করে দিয়েছে| 7 আপনি আপনার মহান রাজকীয় ঢঙে আপনার বিরুদ্ধাচারীদের ধ্বংস করেছেন| আগুনের শিখা য়েমন করে ঘর পুড়িয়ে দেয়, তেমনি আপনার ক্রোধ তাদের ধ্বংস করে দিয়েছে| 8 আপনার নিঃশ্বাসের একটি সজোর ফুত্কারে জল জমে উঠেছিল| সেই জলোচ্ছ্বাস একটি নিরেট দেওয়ালে পরিণত হয়েছিল এবং সমুদ্রের গভীরতাও ঘন হয়ে উঠেছিল| 9 শত্রুরা বলেছিল, ‘আমি তাদের তাড়া করে ধরে ফেলব| আমি তাদের সমস্ত ধন-সম্পত্তি লুঠ করব| আমি তরবারি ব্যবহার করে সব লুঠ করে নেব| সবকিছু আমার নিজের জন্য নিয়ে যাব|” 10 কিন্তু আপনি আপনার নিঃশ্বাস দিয়ে সমুদ্রকে উড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং তাদের ঢেকে দিয়েছিলেন| তারা সীসার মতো সেই ক্রুদ্ধ সমুদ্রের নীচে চলে গেছে| 11 প্রভুর মতো আর কোনও ঈশ্বর আছে? না! আপনার মতো আর কোনও ঈশ্বর নেই| আপনি অত্যন্ত পবিত্র| আপনি আশ্চর্য়জনক শক্তিশালী| আপনি মহান অলৌকিক ঘটনা ঘটান| 12 আপনি আপনার ডান হাত প্রসারিত করেছিলেন, তাই পৃথিবী তাদের গিলে ফেলেছিল| 13 আপনি আপনার মহান করুণা দিয়ে লোকদের রক্ষা করেছেন| এবং আপনার শক্তি দিয়ে ঐ লোকদের আপনার পবিত্র ও সুন্দর দেশে আপনি নিয়ে এসেছেন| 14 “অন্যান্য দেশ এই কাহিনী শুনে ভয় পাবে| পলেষ্টীয়রা ভয়ে কেঁপে উঠবে| 15 ইদোমের নেতারা ভয়ে কাঁপবে| মোয়াবের নেতারা ভয়ে কাঁপবে| কনানবাসীরা উদ্যম হারাবে| 16 ঐ শক্তিশালী লোকরা যখন আপনার ক্ষমতার প্রমাণ পাবে তখন তারা ভয় পেয়ে যাবে| ওরা পাথরের মতো অনঢ় হয়ে থাকবে যতক্ষণ না আপনার লোকরা চলে যায: হ্যাঁ, হে প্রভু, যতক্ষণ না আপনার লোক, যাদের আপনি কিনেছিলেন চলে যায়| 17 তাদের আপনার পর্বতে নিয়ে যান যেখানে আপনার বাসস্থান এবং সেখানে তাদের স্থাপন করুন| আমার প্রভু, ঐ জায়গাটাই হচ্ছে সেই জায়গা য়েটা আপনি তৈরী করেছেন| পবিত্র স্থান য়েটাকে আপনার হাত প্রতিষ্ঠা করেছে| 18 প্রভু চিরকালের জন্য যুগে যুগে শাসন করবেন|” 19 যখন ফরৌণের সমস্ত ঘোড়া, রথ ও অশ্বারোহী সমুদ্রের নীচে চলে গেল, তখন প্রভু আবার সমুদ্রের জল তাদের ওপর ফেরত্ আনলেন| কিন্তু ইস্রায়েলীয়রা সমুদ্রের মাঝখান দিয়ে শুকনো পথে হেঁটে গিয়েছিল| 20 তারপর হারোণের বোন মরিয়ম, মহিলা ভাববাদিনী, হাতে একটি খঞ্জনী তুলে নিল| মরিয়ম ও তার মহিলা সঙ্গীরা নাচতে ও গাইতে শুরু করল| গানের য়ে কথাগুলো মরিয়ম উচ্চারণ করছিল তা হল: 21 “প্রভুর উদ্দেশ্যে গান কর| তিনি মহান কাজ করেছেন| তিনি ঘোড়া এবং ঘোড়াসওযারীদের সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন|” 22 ইস্রায়েলের লোকদের সূফ সাগর পেরোতে মোশি নেতৃত্ব দিয়েছিল| তিন দিন ধরে শূর মরুভূমি অতিক্রম করতে করতে তারা জলের সন্ধান পেল না| 23 তিন দিন পর তারা মারাতে এসে পৌঁছালো| মারাতে জলের সন্ধান মিললেও সেই জল এত তেঁতো ছিল য়ে তা পানের অয়োগ্য| (এরজন্য এই জায়গার নাম রাখা হয়েছিল মারা বা তিক্ততা|) 24 লোকরা মোশির কাছে এসে নালিশ জানালো| তারা বলল, “এখন আমরা কি পান করব?” 25 মোশি প্রভুর কাছে কেঁদে পড়ল| প্রভু তাকে এক গাছের সন্ধান দিলেন| মোশি সেই গাছ ঐ তেঁতো জলে ডুবোতেই সেই জল সুস্বাদু হয়ে উঠল|ঐ স্থানে প্রভু লোকদের বিচার করে তাদের জন্য একটি আইন প্রণযনও করেছিলেন| প্রভু তাদের বিশ্বাসেরও পরীক্ষা নিলেন| 26 প্রভু বললেন, “তোমরা অবশ্যই তোমাদের প্রভু ঈশ্বরকে মেনে চলবে| তিনি য়েটা সঠিক মনে করবেন সেটাই তোমরা করবে| তোমরা যদি প্রভুর সমস্ত নির্দেশ ও বিধি মেনে চলো তাহলে তোমরা মিশরীয়দের মতো অসুস্থ থাকবে না| আমি প্রভু, তোমাদের মিশরীয়দের মতো অসুস্থ করে তুলব না| আমিই সেই প্রভু যিনি তোমাদের আরোগ্য দান করেছেন|” 27 তারপর লোকরা এলীমে এসে উপস্থিত হল| সেখানে বারোটি জলের ঝর্ণা এবং 70টি তাল গাছ ছিল| তারা সেই জায়গায় জলের ধারে তাদের শিবির তৈরি করল|
1 তারপর ইস্রায়েলের সমস্ত জনমণ্ডলী এলীম ছেড়ে গেল এবং সীনয় মরুভূমিতে এলো য়েটা ছিল এলীম ও সীনয়ের মাঝখানে| মিশর দেশ ছেড়ে আসার দ্বিতীয মাসের 15 দিনের মাথায় তারা সেখানে পৌঁছলো| 2 তারপর ইস্রায়েলের সমস্ত জনমণ্ডলী মরুভূমিতে মোশি ও হারোণের কাছে নালিশ করল| 3 এইসব লোকরা বলল, “প্রভু যদি আমাদের মিশর দেশে মেরে ফেলতেন তাহলেও ভাল ছিল| অন্ততঃ সেখানে তো খাবার পেতাম| আমাদের ইচ্ছামতো খাবার সেখানে মজুত ছিল| কিন্তু এখন তোমরা আমাদের এই মরুভূমিতে এনে ফেললে| এখানে তো আমরা খাবারের অভাবেই মারা যাব|” 4 তখন প্রভু মোশিকে বললেন, “আমি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে খাবার ফেলবার ব্যবস্থা করব| সেই খাবার তোমাদের খাবার য়োগ্য হবে| লোকরা প্রতিদিন বাইরে বেরিয়ে এসে তাদের প্রযোজনমতো সারাদিনের খাবার কুড়িয়ে নিয়ে আসবে| আমি যা বলছি তোমরা তা করছ কিনা শুধু তা দেখার জন্যই আমি এটা করব| 5 প্রত্যেকদিন তারা কেবলমাত্র একদিনের মতো পর্য়াপ্ত খাবার সংগ্রহ করবে| কিন্তু শুক্রবার যখন তারা খাবার তৈরি করবে, তখন তারা দেখবে য়ে দুদিনের মত পর্য়াপ্ত খাবার সঞ্চিত আছে|” 6 মোশি এবং হারোণ ইস্রায়েলের লোকদের বলল, “রাতে তোমরা প্রভুর শক্তির প্রমাণ পাবে| তোমরা জানবে য়ে তিনিই তোমাদের মিশর থেকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছেন| 7 তোমরা প্রভুর কাছে নালিশ জানিয়েছো এবং তিনি তা শুনেছেন| তাই আগামীকাল সকালে তোমরা প্রভুর মহিমা স্বচক্ষে দেখতে পাবে| তোমরা আমাদের কাছে কেবল নালিশই জানিয়ে যাচ্ছ| এখন কি আমরা খানিকটা বিশ্রাম পেতে পারি?” 8 এবং মোশি বলল, “তোমরা নালিশ জানিয়েছ এবং প্রভু তোমাদের অভিযোগ শুনেছেন| তাই আজ রাতে প্রভু তোমাদের মাংস দেবেন| এবং কাল সকালের মধ্যে তোমরা তোমাদের চাহিদা মতো রুটিও পেয়ে যাবে| তোমরা আমার কাছে এবং হারোণের কাছেও নালিশ জানিয়ে এসেছ| কিন্তু আমরা এখন দুজনে কিছু সমযের জন্য বিশ্রাম নিতে পারব বলে মনে হয়| মনে রেখো, তোমরা আমার বিরুদ্ধে কিংবা হারোণের বিরুদ্ধে নালিশ জানাও নি, তোমরা বয়ং প্রভুর বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়েছ|” 9 তারপর মোশি হারোণকে বলল, “ইস্রায়েলের সমস্ত লোকদের বলো, ‘প্রভুর সামনে উপস্থিত হতে|’ কারণ প্রভু তোমাদের নালিশ শুনেছেন|”‘ 10 হারোণ ইস্রায়েলের সমস্ত লোকদের সে কথা বলল| তখন তারা সবাই একসঙ্গে এক জায়গায় এসে জড়ো হল| হারোণ যখন সবার সঙ্গে কথা বলছিল তখন সবাই পিছন ফিরে মরুভূমির দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকল মেঘের ভিতর দিয়ে প্রভুর মহিমা প্রকাশিত হচ্ছে| 11 প্রভু মোশিকে বললেন, 12 “আমি ইস্রায়েলের লোকদের নালিশ শুনেছি| সুতরাং ওদের বলো, ‘আজ রাতে তোমরা মাংস খেতে পারো এবং সকালে তোমরা যতখুশি রুটি খেতে পারো| তখন তোমরা বুঝবে য়ে তোমরা তোমাদের প্রভু, তোমাদের ঈশ্বরকে, বিশ্বাস করতে পার|” 13 রাতে, তিতির পাখীরা এসেছিল এবং শিবিরের চারপাশে বসেছিল| লোকরা সেই পাখীগুলোকে ধরে তার মাংস খেল| সকালে শিবিরের চারপাশে শিশির পড়েছিল| 14 শিশির শুকিয়ে গেলে তুষার কণার সরু স্তরের মতো একটি বস্তু মাটিতে পড়ে থাকল| 15 তা দেখে ইস্রায়েলবাসীরা একে অপরকে জিজ্ঞাসা করতে শুরু করল, “এটা আবার কি জিনিস?”তারা জানত না সেটা কি| তাই তারা একে অপরকে কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করছিল| তখন মোশি তাদের বলল, “এটা এক ধরণের খাদ্যবস্তু যা প্রভু তোমাদের খাবার জন্য দিয়েছেন| 16 প্রভু বলেছেন, ‘প্রত্যেকেই তার প্রয়োজন মতো এটা কুড়িযে নেবে| এবং প্রত্যেককে তার পরিবারের প্রত্যেকের জন্য অন্ততঃ দু’পোযা করে নিতে হবে|”‘ 17 একথা শুনে ইস্রায়েলবাসীরা প্রত্যেকে ঐ খাদ্যবস্তু কুড়িয়ে নিল, কেউ কেউ আবার অন্যদের থেকে বেশী কুড়ালো| 18 পরে ওজনে দেখা গেল য়ে যারা বেশী সংগ্রহ করেছিল তাদের কাছে অতিরিক্ত পরিমাণ ছিল না এবং যারা কম সংগ্রহ করতে পেরেছিল তাদেরও খাবারে কম পড়ে নি| প্রত্যেকের পরিবারই পর্য়াপ্ত পরিমাণে খাবার পেল| 19 মোশি তাদের বলল, “পরের দিনের জন্য ঐ খাবার মজুত করে রেখো না|” 20 কিন্তু কয়েকজন মোশির কথা না শুনে পরের দিনের জন্য ঐ খাবার রেখে দিল| কিন্তু মজুত করা খাবারগুলোয় পোকা ধরে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে গেল| তাই মোশি ঐসব লোকদের ওপর ক্রুদ্ধ হল| 21 প্রতিদিন সকালে প্রত্যেকে ঐ খাবার পর্য়াপ্ত পরিমাণে জমা করত| কিন্তু দুপুরের মধ্যে ঐ খাদ্যবস্তু গলে উধাও হয়ে য়েত| 22 শুক্রবারে লোকগুলো দ্বিগুণ খাবার জমা করত| তারা মাথা পিছু দু’পোয়া করে খাবার জমা করত| তাই দেখে বিভিন্ন দলের নেতারা এসে মোশিকে তা জানাল| 23 মোশি তখন তাদের বলল, “প্রভুই ওদের বলেছিলেন এটা করতে| কারণ আগামীকাল হল প্রভুকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য বিশেষ বিশ্রামের দিন| তোমরা আজ সব খাবার রান্না করে আজকে খাবার পরে অবশিষ্ট খাবার কালকের জন্য মজুত করে রাখতে পারো|” 24 মোশির আদেশমত, লোকরা সেদিনকার অতিরিক্ত খাবার পরের দিনের জন্য সঞ্চয় করে রেখে দিল| কিন্তু ঐ খাবার এতটুকু নষ্ট হল না| তার মধ্যে একটাও পোকা ছিল না| 25 শনিবার মোশি লোকদের বলল, “আজ হল প্রভুর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য বিশেষ বিশ্রামের দিন| তাই আজ আর কেউ তোমরা মাঠে যাবে না| গতকালের মজুত করা খাবার আজ খাবে| 26 সপ্তাহের বাকি ছয় দিন খাবার সংগ্রহ করলেও প্রতি সাত দিনের দিন হবে বিশ্রামের দিন| তাই বিশ্রামের দিনে মাঠে কোনও খাবার পাওয়া যাবে না|” 27 একথা বলা সত্ত্বেও শনিবার কয়েকজন খাবারের সন্ধানে বাইরে গেল| কিন্তু দেখল কোনও খাবার মাঠে পড়ে নেই| 28 তখন প্রভু মোশিকে বললেন, “আর কতদিন এই লোকরা আমার নির্দেশ ও শিক্ষাকে অমান্য করবে? 29 দেখ, প্রভু এই বিশ্রামের দিনটি তোমাদের অবসরের জন্য নির্দিষ্ট করেছেন| তাই প্রভু শুক্রবার তোমাদের দুদিনের জন্য পর্য়াপ্ত খাবার দিয়ে দেন| সুতরাং য়ে যেখানেই থাকো না কেন শনিবার বিশ্রামের দিনে তোমরা সকলে বিশ্রাম নেবে ও আরাম করবে|” 30 তাই লোকজন প্রভুর কথামতো বিশ্রামের দিনে আরাম করতে লাগল| 31 ইস্রায়েলের লোকেরা ঐ খাদ্যবস্তুর নাম দিল “মান্না|” মান্নাকে দেখতে সাদা রঙের ধনে বীজের মতো হলেও এর স্বাদ অনেকটা মধু দিয়ে তৈরী করা পিঠের মতো| 32 মোশি বলল, “প্রভু বলেছেন: “পরবর্তী উত্তরপুরুষের জন্য তোমাদের দু’পোয়া করে মান্না সঞ্চয় করে রাখতে হবে| তাহলে পরে তারা দেখতে পাবে এই বিশেষ খাবার যা আমি তোমাদের মিশর দেশ থেকে উদ্ধার করে এনে মরুভূমিতে দিয়েছি|”‘ 33 তাই মোশি হারোণকে বলল, “একটা পাত্র নাও এবং তাতে দু’পোয়া মান্না রাখো| প্রভুর সামনে আমাদের উত্তর পুরুষদের জন্য এই মান্না রাখো|” 34 মোশির প্রতি প্রভুর নির্দেশ মতো হারোণ একটি পাত্রে মান্না ভরল এবং সাক্ষ্য সিন্দুকের ভেতর রাখল| 35 ইস্রায়েলীয়রা 40 বছর ধরে মান্না খেযেছিল| কনান দেশের সীমান্তে এসে না পৌঁছানো পর্য়ন্ত তারা মান্না খেযেছিল| 36 (মান্না মাপা হত পোযা হিসেবে| এক পোযা হল 8 কাপের সমান|)
1 সমস্ত ইস্রায়েলীয়রা একসঙ্গে সীন মরুভূমি থেকে তাদের যাত্রা শুরু করল| প্রভু য়েমনভাবে তাদের নেতৃত্ব দিলেন তারা সেইভাবে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় য়েতে শুরু করল| ঘুরতে ঘুরতে তারা রফীদীমে গিয়ে শিবির স্থাপন করল| সেখানে কোনও পানীয় জল ছিল না| 2 তাই ঐসব লোকরা আবার মোশির সঙ্গে তর্ক শুরু করল এবং বলল, “আমাদের পানীয় জল দাও|”মোশি তাদের বলল, “তোমরা কেন আমার বিরোধিতা করছো? কেনই বা তোমরা প্রভুকে পরীক্ষা করছো?” 3 কিন্তু লোকরা তখন প্রচণ্ড তৃষ্ণার্ত ছিল| তাই তারা পুনরায় মোশির কাছে নালিশ জানাতে শুরু করল| তারা বলল, “কেন তুমি আমাদের মিশর থেকে বের করে আনলে? তুমি কি আমাদের, আমাদের সন্তানদের এবং গবাদি পশুদের পানীয় জলের অভাবে মারার জন্য মিশর থেকে বের করে নিয়ে এসেছো?” 4 তারপর মোশি প্রভুর কাছে কেঁদে পড়ল এবং বলল, “আমি এদের নিয়ে কি করি? যদি এখুনি কিছু না করা যায তাহলে এরা তো সত্যি সত্যি আমাকে পাথর দিয়ে মেরে ফেলবে|” 5 প্রভু মোশিকে বললেন, “কিছু প্রবীণ নেতাদের নিয়ে ইস্রায়েলের লোকের সামনে গিয়ে দাঁড়াও| সঙ্গে তোমার পথ চলার লাঠিকেও নেবে য়ে লাঠি দিয়ে তুমি নীল নদে আঘাত করেছিলে| 6 আমি তোমার সামনে হোরেব পর্বতের (সীনয় পর্বত) ওপর দাঁড়াব| পথ চলার লাঠি দিয়ে ঐ পাথরে আঘাত করো আর তখনই দেখবে পাথর থেকে জল বেরিয়ে আসছে| ঐ জল লোকরা পান করতে পারবে|”মোশি তাই করল এবং ইস্রায়েলের প্রবীণ নেতারাও তা স্বচক্ষে দেখতে পেল| 7 মোশি ঐ স্থানের নাম দিল মঃসা ও মরীবা, কারণ ঐ স্থানেই ইস্রায়েলের লোকরা তার বিরোধিতা এবং ঈশ্বরের পরীক্ষা নিয়েছিল| লোকজন চেযেছিল প্রভু তাদের সঙ্গে আছেন কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে| 8 সেই সময় অমালেক গোষ্ঠীর লোকরা এল এবং রফীদীমে ইস্রায়েলের লোকদের সঙ্গে যুদ্ধ বাধিয়ে দিল| 9 তখন মোশি যিহোশূয়কে বলল, “কিছু লোককে বেছে নিয়ে আগামীকাল থেকে অমালেকদের সঙ্গে যুদ্ধ করো| আমি তোমাকে পথ চলার লাঠি য়েটাতে ঈশ্বরের পরাক্রম বিদ্যমান, সেইটা নিয়ে পাহাড়ের ওপর থেকে লক্ষ্য করব|” 10 পরদিন যিহোশূয় মোশির আদেশ মেনে যুদ্ধ করতে গেল| একই সমযে মোশি, হারোণ এবং হূর পাহাড়ের চূড়ায় উঠল| 11 যতক্ষণ পর্য়ন্ত মোশি তার হাত তুলে রইল, ইস্রায়েলীয়রা যুদ্ধ জিতছিল, যখন সে তার হাত নামিয়েছিল তখন তারা হেরে যাচ্ছিল| 12 কিছু সময় পরে হাত তুলে থাকতে থাকতে মোশি ক্লান্ত হয়ে উঠল| তখন হারোণ ও হূর একটা বিশাল পাথরে মোশিকে বসিযে তারা উভয়ে মোশির দুদিকে গিয়ে তার হাত তুলে ধরল| সূর্য় না ডোবা পর্য়ন্ত তারা এইভাবেই মোশির হাত দুটোকে তুলে ধরে রইল| 13 আর যিহোশূয় অমালেকদের যুদ্ধে পরাজিত করল| 14 তখন প্রভু মোশিকে বললেন, “এই যুদ্ধ নিয়ে একটা বই লেখ যাতে লোকরা মনে রাখে এখানে কি ঘটেছিল এবং য়িহোশূযের কাছে এটা জোরে পড়ে শোনাও যাতে সে জানতে পারে য়ে আমি অমালেকদের এই পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দেব|” 15 এরপর মোশি একটি বেদী তৈরী করল| সেই বেদীর নাম হল “প্রভুই আমার পতাকা|” 16 মোশি বলল, “আমি প্রভুর সিংহাসনের দিকে হাত বাড়িযে ছিলাম বলেই প্রভু অমালেকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন, য়েমন তিনি সর্বদা করেন|”
1 মোশির শ্বশুর যিথ্রো ছিল মিদিয়নীয়র যাজক| ঈশ্বর য়ে একাধিকভাবে মোশিকে এবং ইস্রায়েলের লোকদের সাহায্য করেছেন তা সে শুনেছিল| য়িথ্রো শুনেছিল য়ে প্রভু ইস্রায়েলীয়দের মিশর থেকে বের করে এনেছেন| 2 তাই য়িথ্রো মোশির স্ত্রী সিপ্পোরাকে নিল এবং মোশির সঙ্গে দেখা করতে গেল| মোশি তখন ঈশ্বরের পর্বতের কাছে শিবির করে রযেছে| মোশির স্ত্রী সিপপোরা তখন বাপের বাড়ীতে থাকত কারণ মোশিই তার স্ত্রীকে বাপের বাড়ী পাঠিয়ে দিয়েছিল| 3 যিথ্রো তার সঙ্গে শুধু মোশির স্ত্রীকেই নয়, মোশির দুই পুত্রকেও নিয়ে গিয়েছিল| প্রথম পুত্রের নাম গের্শোন কারণ সে যখন জন্মায় তখন মোশি বলেছিল, “আমি পরদেশে প্রবাসী|” 4 দ্বিতীয পুত্রের নাম ইলীয়েষর| নামকরণের কারণ হিসেবে দ্বিতীয় পুত্রের জন্মের সময় মোশি বলেছিল, “আমার পিতার ঈশ্বর, আমাকে সাহায্য করেছেন এবং ফরৌণের তরবারি থেকে রক্ষা করেছেন|” 5 য়িথ্রো মোশির স্ত্রী ও দুই পুত্রকে নিয়ে মোশির শিবিরে পৌঁছালো| মোশি তখন ঈশ্বরের পর্বতের কাছে মরুভূমিতে শিবিরে ছিল| 6 যিথ্রো মোশির উদ্দেশ্যে একটি বার্তায় বলে পাঠাল, “আমি তোমার শ্বশুর যিথ্রো| আমি তোমার স্ত্রী ও দুই পুত্রকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি|” 7 তখন মোশি তাঁবু থেকে বেরিয়ে এসে শ্বশুরকে হাঁটু গেড়ে প্রণাম ও চুম্বন করল| দুজনে দুজনের শরীর ও স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর নিয়ে মোশির তাঁবুতে প্রবেশ করল| 8 ইস্রায়েলের লোকদের জন্য প্রভু যা যা করেছেন মোশি তা বিস্তারিতভাবে যিথ্রোকে বলল| মোশি জানাল, প্রভু ফরৌণ ও মিশরের লোকদের কি অবস্থা করেছেন| যাত্রাপথে য়ে সমস্ত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল সে সমস্ত সমস্যার কথাও সে বলল| প্রত্যেকটি সমস্যার ক্ষেত্রে প্রভু কিভাবে ইস্রায়েলের লোকদের রক্ষা করেছেন তাও সে শ্বশুরকে খুলে বলল| 9 মিশরীয়দের হাত থেকে ইস্রায়েলীয়দের উদ্ধার করবার সময় প্রভু তাদের জন্য য়ে সমস্ত ভাল কাজগুলি করেছিলেন সে সম্বন্ধে শুনে য়িথ্রো খুশী হল| 10 য়িথ্রো বলল,“প্রভুর প্রশংসা করো! তিনিই তোমাদের মিশরীয়দের কবল থেকে মুক্ত করেছেন| ফরৌণের হাত থেকেও প্রভু তোমাদের রক্ষা করেছেন| 11 এখন আমি জানি সকল দেবতার থেকে প্রভুই মহান! তারা ভাবত তারাই একমাত্র ক্ষমতার অধিকারী কিন্তু দেখ ঈশ্বর কি করে দেখালেন!” 12 মোশির শ্বশুর যিথ্রো ঈশ্বরের প্রতি সম্মানার্থে নৈবেদ্য ও বলি দিল| তখন হারোণ ও ইস্রায়েলের অন্যান্য প্রবীণ নেতারা এসে ঈশ্বরের সামনে মোশি ও য়িথ্রোর সঙ্গে একসঙ্গে আহার করল| 13 পরদিন মোশি লোকদের বিচার করতে বসল| বিচার সভায় এত লোক হয়েছিল য়ে সবাইকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্য়ন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে হল| 14 মোশিকে লোকদের বিচার করতে দেখে য়িথ্রো তাকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কেন একা বিচারকের দায়িত্ব পালন করছো? এবং সবাই সারাদিন ধরে কেনই বা শুধু তোমার কাছেই আসছে?” 15 তখন মোশি তার শ্বশুরকে বলল, “লোকরা আমার কাছে ঈশ্বরের সিদ্ধান্ত জানতে আসে| 16 যখন মানুষদের মধ্যে কোন বিবাদ তৈরী হয় তখন তারা আমার কাছে আসে| আমিই ঠিক করে দিই কে সঠিক আর কে বেঠিক| এই উপায়ে আমি মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের বিধি ও শিক্ষাকে ছড়িয়ে দিই|” 17 কিন্তু মোশির শ্বশুর তাকে বলল, “এটাই ঐ কাজের সঠিক উপায় নয়| 18 এটা তোমার একার কাজ নয়| তুমি একা এই কাজ করতে পারবে না| এভাবে তুমিও উদ্যম হারাবে এবং লোকরাও ক্লান্ত হয়ে পড়বে! 19 এখন মন দিয়ে আমার কথা শোন| আমার কিছু উপদেশ গ্রহণ করো| এবং আমি প্রার্থনা করি ঈশ্বর য়েন সর্বদা তোমার সঙ্গে থাকেন| তুমি সর্বদা লোকদের সমস্যা শুনে যাবে এবং সেগুলো নিয়ে তুমি সর্বদা ঈশ্বরের কাছে বলবে| 20 তুমি ঈশ্বরের বিধি ও শিক্ষামালাকে লোকদের মধ্যে জাগিয়ে তুলবে| তাদের বলবে তারা য়েন ঈশ্বর প্রদত্ত বিধিকে না ভাঙ্গে| তাদের বলবে সঠিক পথে চলতে| তাদের কি করা উচিত্ তাও বলে দেবে| 21 কিন্তু তোমাকে কিছু মানুষকে বিচারক হিসাবে এবং নেতা হিসেবে নির্বাচন করতে হবে|“কিছু ভাল মানুষ যাদের তুমি বিশ্বাস করতে পারো তাদের নির্বাচন করো - তারা ঈশ্বরকে সম্মান করবে| তাদেরই নির্বাচন করবে যারা অর্থের জন্য নিজেদের সিদ্ধান্ত বদল করবে না এবং এদের মানুষদের শাসক হিসাবে তৈরি করো| 1,000 জন প্রতি, 100 জন প্রতি, 50 জন প্রতি এবং 10 জন প্রতি শাসক মনোনীত করো| 22 এবার ঐ লোকেদের শাসনের ভার এই শাসকদের হাতে ছেড়ে দাও| যদি কোনও গুরুত্বপূর্ণ মামলা থাকে তাহলে সেই শাসকরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তোমার কাছে আসবে| কিন্তু সাধারণ মামলার সিদ্ধান্তগুলি অবশ্য তারা নিজেরাই করে নেবে| এইভাবে তোমার বেশ কিছু কাজের ভার তারা বহন করবে এবং তার ফলে লোকদের নেতৃত্ব দিতে তোমারও সুবিধা হবে| 23 যদি তুমি এভাবে এগোতে পারো, আর ঈশ্বর যদি চান তাহলে তুমি তোমার দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবে এবং একইভাবে লোকরাও তাদের সমস্যার সমাধান করে ঘরে ফিরে য়েতে পারবে|” 24 যিথ্রো যা বলল মোশি তাই করল| 25 ইস্রায়েলের লোকদের থেকে কিছু ভাল লোককে সে মনোনীত করল| তারপর সে তাদের নেতা হিসেবে তুলে ধরল| মোশি প্রতি 1,000 জনের জন্য, প্রতি 100 জনের জন্য, প্রতি 50 জনের জন্য, এবং প্রতি 10 জনের জন্য শাসক নিযুক্ত করল| 26 এরপর থেকে সেই প্রধানরাই সাধারণ লোকদের শাসন করতে শুরু করল| লোকদের মধ্যে বিবাদ দেখা দিলে তারা নিজের নিজের অঞ্চলের নির্দিষ্ট প্রধানের কাছে য়েতে লাগল সমস্যা সমাধানের জন্য| কেবলমাত্র গুরুত্বপূর্ণ কোন সমস্যা বা মামলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হত মোশিকে| 27 কিছুদিন পর মোশি তার শ্বশুর যিথ্রোকে বিদায় জানাল এবং যিথ্রো তার দেশে ফিরে গেল|
1 মিশর ছেড়ে এসে যখন ইস্রায়েলেরে লোকরা ভ্রমণ করছিল তখন সেই ভ্রাম্যমান অবস্থার তৃতীয় মাসে ইস্রায়েলের লোকরা সীনয় মরুভূমিতে পৌঁছোল| 2 তারা রফীদীম থেকে সীনয় পর্য়ন্ত ভ্রমণ করেছিল এবং পর্বতের কাছে তাঁবু ফেলেছিল| 3 তারপর মোশি পর্বতে উঠল ঈশ্বরের সঙ্গে সাক্ষাত্ করার উদ্দেশ্যে| সেই পর্বতে ঈশ্বর মোশিকে ডেকে বললেন, “ইস্রায়েলের লোকজন ও মহান যাকোব পরিবারের লোকজনকে একথাগুলি বলো: 4 তোমরা নিজেরাই দেখেছ আমি মিশরীয়দের কি অবস্থা করেছি| তোমরা দেখেছো আমি কিভাবে ঈগল পাখীর মতো মিশর থেকে তোমাদের বের করে আমার কাছে এখানে নিয়ে এসেছি| 5 তাই এখন আমি তোমাদের আমার নির্দেশগুলো মেনে চলতে বলছি| আমার চুক্তি পালন করো| তোমরা যদি তা করো তাহলে তোমরা হবে আমার বিশেষ লোক| এই পুরো পৃথিবীটাই আমার; কিন্তু আমি তোমাদের আমার বিশেষ লোক হিসেবে মনোনীত করেছি| 6 তোমরা যাজকদের একটি বিশেষ রাজ্য় হবে| মোশি তুমি কিন্তু আমি যা বলেছি তা ইস্রায়েলের লোকেদের অবশ্যই বলবে|” 7 তাই মোশি আবার পর্বত থেকে নীচে নেমে এসে ইস্রায়েলের প্রবীণ লোকদের প্রভুর সমস্ত নির্দেশ জানাল| 8 তারা সবাই সমস্বরে জানাল, “প্রভুর সব কথা আমরা মেনে চলব|”তখন মোশি প্রভুকে বলল য়ে প্রত্যেকেই তাঁকে মেনে চলবে| 9 এবং প্রভু মোশিকে বললেন, “ঘন মেঘের মধ্যে দিয়ে আমি তোমার কাছে আসব এবং তোমার সঙ্গে কথা বলব| এবং তোমার সঙ্গে আমার বাক্যলাপ প্রত্যেকটি লোক শুনতে পাবে| লোকদের কাছে তোমার বিশ্বাসয়োগ্যতা বাড়ানোর জন্যই আমি এই উপায়ে তোমার সঙ্গে কথা বলব|”তখন মোশি লোকদের যাবতীয় বক্তব্য ঈশ্বরকে জানাল| 10 এবং প্রভু মোশিকে বললেন, “আজ এবং আগামীকাল তুমি একটা বিশেষ সভার জন্য লোকদের প্রস্তুত করো| তাদের অবশ্যই তাদের পোশাক ধুয়ে নিতে হবে| 11 এবং তৃতীয় দিনে আমার জন্য তৈরী থাকতে হবে| তৃতীয় দিনে আমি সীনয় পর্বত থেকে নীচে নেমে আসব এবং প্রত্যেকটি মানুষ আমার দর্শন পাবে| 12 কিন্তু তুমি প্রত্যেককে বলবে পর্বত থেকে দূরে সরে থাকতে| একটি রেখা টেনে সেই রেখা ওদের পার হতে বারণ করবে| কোন লোক বা প্রাণী যদি পর্বতকে স্পর্শ করে তাহলে তার মৃত্য়ু হবে| তাকে অবশ্যই পাথর দিয়ে অথবা তীর বিদ্ধ করে মেরে ফেলতে হবে| তাকে কেউ ছোঁবে না| শিঙা বেজে না ওঠা পর্য়ন্ত প্রত্যেকে অপেক্ষা করবে| তারপর তারা পর্বতে উঠতে পারবে|” 13 14 সুতরাং মোশি পর্বত থেকে নীচে নেমে এসে লোকদের বিশেষ সভার জন্য প্রস্তুত করল| লোকরা তাদের পোশাক পরিষ্কার করে নিল| 15 তখন মোশি লোকদের বলল, “তৃতীয় দিনে ঈশ্বরের সঙ্গে বিশেষ সভার জন্য প্রস্তুত হও| ঐদিন পর্য়ন্ত কোন পুরুষ নারীকে স্পর্শ করবে না|” 16 তৃতীয় দিন সকালে, পর্বতের চূড়া থেকে ঘন মেঘ নীচে নেমে এল| মেঘ গর্জন ও বিদ্য়ুত্ রেখায় উচ্চস্বরে শিঙা বেজে উঠল| শিবিরের প্রত্যেকে ভয় পেয়ে গেল| 17 তখন মোশি সবাইকে শিবির থেকে বের করে পর্বতের কাছে ঈশ্বরের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য নিয়ে এল| 18 সীনয় পর্বত ধোঁয়ায ঢেকে গেল| চূল্লীর মতো ধোঁয়া পাকিযে পাকিযে ওপরে উঠতে লাগল| সমস্ত পর্বত কাঁপতে শুরু করল| আগুনের শিখায় প্রভু পর্বত থেকে নীচে নেমে এলেন বলেই এই ঘটনা ঘটল| 19 শিঙার শব্দ ক্রমশঃ জোরালো হতে থাকল| মোশি যতবার ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলল ততবারই বজ্রের মতো কঠিন স্বরে ঈশ্বর উত্তর দিতে থাকলেন| 20 প্রভু সীনয় পর্বতে নেমে এলেন| এরপর প্রভু মোশিকে পর্বত শৃঙ্গে তাঁর কাছে য়েতে বললেন| তখন মোশি পর্বতে চড়ল| 21 প্রভু মোশিকে বললেন, “নীচে গিয়ে লোকদের বলো ওরা য়েন আমার কাছে না আসে| আমাকে য়েন না দেখে| যদি তা করে তাহলে অনেকে মারা পড়বে| 22 আর য়ে সকল যাজক আমার কাছে আসবে তাদের বলো তারা য়েন এই বিশেষ সভার জন্য নিজেদের তৈরি করে আসে| যদি তারা তা না করে তাহলে আমি তাদের শাস্তি দেব|” 23 মোশি প্রভুকে বলল, “কিন্তু লোকে পর্বতে চড়তে পারবে না| কারণ আপনিই তো বলেছিলেন একটি রেখা টানতে এবং সেই রেখা লঙঘন করে কেউ য়েন পবিত্র ভূমিতে না আসে|” 24 প্রভু তাকে বললেন, “নীচে মানুষের কাছে যাও| গিয়ে হারোণকে তোমার সঙ্গে নিয়ে এসো| কিন্তু কোন সাধারণ মানুষ ও যাজককে আমার কাছে আসতে দিও না| যদি তারা আমার খুব কাছে আসে তাহলে আমি তাদের শাস্তি দেব|” 25 সুতরাং মোশি লোকদের এই কথাগুলি বলার জন্য নীচে নামল|
1 তখন ঈশ্বর এই সব কথা বললেন: 2 “আমিই প্রভু, তোমাদের ঈশ্বর| আমিই তোমাদের মিশরের দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছি| তাই তোমরা এই নির্দেশগুলি মানবে: 3 “আমাকে ছাড়া তোমরা আর কোনও দেবতাকে উপাসনা করবে না| 4 “তোমরা অবশ্যই অন্য কোন মূর্তি গড়বে না য়েগুলো আকাশের, ভূমির অথবা জলের নীচের কোন প্রাণীর মত দেখতে| 5 কোন মূর্ত্তির উপাসনা বা সেবা করবে না| কারণ, আমিই প্রভু, তোমাদের ঈশ্বর| যারা অন্য দেবতার উপাসনা করবে তাদের আমি ঘৃণা করি| আমার বিরুদ্ধে যারা পাপ করবে তারা আমার শত্রুতে পরিণত হবে| এবং আমি তাদের শাস্তি দেব| আমি তাদের সন্তানসন্ততি এবং পরবর্তী প্রজন্মকেও শাস্তি দেব| 6 কিন্তু যারা আমায ভালবাসবে ও আমার নির্দেশ মান্য করবে তাদের প্রতি আমি সর্বদা দযালু থাকব| আমি তাদের হাজার প্রজন্ম পর্য়ন্ত দযা প্রদর্শন করব|” 7 “তোমরা তোমাদের প্রভু ঈশ্বরের নাম ভুল ভাবে ব্যবহার করবে না| যদি কেউ তা করে তাহলে সে দোষী এবং প্রভু তাকে নির্দোষ সাব্যস্ত করবেন না| 8 “বিশ্রামের দিনটিকে বিশেষ দিন হিসাবে মনে রাখবে| 9 সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করো| 10 কিন্তু সপ্তমদিনটি হবে অবসরের| প্রভু, তোমাদের ঈশ্বরের প্রতি সম্মান প্রর্দশনের দিন| সুতরাং সেই দিনে কেউ কাজ করবে না-তুমি নয়, অথবা তোমার ছেলেরা এবং মেয়েরা, অথবা তোমার স্ত্রী, অথবা তোমার ক্রীতদাস-দাসীরা কেউ নয়| এমনকি তোমাদের গৃহপালিত পশু এবং তোমাদের শহরে বাস করা বিদেশীরাও বিশ্রামের দিনে কোন কাজ করবে না| 11 কারণ প্রভু সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করে এই আকাশ, পৃথিবী, সমুদ্র এবং এর মধ্যস্থিত সব কিছু বানিয়েছেন এবং সপ্তমদিনে তিনি বিশ্রাম নিয়েছেন| এইভাবে বিশ্রামের দিনটি প্রভুর আশীর্বাদ ধন্য - ছুটির দিন| প্রভু এই দিনটিকে বিশেষ দিন হিসাবে সৃষ্টি করেছেন| 12 “তুমি অবশ্যই তোমার পিতামাতাকে সম্মান করবে, তাহলে তোমরা তোমাদের দেশে দীর্ঘ জীবনযাপন করবে| য়েটা প্রভু, তোমাদের ঈশ্বর তোমাদের দিচ্ছেন| 13 “কাউকে হত্যা কোরো না| 14 “ব্যাভিচার কোরো না| 15 “চুরি কোরো না| 16 “অন্যদের সম্বন্ধে মিথ্যা বোলো না| 17 “তোমাদের প্রতিবেশীর ঘরবাড়ীর প্রতি লোভ কোরো না| তার স্ত্রীকে ভোগ করতে চেও না| এবং তার দাস-দাসী, গবাদি পশু অথবা গাধাদের আত্মসাত্ করতে চেও না| অন্যদের কোন কিছুর প্রতি লোভ কোরো না|” 18 ঐ সমযে, লোকজন বজ্র নির্ঘোষ শুনতে পেল এবং বিদ্য়ুত্ দেখতে পেল| তারা শিঙার শব্দ শুনতে পেল এবং দেখল ধোঁয়া ওপর দিকে উঠছে| এই দেখে লোকরা ভয়ে কুঁকড়ে গেল| পর্বত থেকে দূরে দাঁড়িয়ে তারা এই ঘটনা দেখতে লাগল| 19 তখন লোকরা মোশিকে বলল, “তুমি যদি আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চাও তাহলে তা আমরা শুনব| কিন্তু ঈশ্বর য়েন আমাদের সঙ্গে কথা না বলেন| তিনি কথা বললে আমরা ভয়ে মারা যাব|” 20 তখন মোশি তাদের বলল, “ভয় পেও না| প্রভু তোমাদের পরীক্ষা করতে আবির্ভূত হয়েছেন| তিনি চান তোমরা তাঁকে সম্মান কর, যাতে তোমরা পাপ কাজ না কর|” 21 লোকরা পর্বত থেকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকল, আর তখন মোশি অন্ধকার মেঘের ভেতর ঈশ্বরের কাছে গেল| 22 তখন প্রভু মোশিকে, ইস্রায়েলের লোকদের এই কথাগুলি বলার জন্য বললেন: “তোমরা দেখেছো য়ে আমি স্বর্গ থেকে তোমাদের সঙ্গে কথা বলেছি| 23 সুতরাং তোমরা আমার সঙ্গে তুলনা করে সোনা অথবা রূপো দিয়ে অন্য কোন মূর্ত্তি গড়বে না| 24 “আমার জন্য একটি বিশেষ বেদী তৈরী করো| বেদী তৈরীর সময় মাটি ব্যবহার করবে| আমার প্রতি উত্সর্গ হিসেবে ঐ বেদীর ওপর হোমবলি ও মঙ্গল নৈবেদ্য নিবেদন করবে| বলিতে তোমাদের গৃহপালিত মেষ অথবা গবাদি পশু ব্যবহার করবে| যেখানে যেখানে আমি তোমাদের মনে রাখতে বলেছি সেই সব স্থানে তোমরা এই বলিগুলি দেবে| তখন আমি এসে তোমাদের আশীর্বাদ করব| 25 পাথরের বেদী তৈরী করলে কোন লোহার অস্ত্র দিয়ে, কাটা পাথর ফলক দিয়ে সেই বেদী তৈরী করবে না| যদি তা করো তাহলে সেই বেদী গ্রহণয়োগ্য হবে না| 26 এবং আমার বেদীতে কোন সিঁড়ি তৈরী করবে না| যদি বেদীতে সিঁড়ি থাকে তাহলে ঐ সিঁড়ি দিয়ে মানুষ যখন উঠবে তখন নীচের লোকদের কাছে তাদের নগ্নতা প্রকাশ পাবে|”
1 তারপর ঈশ্বর মোশিকে বললেন, “তুমি অন্য এই সব নিয়মের কথাও লোকদের বলবে| 2 “তুমি যদি ইব্রীয় দাস ক্রয় করো তবে সে ছয় বছর দাসত্ব করার পর বিনামূল্যে মুক্তি পাবে| 3 যদি তোমার দাস থাকাকালীন সে বিবাহিত না হয় তাহলে মুক্তির সমযেও সে একাই মুক্তি পাবে| কিন্তু যদি সে বিবাহিত হয় তাহলে সে সস্ত্রীক মুক্তি পাবে| 4 যদি দাসটি বিবাহিত না হয় তাহলে তার মনিব তাকে বিয়ে দিতে পারে| সে যদি পুত্র অথবা কন্যা ধারণ করে তাহলে সে এবং তার ছেলেমেয়েরা মনিবের অধিকারভুক্ত হবে এবং সে নিজে ঐ মনিবের কাছে থাকবে এবং দাসের নিজের কর্মকাল শেষ হবার পর সে একা মুক্তি পাবে| 5 “কিন্তু যদি দাসটি বলে, ‘আমি আমার মনিবকে, আমার পত্নীকে এবং ছেলে-মেয়েদের ভালবাসি, তাই আমি মুক্ত হতে চাই না,’ 6 যদি এরকম হয় তাহলে তার মনিব দাসটিকে ঈশ্বরের কাছে নিয়ে আসবে| তারপর তার মনিব তাকে একটি দরজা বা দরজার কাঠের কাঠামোর কাছে নিয়ে যাবে| তারপর ছুঁচালো একটি যন্ত্র দিয়ে মনিব তার দাসের কানে একটি ফুটো করবে| তাহলে সেই দাস সারাজীবন তার মনিবের সেবা করবে| 7 “কোন ব্যক্তি যদি তার কন্যাকে দাস হিসেবে বিক্রি করতে চায় তাহলে তার মুক্তি পাওয়ার নিয়ম পুরুষ দাসদের নিয়মের থেকে আলাদা হবে| 8 যদি সেই মহিলার মনিব তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয় তাহলে সে তার মহিলা দাসটিকে তার পিতার কাছে ফেরত্ পাঠাতে পারে| যদি মনিবটি তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়, তাহলে অন্য লোকের কাছে তাকে বিক্রি করতে পারবে না কারণ সেটা হবে অন্যায| 9 যদি তার মনিব মহিলা দাসটিকে তার পুত্রের সঙ্গে বিয়ে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয় তবে তাকে দাসের মতো না রেখে মেয়ের মতো রাখতে হবে| 10 “যদি মনিব অন্য কোনও স্ত্রীলোককে বিয়ে করে তাহলে সে তার প্রথম স্ত্রীকে কম খাবার বা কম জামাকাপড় দিতে পারবে না| সে তার স্ত্রীর প্রতি বিবাহের অধিকার হিসেবে সব কর্তব্য করবে| 11 মনিব যদি এই তিনটি জিনিস না করে তাহলে তার স্ত্রী বিনামূল্যে তার কাছে থেকে মুক্তি পাবে| 12 “যদি কোনও ব্যক্তি কাউকে আঘাত করে হত্যা করে তাহলে সেই ব্যক্তিকেও হত্যা করা হবে| 13 কিন্তু যদি একটি দুর্ঘটনায় কোন ব্যক্তি মারা যায তাহলে সেটা ঈশ্বরের অভিপ্রায় বলে ধরে নেওয়া হবে| আমি কতগুলি বিশেষ জায়গা বেছে দেব য়েগুলি লোকরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করবে| 14 কিন্তু কোনও ব্যক্তি যদি ক্রোধ বা ঘৃণা থেকে কাউকে হত্যা করে তবে সে শাস্তি পাবে| তাকে আমার বেদী থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হবে| 15 “য়ে ব্যক্তি পিতা বা মাতাকে আঘাত করবে তাকে হত্যা করা হবে| 16 “যদি কোনও ব্যক্তি কাউকে চুরি করে দাস হিসেবে বিক্রি করতে চায় বা নিজের দাস করে রাখতে চায় তাহলে তাকে হত্যা করা হবে| 17 “য়ে ব্যক্তি তার পিতা বা মাতাকে অভিশাপ দেয়, তাকে হত্যা করা হবে| 18 “পরস্পর ঝগড়া করবার সময় যদি একজন অপর ব্যক্তিকে পাথর অথবা তার মুষ্টি দিয়ে আঘাত করে তাহলে তার শাস্তি পাওয়া উচিত্| য়ে আহত সে যদি মারা না যায় তবে য়ে আঘাত করেছে তাকে হত্যা করা হবে না| 19 আহত ব্যক্তি যদি কিছু সময়ের জন্য শয্যাশায়ী থাকে তাহলে য়ে আঘাত করেছে সে তার সমযের ক্ষতিপূরণ দেবে, যতদিন না আহত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে ওঠে| 20 “কখনও কখনও মনিব তার পুরুষ বা স্ত্রী দাসদের প্রহার করে থাকে, যদি এই প্রহারে দাসটি মারা যায় তবে তার ঘাতক শাস্তি পাবে| 21 কিন্তু যদি দাসটি মারা না গিয়ে কযেকদিন বাদে সেরে ওঠে তবে তার মনিবকে কিছু বলা হবে না কারণ সে তার দাসের জন্য অর্থ ব্যয করে থাকে এবং সে দাসটি তার সম্পত্তি| 22 “দুটি মানুষ ঝগড়া করার সময় যদি কোনও গর্ভবতী মহিলাকে আঘাত করে এবং এর ফলে যদি তার গর্ভপাত হয়ে যায এবং অন্য কোন ক্ষতি না হয় তাহলে য়ে আঘাত করেছে সে শুধু তাকে জরিমানা দিয়ে ছাড়া পেয়ে যাবে| ঐ মহিলার স্বামী জরিমানার টাকার অংশ ঠিক করে দেবে| বিচারকরা এই ব্যাপারে তাকে সাহায্য করবে| 23 কিন্তু যদি সেই মহিলার আঘাতের ফলে কোন ক্ষতি হয় তাহলে য়ে তাকে আঘাত করবে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে, য়ে অন্যকে হত্যা করবে তাকেও মরতে হবে| একজনের জীবনের বদলে অন্যের জীবন নেওয়া হবে| 24 তুমি চোখের বদলে চোখ নেবে, দাঁতের বদলে দাঁত, হাতের বদলে হাত, পায়ের বদলে পা নেবে| 25 পোড়ার বদলে পোড়াবে, চোটের বদলে চোট দেবে, কাটার বদলে কাটবে| 26 “যদি কোন ব্যক্তি তার দাসের চোখে আঘাত করে তাকে অন্ধ করে দেয় তাহলে সেই দাসকে মুক্তি দিয়ে দিতে হবে| তার চোখ হল তার মুক্তির মূল্য, স্ত্রী বা পুরুষ দাসের ক্ষেত্রে এই একই নিয়ম খাটবে| 27 যদি কোনও মনিব তার দাসকে মুখে আঘাত করে তার দাঁত ফেলে দেয় তবে তাকে মুক্তি দিতে হবে, তার দাঁত হবে তার মুক্তির মূল্য, এই নিয়ম স্ত্রী ও পুরুষ উভয় দাসের ক্ষেত্রেই প্রয়োজ্য় হবে| 28 “যদি কোনও ব্যক্তির ষাঁড় কোন স্ত্রী বা পুরুষকে মেরে ফেলে তাহলে ঐ ষাঁড়কে পাথর দিয়ে মেরে হত্যা করতে হবে| ঐ ষাঁড়কে খাওয়া ও যাবে না| কিন্তু ষাঁড়ের মালিক দোষী হবে না| 29 কিন্তু যদি ষাঁড়টি ইতিপূর্বে কাউকে আঘাত করে থাকে এবং তার মালিককে সতর্ক করে দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে সেই মালিককে দোষী সাব্যস্ত করা হবে| কেননা সে জানা সত্ত্বেও ষাঁড়টিকে যথাস্থানে বেঁধে বা আটকে রাখে নি| আর যদি এরকম ষাঁড়কে ছেড়ে রাখার ফলে কারো প্রাণ যায তাহলে সেই ষাঁড় ও তার মালিক দুজনকেই পাথর দিয়ে আঘাত করে মেরে ফেলা হবে| 30 কিন্তু মৃত ব্যক্তির পরিবার যদি অর্থ গ্রহণ করে তাহলে ষাঁড়ের মালিককে মারা হবে না| কিন্তু সে বিচারকদের নির্ধারিত টাকার অঙ্ক জরিমানা দেবে| 31 “এই একই নিয়ম বলবত্ থাকবে যদি ষাঁড়টি কোনও লোকের পুত্র বা কন্যাকে হত্যা করে| 32 কিন্তু ষাঁড়টি যদি কোনও দাসকে হত্যা করে তবে তার মালিককে 30 টুকরো রূপো দিতে হবে মূল্য হিসেবে এবং ষাঁড়টিকে পাথর দিয়ে মারা হবে| এই নিয়ম স্ত্রী ও পুরুষ দাসের ক্ষেত্রে একই হবে| 33 “কোনও ব্যক্তি কুঁযোর ওপরের ঢাকা সরিয়ে দিতে পারে বা গভীর গর্ত খুঁড়ে ঢাকা না দিয়ে রাখতে পারে| যদি কোন ব্যক্তির পোষা জন্তু এসে এই গর্তে পড়ে যায তবে গর্তের মালিককে দাযী করা হবে| 34 গর্তের মালিককে জন্তুটির মূল্য দিতে হবে কিন্তু মূল্য দেওয়ার পর সে জন্তুটির দেহ নিজের কাছে রাখার অধিকার পাবে| 35 “যদি এক ব্যক্তির ষাঁড় আরেক ব্যক্তির ষাঁড়কে হত্যা করে তখন জীবিত ষাঁড়টিকে বিক্রি করে দিতে হবে| উভয় ব্যক্তি সেই বিক্রয় মূল্যের অর্ধেক ভাগ পাবে এবং মৃত ষাঁড়টির দেহের অর্ধেক ভাগ পাবে| 36 যদি কারো ষাঁড় অন্য কারো ব্যক্তির জন্তুদের গুঁতিযে মেরে ফেলার জন্য পরিচিত থাকে, তবে সেই ষাঁড়ের মালিককে তার জন্য দাযী করা হবে| যদি ষাঁড়টি অন্য ষাঁড়কে মেরে ফেলে, তাহলে তার মালিককেই দায়ী করা হবে কারণ সে ষাঁড়টিকে ছেড়ে রেখেছে| তাকে অবশ্যই মৃত ষাঁড়ের মূল্য দিতে হবে কিন্তু মৃত ষাঁড়টি সে নিজের জন্য রাখতে পারে|
1 “য়ে ব্যক্তি ষাঁড় বা মেষ চুরি করেছে তাকে কিভাবে শাস্তি দেবে? যদি সে প্রাণীটিকে হত্যা করে বা বিক্রি করে দেয় তবে সে সেটা ফেরত্ দিতে পারবে না, তাই তাকে একটা চুরি করা ষাঁড়ের বদলে পাঁচটা ষাঁড় কিনে দিতে হবে বা একটা মেষের বদলে চারটি মেষ দিতে হবে| তাকে চুরির জন্য জরিমানা দিতে হবে| 2 যদি তার কাছে কিছু না থাকে তাহলে তাকে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হবে| যদি তুমি লোকটির কাছে জন্তুটিকে দেখতে পাও, তবে চোরকে অবশ্যই চুরি করা জন্তুটির মূল্যের দ্বিগুণ মূল্য দিতে হবে| প্রাণীটি ষাঁড় বা গাধা বা মেষ যাই হোক না কেন নিয়ম একই থাকবে|“যদি সিঁধ কেটে চুরি করার সময় কোনও চোর মারা যায তবে কেউই দোষী হবে না| কিন্তু যদি এটা দিনের বেলায হয় তাহলে য়ে হত্যা করবে সে দাযী হবে| 3 4 5 “যখন একটি ব্যক্তি তার গৃহপালিত জন্তুদের তার নিজের ক্ষেতে অথবা দ্রাক্ষাক্ষেতে চরতে দেয়, কিন্তু তারা যদি বিপথে গিয়ে অন্য কারো ক্ষেতে অথবা দ্রাক্ষাক্ষেতে চরে বেড়ায তাহলে তাকে তার ক্ষেতের অথবা দ্রাক্ষাক্ষেতের সবচেযে ভালো ফসল দিয়ে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে| 6 “কেউ যদি তার প্রতিবেশীর শস্যের গাদা অথবা য়ে শস্য কাটা হয়নি তা অথবা পুরো ক্ষেতটি পুড়িয়ে ফেলে, তাহলে যা কিছু পুড়ে গেছে তার ক্ষতিপূরণ তাকে দিতে হবে| 7 “কোনও ব্যক্তি তার টাকা বা অন্য কিছু তার প্রতিবেশীর কাছে রাখতে দিতে পারে| কিন্তু যদি প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে সেই জিনিস চুরি হয়ে যায তবে কি করবে? চোরকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে| যদি চোরকে পাওয়া যায তবে চোর চুরি করা জিনিসের মূল্যের দ্বিগুণ জরিমানা দেবে| 8 যদি চোরকে খুঁজে পাওয়া না যায়, তাহলে ঈশ্বর বিচার করবেন য়েখান থেকে চুরি হয়েছে সেই বাড়ির মালিক দোষী কি না| বাড়ির মালিক ঈশ্বরের কাছে যাবে এবং ঈশ্বর বিচার করবেন য়ে সে কিছু চুরি করেছে কি না| 9 “যদি কোনও দুই ব্যক্তি উভয়েই কোনও ষাঁড় বা গাধা বা মেষ বা কোনও হারানো বস্তুকে নিজের বলে দাবী করে তাহলে তারা দুজনেই ঈশ্বরের কাছে যাবে| ঈশ্বর যাকে দোষী করবেন সে অপর ব্যক্তিকে সেই জিনিসটির মূল্যের দ্বিগুণ দাস দেবে| 10 “কোনও ব্যক্তি তার কোন প্রাণীর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তার প্রতিবেশীকে অল্প সময়ের জন্য ভার দিতে পারে| সেটা গাধা বা ষাঁড় বা মেষ হতে পারে কিন্তু যদি সেই প্রাণী আহত হয় বা মারা যায বা কারো অলক্ষ্যে চুরি হয়ে যায তাহলে কি করবে? 11 তখন সেই প্রতিবেশীকে প্রভুর নামে শপথ করে বলতে হবে য়ে সে চুরি করে নি| তখন প্রাণীর মালিক সেই শপথ গ্রাহ্য করবে এবং প্রতিবেশীকে সেই মৃত প্রাণীর জন্য কোন জরিমানা দিতে হবে না| 12 কিন্তু যদি সেই প্রতিবেশী চুরি করে থাকে তবে তাকে জরিমানা দিতে হবে| 13 যদি কোন বন্য জন্তু প্রাণীটিকে মেরে ফেলে তবে তার দেহ প্রমাণ হিসেবে দেখাতে হবে| তাহলে প্রতিবেশীকে জরিমানা দিতে হবে না| 14 “যদি কোনও ব্যক্তি তার প্রতিবেশীর কাছ থেকে ধার নেয় তবে সে তার জন্য দায়ী থাকবে| যদি কোন প্রানী আহত হয় বা মারা যায তবে প্রতিবেশী প্রানীর মালিককে জরিমানা দেবে| প্রতিবেশীই দায়ী কারণ মালিক সেখানে উপস্থিত ছিল না| 15 কিন্তু যদি প্রানীর মালিক সেখানে উপস্থিত থাকে তাহলে প্রতিবেশীকে জরিমানা দিতে হবে না| যদি প্রতিবেশী প্রানীটিকে ব্যবহারের জন্য টাকা দেয় তাহলে তাকে প্রাণীটি আহত হলে বা মারা গেলে জরিমানা দিতে হবে না| সে ঐ প্রানীটি ব্যবহারের জন্য যা মূল্য দিয়েছে তাই য়থেষ্ট| 16 “যদি, কোনও ব্যক্তি একজন অবাগদত্তা কুমারী মেয়ের সঙ্গে য়ৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয় তাহলে সে অবশ্যই তার পিতাকে পুরো য়ৌতুক দেবে এবং তাকে বিয়ে করবে| 17 যদি তার পিতা মেয়েটিকে সেই ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দিতে নাও চান তাহলেও তাকে মেয়েটির জন্য পুরো অর্থ দিতে হবে| 18 “যদি কোন স্ত্রীলোক দুষ্ট কূহক করে তবে তাকে বাঁচতে দিও না| 19 “কোন মানুষ যদি কোন পশুর সঙ্গে য়ৌন সম্পর্ক করে তবে তাকে অবশ্যই হত্যা করবে| 20 “যদি কোন ব্যক্তি মূর্ত্তিকে নৈবেদ্য দেয় তবে তাকে হত্যা করবে| তোমরা অবশ্যই কেবলমাত্র প্রভুর কাছেই নৈবেদ্য উত্সর্গ করবে| 21 “মনে রাখবে তোমরা ইতিপূর্বে মিশরে বিদেশী ছিলে তাই তোমরা কোন বিদেশীকে ঠকাবে না বা আঘাত করবে না| 22 “কোন বিধবা বা অনাথ শিশুর কখনও কোনও ক্ষতি করো না| 23 যদি তুমি ঐসব বিধবা ও অনাথদের নির্য়াতন কর তাহলে আমি তাদের দুর্দশার কথা জেনে যাব| 24 এতে আমি রেগে গিয়ে তোমাকে হত্যা করব, যার ফলে তোমার স্ত্রী বিধবা এবং তোমার সন্তানরা অনাথ হবে| 25 “যদি আমার লোকদের মধ্যে কেউ দরিদ্র হয় এবং তাকে তুমি কিছু টাকা ধার দাও, তাহলে ঐ টাকার ওপর কোন সুদ দাবী করো না অথবা তাকে সুদ দিতে বাধ্য করো না| সুদ নিয়ে য়ে টাকা দেয় তার মতো ব্যবহার করো না| 26 যদি কোনও ব্যক্তি তোমার কাছে ধার শোধ করার প্রমাণ হিসেবে তার গায়ের শীতবস্ত্র বন্ধক রাখে তবে তুমি সুর্য়াস্তের আগে তাকে সেটা ফিরিযে দেবে| 27 যদি তার শীতবস্ত্র না থাকে তবে সে শীতে কষ্ট পাবে এবং তার কান্না আমি শুনতে পাবো কারণ আমি দয়ালু| 28 “ঈশ্বর বা জনগণের নেতাদের কখনও অভিশাপ দিও না| 29 “ফসল কাটার সময় প্রথম শস্যের দানা ও প্রথম ফলের রস বছরের শেষ পর্য়ন্ত অপেক্ষা না করেই আমাকে দেবে|“তোমাদের প্রথম সন্তানকে আমার কাছে উত্সর্গ করবে| 30 তোমাদের প্রথমজাত গরু বা মেষও আমাকে দেবে| প্রথম নবজাতককে তার মাযের কাছে সাত দিন রেখে অষ্টম দিনে আমাকে দিয়ে দেবে| 31 “তোমরা আমার বিশেষ লোক, কোন বন্য প্রাণীর মেরে ফেলা পশুর মাংস খাবে না| সেই মাংস কুকুরকে খেতে দেবে|
1 “অন্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অপবাদ রটিও না| যদি তুমি আদালতে সাক্ষী দিতে যাও তাহলে একজন খারাপ লোককে সাহায্যের জন্য মিথ্যা সাক্ষ্য দিও না| 2 “সবাই যা করছে তুমিও তাই করতে য়েও না| যদি একটি গোষ্ঠীর মানুষ অন্যায় করে তাহলে তুমিও তাদের দলে গিয়ে ভিড়ে য়েও না, বরং তুমি তাদের ইন্ধন না জুগিয়ে যা সঠিক এবং ন্যায্য তাই করো| 3 “কোন মামলা-মকদ্দমায় কোন দরিদ্র লোককে তোমার বিশেষ অনুগ্রহ করা অবশ্যই উচিত্ নয়| 4 “যদি কোনও ব্যক্তির বলদ অথবা গাধা হারিয়ে যায় আর তা যদি তুমি খুঁজে পাও তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তুমি হারিযে যাওয়া বলদ বা গাধাটিকে তার মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেবে| এমনকি সে যদি তোমার শত্রু হয় তাহলেও তুমি এটাই করবে| 5 “যদি কোন মালবাহী পশু মালের ভারে আর চলতে না পারার মতো অবস্থায় পৌঁছে যায তাহলে তুমি সেই পশুটির ভার লাঘব করতে সচেষ্ট হবে| সেই পশুটি যদি তোমার শত্রুও হয় তাহলেও তুমি তা করবে| 6 “কোনও দরিদ্রের সঙ্গে কোনরকম অন্যায় হতে দিও না| সাধারণ মানুষদের মতোই একই বিধানে সেই দরিদ্রের বিচার হওয়া উচিত| 7 “কাউকে দোষী হিসেবে চিহ্নিত করার আগে সচেতন থেকো| কারুর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিও না| কোনও নির্দোষ মানুষকে শাস্তি পেতে দেখলে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাবে| য়ে একজন নির্দোষ মানুষকে হত্যা করে সে একজন পাপী এবং আমি কখনই তাকে ক্ষমা করব না| 8 “যদি কেউ তোমাকে তার অন্যায় কাজকর্মের সঙ্গী হবার জন্য ঘুষ দিতে চায় তাহলে তুমি সেই ব্যক্তির প্রস্তাব গ্রহণ করবে না| কারণ ঘুষের অর্থ সত্য়কে দেখার দৃষ্টি ঢেকে দেয় এবং এই ধরণের ঘুষের অর্থ ভাল মানুষদের মিথ্যা বলতে প্রলুদ্ধ করে| 9 “কোনও বিদেশীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে না কারণ এক সময় তোমরা যখন মিশরে ছিলে তোমরাও তখন সে দেশে বিদেশী হিসেবেই বাস করতে| 10 “ছয় বছর ধরে জমিতে চাষ করো, বীজ বোনো, ফসল ফলাও| 11 কিন্তু সপ্তম বছরে আর নিজের জমিকে চাষের জন্য ব্যবহার করবে না| সপ্তম বছরটি হবে জমির বিশেষ বিশ্রামের সময়| তাই জমিতে সে বছর আর কোনও চাষ করবে না| তবু যদি সেই জমিতে কোনও ফসল ফলে তাহলে সেই ফসল গরীব মানুষদের দিয়ে দিতে হবে এবং বাকী যা পড়ে থাকবে তা খেতে দেবে বন্য প্রানীদের| তোমাদের দ্রাক্ষাক্ষেত ও জলপাই গাছগুলির ক্ষেত্রেও একই নিয়ম খাটাবে| 12 “সপ্তাহে ছদিন কাজ করার পর সপ্তম দিনটি ছুটির দিন হিসাবে ঘোষণা করো| ছুটির দিন শুধু বিশ্রামের জন্য তুলে রাখবে| তুমি অবশ্যই তোমার ক্রীতদাসদের এবং বিদেশীদের এবং এমন কি তোমার গৃহপালিত ষাঁড় এবং গাধাদের সাময়িক অবকাশ দেবে| 13 “এই সমস্ত নিয়মগুলো তুমি সাবধানে মেনে চলবে| অন্য দেবতাদের নামও উচ্চারণ করো না; তোমার মুখে য়েন ওগুলো না শুনতে পাওয়া যায| 14 “তোমাদের জন্য বছরে তিনটি বিশেষ ছুটির দিন থাকবে| তোমাদের আমাকে উপাসনার জন্য নির্দিষ্ট স্থানে আসতে হবে| 15 প্রথম ছুটির দিনটি হবে খামিরবিহীন রুটির উত্সব| আমার নির্দেশ মতো তা পালন করা হবে| এই সময় তোমরা য়ে রুটি খাবে তা হবে খামিরবিহীন| সাত দিন এই ভাবে চলবে| তোমরা এই নির্দেশ পালন করবে আবীব মাসে| কারণ এই সময়ই তোমরা মিশর থেকে ফিরে এসেছিলে| এই আবীব মাসে তোমরা প্রত্যেকে আমাকে উত্সর্গ করার জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসবে| 16 “দ্বিতীয় ছুটির দিনটি হবে ফসল কাটার উত্সব| গ্রীষ্মের প্রথম দিকে এই দ্বিতীয় ছুটির দিন হবে| সে সময় তোমরা ক্ষেতের ফসল কাটবে|“তৃতীয় ছুটির দিনটি হবে ফসল তোলার উত্সব| বছরের শেষে যখন তোমরা জমি থেকে সব শস্য ঘরে তুলবে তখনই এই উত্সব পালিত হবে| 17 “সুতরাং প্রত্যেক বছরে তিনদিন সকলে সেই নির্দিষ্ট বিশেষ স্থানে জড়ো হয়ে তোমাদের প্রভুর সঙ্গে কাটাবে| 18 “যখন তোমরা পশু বলি দিয়ে তার রক্ত প্রভুর উদ্দেশ্যে উত্সর্গ করবে তখন আর খামির দেওয়া রুটি উত্সর্গ করবে না| এবং ঐ বলির মাংস তোমরা একদিনে খেয়ে নেবে, পরের দিনের জন্য জমিয়ে রাখবে না| 19 “ক্ষেত থেকে ফসল তোলার সময় সব ফসল তুলে প্রথমে নিয়ে আসবে তোমাদের ঈশ্বরের গৃহে|“কোন ছাগ শিশুকে তার মাযের দুধে ফুটিয়ো না|” 20 ঈশ্বর বললেন, “দেখ তোমাদের জন্য আমি এক দূত জন পাঠাচ্ছি| আমি তোমাদের জন্য য়ে স্থান নির্বাচন করেছি তোমাদের সেইখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমার পাঠানো দূত তোমাদের নেতৃত্ব দেবে| ঐ দূত তোমাদের রক্ষা করবে| 21 ঐ দূতকে অমান্য না করে তাকে অনুসরণ করো| তার বিরুদ্ধে কখনও অসন্তোষ প্রকাশ করো না| ঐ দূতের শরীরে আমার শক্তি আছে; সুতরাং সে কোনরকম অন্যায় বরদাস্ত করবে না| 22 তোমরা তার সব কথা মেনে চলবে| আমার সব কথাও অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে| যদি তোমরা তা করো তাহলে আমি তোমাদের সঙ্গে থাকব| তোমাদের শত্রুদের বিরোধিতা করব এবং যারা তোমার বিরুদ্ধে যাবে আমি তাদেরও শত্রুতে পরিণত হব|” 23 ঈশ্বর বললেন, “আমার প্রেরিত দূত তোমাদের আগে আগে যাবে| সে তোমাদের নেতৃত্ব দেবে - ইমোরীয, হিত্তীয়, পরিষীয়, কনানীয, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দের বিরুদ্ধে| কিন্তু আমি তাদের প্রত্যেককে পরাজিত করব| 24 “তাদের দেবতাদের তোমরা পূজা করবে না| তোমরা সেইসব দেবতাদের কাছে নতজানু হবে না| তাদের জীবনযাপনের সঙ্গে তোমরা নিজেদের জড়াবে না| তোমরা তাদের মূর্তিদের ধ্বংস করবে এবং তোমরা তাদের দেবতাকে মনে রাখার সমস্ত স্তম্ভ ভেঙ্গে ফেলবে| 25 তোমরা সর্বদা তোমাদের প্রভুর সেবা অবশ্যই করবে| আমি তোমাদের রুটি ও জলকে আশীর্বাদ করব| আমি তোমাদের কাছ থেকে সমস্ত রোগ সরিয়ে নেব| 26 তোমাদের মহিলারা সন্তান ধারণে সক্ষম হয়ে উঠবে| তাদের কেউই সন্তান প্রসবকালে মারা যাবে না| আমি তোমাদের দীর্ঘ জীবন দেব| 27 “তোমরা যখন তোমাদের শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করবে তখন আমি তোমাদের শক্তি জোগাবো| তোমাদের শত্রুদের যাতে তোমরা হারাতে পারো তাতে আমি সাহায্য করব| তোমাদের শত্রুরা হতচকিত হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালাতে শুরু করবে| 28 আমি তোমাদের আগে একটা ভীমরুলপাঠাব| সেই তোমাদের শত্রুদের জোর করে তাড়িয়ে দেবে| হিব্বীয়, কনানীয় ও হিত্তীয়রা তোমাদের দেশ ত্যাগ করে পালাবে| 29 কিন্তু আমি শীঘ্রই ঐ সমস্ত মানুষগুলোকে জোর করে তোমাদের দেশ থেকে তাড়াব না| অন্তত এক বছর আমি ওদের তাড়াব না| কারণ তাহলে খুব তাড়াতাড়ি তোমাদের দেশ জনমানব শূন্য হয়ে পড়বে| ফলে সে সময় বন্য প্রানীরা ঢুকে পড়ে বংশবৃদ্ধির দ্বারা দেশটাকে দখল করে নেবে এবং তখন সেই সমস্ত প্রানীরাই তোমাদের সমস্যা সৃষ্টি করবে| 30 তাই আমি খুব ধীরে ধীরে ঐ মানুষগুলোকে তোমাদের দেশ থেকে তাড়াব| তোমরাও ক্রমশঃ দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে থাকবে আর আমিও ওদের একে একে তাড়াতে থাকব| 31 “সূফ সাগর থেকে ফরাত্ নদী পর্য়ন্ত সমস্ত জমি তোমাদের দিয়ে দেব| তোমাদের দেশের পশ্চিম সীমান্ত হবে পলেষ্টীয়দের সমুদ্র পর্য়ন্ত| আর পূর্ব দিকের সীমান্ত হবে আরব দেশের মরুভূমি| এই সীমানার মধ্যে বসবাসকারী প্রত্যেককে আমি তোমাদের দিয়েই পরাজিত করে তাড়িয়ে ছাড়ব| 32 “তোমরা ঐ সমস্ত লোকদের সঙ্গে অথবা তাদের দেবতাদের সঙ্গে কোনরকম চুক্তি করবে না| 33 তাদের তোমাদের দেশে একদম থাকতে দেবে না| যদি থাকতে দাও তাহলে তাদের ফাঁদে পা দিয়ে তোমরা আমার বিরুদ্ধে পাপ করবে এবং তোমরা ঐ লোকদের দেবতাদের পূজা করতে বাধ্য হবে|”
1 প্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি, হারোণ, নাদব, অবীহূ এবং ইস্রায়েলের 70 জন প্রবীণ নেতৃবৃন্দ পর্বতের ওপর উঠে এসে দূর থেকে আমার উপাসনা করো| 2 কিন্তু মোশি একাই প্রভুর কাছে আসবে| অন্যরা য়েন প্রভুর কাছে না যায| এমনকি বাকী লোকরা মোশির সঙ্গে পর্বতে উঠবে না|” 3 প্রভুর সমস্ত নির্দেশ ও সমস্ত বিধি মোশি লোকদের বলল| তখন সবাই রাজী হল এবং বলল, “আমরা প্রভুর সমস্ত নির্দেশ মেনে চলব|” 4 তখন মোশি একটি খাতায় প্রভুর সমস্ত নির্দেশ লিখে রাখল| পরদিন সকালে সে জেগে উঠল এবং পর্বতের পাদদেশে একটি বেদী এবং ইস্রায়েলের দ্বাদশ পরিবারগোষ্ঠী অনুসারে বারোটি স্তম্ভ নির্মাণ করল| 5 তারপর মোশি ইস্রায়েলের যুবকদের পাঠাল প্রভুর বেদীতে কিছু উত্সর্গের জন্য| এই যুবকরা হোমবলি ও মঙ্গল নৈবেদ্য স্বরূপ প্রভুর কাছে ষাঁড়গুলি উত্সর্গ করল| 6 পশু বলির সময় মোশি পাত্রগুলিতে অর্ধেক রক্ত রাখল এবং বাকী রক্ত বেদীর ওপর ঢেলে দিল| 7 মোশি তখন খাতাটি নিয়ে তাতে লেখা চুক্তিগুলি চেঁচিয়ে পড়তে থাকল| লোকরা তা শুনে বলে উঠল, “আমরা প্রভুর দেওয়া বিধিগুলি শুনেছি এবং আমরা তা মানতে রাজি আছি|” 8 তখন মোশি লোকদের মাঝে উঠে দাঁড়াল এবং ঐ পাত্রগুলিতে রাখা রক্ত ছিটিয়ে দিল| সে বলল, “দেখ, এই হচ্ছে সেই রক্ত যা তোমাদের সঙ্গে প্রভুর চুক্তির সূচনা করে| চুক্তিটিকে ব্যাখ্যা করার জন্যই ঈশ্বর তোমাদের জন্য বিধি প্রণযন করেছেন|” 9 এরপর মোশি, হারোণ, নাদব, অবীহূ এবং ইস্রায়েলের 70 জন প্রবীণ নেতৃবৃন্দ সেই পর্বতে চড়ল| 10 পর্বতের ওপর তারা ইস্রায়েলের ঈশ্বরকে দেখতে পেল| ঈশ্বর নীল আকাশের মতো স্বচ্ছ নীলকান্ত মণির রাস্তার ওপরে দাঁড়িয়ে ছিলেন| 11 ইস্রায়েলের প্রবীণদের প্রত্যেকে ঈশ্বরকে দেখতে পেল| কিন্তু ঈশ্বর তাদের ধ্বংস করেন নি|পরিবর্তে তারা সবাই একত্রে ভোজন ও পান করল| 12 প্রভু মোশিকে বললেন, “পর্বতের ওপর আমার কাছে এসো এবং ওখানে থাকো| আমি লোকদের জন্য আমার শিক্ষামালা ও বিধিগুলি দুটো প্রস্তর ফলকে লিখে রেখেছি| আমি এই প্রস্তর ফলকগুলি তোমাকে দিতে চাই|” 13 তখন মোশি ও তার পরিচারক যিহোশূয় ঈশ্বরের কাছে যাওয়ার জন্য পর্বতে চড়লো| 14 মোশি প্রবীণ নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে বলল, “এখানে তোমরা আমাদের দুজনের জন্য অপেক্ষা করো| আমরা তোমাদের কাছে ফিরে আসব| আমি যাবার পর তোমাদের কারো কোন সমস্যা হলে হারোণ ও হূরের কাছে যাবে|” 15 মোশি যখন পর্বতে উঠল তখন পর্বত মেঘে আচ্ছন্ন ছিল| 16 সীনয় পর্বতে প্রভুর মহিমা স্থায়ী হল| ছয় দিন পর্বত মেঘে ঢেকে রইল এবং সপ্তম দিনে ঈশ্বর মেঘের ভেতর থেকে মোশির সঙ্গে কথা বললেন| 17 আর তখন ইস্রায়েলের লোকরা প্রভুর মহিমা দেখতে পেল| য়েন এক আগুনের গোলা জ্বলছিল পর্বতের চূড়ায়| 18 তখন মোশি মেঘের মধ্যে দিয়েই পর্বতের চূড়ায় উঠতে লাগল| মোশি ঐ পর্বতে 40 দিন ও 40 রাত কাটিযেছিল|
1 প্রভু মোশিকে বললেন, 2 “ইস্রায়েলের লোকদের বলো আমার জন্য উপহার নিয়ে আসতে| তারা ব্যক্তিগতভাবে নিজেদের মনে মনে ঠিক করে নেবে তারা আমাকে কি দিতে চায| আমার হয়ে তুমি সেই উপহারগুলি গ্রহণ করো| 3 এই হল তার ফর্দ যা যা তুমি তাদের থেকে গ্রহণ করবে: সোনা, রূপো এবং পিতল, 4 নীল, বেগুনী এবং লাল সূতো ও মসৃণ শনের কাপড় এবং ছাগলের লোম, 5 মেষের লাল রঙের চামড়া, মসৃণ চামড়া, বাবলা কাঠ, 6 প্রদীপের তেল, অভিষেকের তেল, সুগন্ধি মশলা, সুগন্ধি ধূপ তৈরির মশলা| 7 এগুলি ছাড়াও অলীক মণি এবং অন্যান্য মনিমাণিক্য য়েগুলো যাজক দ্বারা পরিহিত এফোদ এবং বক্ষাবরণের ওপর ব্যবহৃত হবে তা গ্রহণ করো|” 8 ঈশ্বর আরও বললেন, “লোকরা আমার জন্য একটি পবিত্র স্থান তৈরী করবে| তখন আমি তাদের মধ্যে থাকতে পারব| 9 আমি তোমাদের পবিত্র তাঁবু এবং তার আসবাবপত্রাদি কেমন দেখতে হওয়া উচিত্ দেখাব| এবং আমি য়েমনটি দেখাব ঠিক তেমনি একটি তাঁবু তৈরী করবে| 10 “একটি বিশেষ সিন্দুক তৈরী করবে| সিন্দুকটি তোমরা বাবলা কাঠ দিয়ে তৈরী করবে| পবিত্র সিন্দুকটির দৈর্য়্ঘ হবে 2.5 হাত, প্রস্থ 1.5 হাত এবং উচ্চতা 1.5 হাত| 11 পুরো সিন্দুকটির ভেতরে বাইরে সোনা দিয়ে মুড়ে দেবে| তোমরা অবশ্যই তার চারধারে সোনার ঝালর দেবে| 12 তোমরা সিন্দুকটিকে বয়ে নেওয়ার জন্য চারটি সোনার আংটা সিন্দুকটির চারদিকে লাগাবে| দুদিকে দুটো করে সোনার কড়া বা আংটা থাকবে| 13 এরপর সিন্দুকটিকে বহন করার জন্য দুটো বাবলা কাঠের দণ্ড বানাবে| এই দণ্ডটিও সোনা দিয়ে মোড়া থাকবে| 14 এরপর সিন্দুকটির দু প্রান্তের আংটার মধ্যে দণ্ডগুলি ঢোকাবে এবং সিন্দুকটিকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে ব্যবহার করবে| 15 এই দণ্ডগুলি অবশ্যই সিন্দুকটির হাতার ভেতরদিকে দৃঢ় হয়ে থাকবে এবং সেগুলো কখনও খুলে নেওয়া হবে না|” 16 ঈশ্বর বললেন, “আমি তোমাদের চুক্তিটি দেব| তা ঐ সিন্দুকে রেখে দেবে| 17 আড়াই হাত লম্বা ও দেড় হাত চওড়া একটি সোনার আচ্ছাদন তৈরী করবে| 18 “পেটানো সোনা দিয়ে দুইটি করূব দূত বানাও এবং সোনার আচ্ছাদনের দুই প্রান্তে তাদের রাখো| 19 আচ্ছাদনের দুই কোণায তাদের রেখে একই আচ্ছাদনের নীচে ওদের স্থাপন করবে| এরপর দূতদের এবং আচ্ছাদনটিকে একটি অখণ্ড বস্তু করবার জন্য তাদের যুক্ত করো| 20 দূতদের ডানা দুটিকে অবশ্যই আকাশের দিকে বিস্তৃত করে দিতে হবে| এবার ডানা সমেত দূতের মূর্তিকে সিন্দুকে এমনভাবে রাখবে য়েন দুজনেই মুখোমুখি আচ্ছাদনের দিকে তাকিযে থাকে| 21 “আমি তোমাদের চুক্তিটি দেবে এবং তোমরা তা সিন্দুকে রাখবে এবং সিন্দুকের ওপর ঐ ঢাকনাটি দিয়ে দেবে| 22 আমি যখন তোমাদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করব তখন আমি পরস্পর মুখোমুখি ঐ দূতদের মাঝখানে আচ্ছাদনের ওপর থেকে কথা বলব| ইস্রায়েলবাসীকে দেবার জন্য আমি আমার সমস্ত আদেশসমূহ তোমাদের দেব| 23 “বাবলা কাঠের একটি টেবিল তৈরী করবে| টেবিলটি দৈর্য়্ঘে হবে 2 হাত, প্রস্থে 1 হাত এবং উচ্চতায় 1.5 হাত| 24 টেবিলটি খাঁটি সোনা দিয়ে মোড়া থাকবে এবং টেবিলের চারদিকে সোনার নিকেল করা থাকবে| 25 তারপর টেবিলের চারিদিকে 1 হাত চওড়া একটি কাঠের কাঠামো তৈরী করবে এবং ঐ কাঠের কাঠামোতে সোনার নিকেল করা থাকবে| 26 টেবিলের চার পায়ায চারটি সোনার কড়া তৈরী করে রাখবে| 27 পায়ায সোনার কড়া চারটি টেবিলের ওপর রাখা কাঠামো বরাবর সোজা তুলে আনবে| এবার চারটি কড়ায দণ্ড ঢুকিয়ে টেবিলটিকে বহন করা যাবে| 28 বাবলা কাঠেরই দণ্ড তৈরী করে য়েগুলি সোনারপাতে মুড়ে টেবিলটিকে বহন করবে| 29 সোনার থালা, চামচ, মগ ও পাত্র তৈরী করবে| মগ ও পাত্র পেয নৈবেদ্যর জন্য ব্যবহার করা হবে| 30 টেবিলের ওপর আমার জন্য বিশেষ রুটি রাখবে| এবং তা য়েন সর্বক্ষণই আমার সামনে রাখা থাকে| 31 “এরপর একটি দীপদান বানাবে| খাঁটি সোনাকে পিটিযে একটি সুদৃশ্য দীপদান তৈরী করবে| এই দীপদানের কাণ্ড, শাখা, গোলাধার প্রভৃতি সব অখণ্ড হবে| 32 “এই দীপদানে অবশ্যই ছয়টি শাখা থাকতে হবে| তিনটি শাখা একদিকে প্রসারিত থাকবে এবং অন্যদিকে থাকবে তিনটি শাখা| 33 প্রত্যেক শাখায় তিনটি ফুল থাকবে| ঐ দীপদানের ফুলগুলি বাদাম ফুলের মতো হবে এবং তাতে মুকুলও থাকবে| 34 দীপদানের জন্য আরও চারটে ফুল তৈরী করবে| এই ফুলগুলি হবে বাদাম ফুলের মতো, সঙ্গে মুকুলও থাকবে. 35 দীপদানের ছয়টি শাখা থাকবে| হাতলের বা দীপদানের কাণ্ডের দুদিক থেকে যথাক্রমে তিনটি করে শাখা বেরিয়ে আসবে| কাণ্ডের যেখানে শাখাগুলি মিশছে সেখানে ফুল ও মুকুল তৈরী করে লাগাবে| 36 পুরো দীপদানটি, এবং শাখা ফুলগুলিও খাঁটি সোনার হওয়া চাই| এবং পুরোটাই একছাঁচে অর্থাত্ অখণ্ড হতে হবে| 37 এরপর সাতটি প্রদীপ বানাবে দীপদানে রাখার জন্য| এই প্রদীপগুলিই দীপদানের সামনে আলোকিত করে রাখবে| 38 প্রদীপের চিমটাটিও সোনার হওয়া চাই| য়ে থালাটিতে দীপদানটি রাখা হবে সেটিকেও সোনার হতে হবে| 39 ঐ দীপদান ও দীপদানের আনুষঙ্গিক অংশ তৈরী করতে অবশ্যই 75 পাউণ্ড সোনা ব্যবহার করতে হবে| 40 পর্বতের ওপর আমি তোমাদের যা যা দেখিয়েছি তা তৈরী করার সময় সর্বদা সতর্ক থেকো, য়েন কোন ভুল না হয়|”
1 প্রভু মোশিকে বললেন, “পবিত্র তাঁবুটি তৈরী করবে 10টি পর্দা দিয়ে| পর্দাগুলি তৈরী হবে মসৃণ শনের কাপড়ে এবং নীল, বেগুনী ও লাল সুতোয| একজন দক্ষ কারিগর পর্দাটি বুনবে এবং তাতে সে করূব দূতের চিত্র সেলাই করবে| 2 প্রত্যেকটি পর্দা একই রকম আকৃতির তৈরী করবে| প্রত্যেকটি পর্দা দৈর্য়্ঘে 28 হাত ও প্রস্থে 4 হাত হবে| 3 এক ভাগ করবার জন্য 5টি পর্দাকে যুক্ত করো| পর্দাগুলি সমান দু ভাগে ভাগ করবে| 4 এক ভাগের শেষ পর্দাটির ধার জুড়ে ফাঁস তৈরী করবার জন্য নীল কাপড় ব্যবহার কর| 5 দুই ভাগের শেষ পর্দা দুটিতে 50টি নীল কাপড়ের ঝালর থাকবে| 6 পর্দাগুলিকে একত্রে যুক্ত করবার জন্য 50টি সোনার আংটা তৈরী কর| এটা পবিত্র তাঁবুটিকে একসঙ্গে যুক্ত করবে একটি অখণ্ড তাঁবু করবার জন্য| 7 “একটি তাঁবু তৈরী করবার জন্য ছাগলের লোম দিয়ে তৈরী এগারোটি পর্দা ব্যবহার করো| এই তাঁবুটি হবে আগের পবিত্র তাঁবুর আচ্ছাদন| 8 এই সমস্ত পর্দাগুলি অবশ্যই একই আকৃতির হবে| প্রত্যেকটি পর্দা হবে 30 হাত লম্বা এবং 4 হাত চওড়া| 9 এগারোটি পর্দা দুভাগে ভাগ করে এক ভাগে পাঁচটা ও অন্য ভাগে ছয়টি পর্দা রাখবে| পবিত্র তাঁবুর সামনে ষষ্ঠ পর্দাটি ভাঁজ করে রাখবে| 10 প্রতিটি ভাগের শেষে পর্দার নীচে 50টি ফাঁস লাগাও| 11 এবার পর্দাগুলি একত্র করার জন্য 50টি পিতলের আংটা তৈরী করবে এবং একসঙ্গে সেগুলি টাঙ্গাবে| 12 এই তাঁবুর শেষ পর্দাটির অর্ধেক অবশ্যই পবিত্র তাঁবুর পিছন দিকে ঝুলে থাকবে| 13 অন্য দিকেও 1 হাত করে পর্দা পবিত্র তাঁবুর ভূমিদেশ থেকে নীচের দিকে ঝুলে থাকবে| এইভাবে পবিত্র তাঁবুকে পরবর্তী তাঁবুটি চারিদিক থেকে আচ্ছাদনের মতো ঘিরে থাকবে| 14 ভেতরের তাঁবু থেকে বাইরের তাঁবুতে যাওয়ার জন্য দুখানি চামড়ার ছাদ তৈরী করবে| একটি হবে পুং মেষের পাকা চামড়ায তৈরী এবং অন্যটি হবে উত্কৃষ্ট চামড়ার| 15 “পবিত্র তাঁবুটিকে খাড়া করে রাখার জন্য বাবলা কাঠের একটি কাঠামো তৈরী করবে| 16 ঐ কাঠামোটি হবে 10 হাত উঁচু ও 1.5 হাত চওড়া| 17 প্রত্যেকটি কাঠামোর নীচে দুটো পায়া থাকবে| পবিত্র তাঁবুর প্রত্যেকটি কাঠামো একই আকারের হবে| 18 পবিত্র তাঁবুর দক্ষিণ দিকের জন্য 20টি কাঠামো বানাবে| 19 কাঠামোগুলির নীচে লাগানোর জন্য রূপো দিয়ে 40টি ভূমিমূল তৈরী করবে| প্রত্যেকটি কাঠামোর গোড়ায দুটি করে রূপোর পায়া বা ভূমিমূল থাকবে| 20 উত্তর দিকের জন্য আরও 20টি কাঠামো তৈরী করবে| 21 একই রকম ভাবে কুড়িটি কাঠামোর দুটি করে পায়ার জন্য আরও 40টি রূপোর পায়া তৈরী করে লাগাবে| 22 পবিত্র তাঁবুর পিছন দিক অর্থাত্ পশ্চিম দিকের জন্য আরও ছয়খানি কাঠামো বানাবে| 23 পবিত্র তাঁবুর পিছন দিকে দুই কোণের জন্য দুখানি কাঠামো বানাবে| 24 দুই কোণার কাঠামো দুখানি পরস্পরের সঙ্গে নীচের দিকে যুক্ত থাকবে| ওপরে একটি কড়া এই দুখানি কাঠামোকে একত্রে ধরে রাখবে| দু দিকের কোণাতেই একই রকম হবে| 25 এই রকম মোট আটটি কাঠামো থাকবে এবং 16টি রূপোর পায়া থাকবে| 26 “পবিত্র তাঁবুর কাঠামোগুলি জোড়া লাগানোর জন্য বাবলা কাঠ ব্যবহার করবে| পবিত্র তাঁবুর প্রথম দিকে পাঁচটি জোড়া তক্তা থাকবে| 27 অন্যদিকেও পাঁচটি তক্তা জোড়া দেওয়া থাকবে| এবং পিছনদিকেও পাঁচটি জোড়া তক্তা থাকবে| 28 তক্তাগুলির মাঝখানে একটি কেন্দ্রস্থিত হুড়কো লাগাতে হবে| 29 “কাঠামোগুলি তারপর সোনা দিয়ে মুড়ে দেবে| তক্তাগুলি আটকানোর জন্য আংটা ব্যবহার করবে| আংটাগুলিও অবশ্যই সোনার হবে| কীলকগুলিকে সোনা দিয়ে ঢেকে দাও| 30 এইভাবে পর্বতের ওপর দেখানো পরিকল্পনা অনুযায়ীঅবশ্যই তোমাদের পবিত্র তাঁবুটি তৈরী করতে হবে| 31 “পবিত্র তাঁবুর ভেতর বিভাজনের জন্য মসৃণ শনের কাপড়ের পর্দা বানাবে| ঐ পর্দার ওপর অবশ্যই করূব দূতের চেহারা থাকতে হবে| লাল, নীল, বেগুনী সূতোর কারুকার্য়ে তা ফুটে উঠবে| 32 বাবলা কাঠের চারটি খুঁটি তৈরী করে সোনা দিয়ে তাও মুড়ে দেবে| চারটে খুঁটিতে সোনার আংটা লাগাবে| খুঁটিরে নীচে রূপোর পায়া লাগাবে| এবার পর্দাটি সোনার আংটায লাগিয়ে টাঙ্গিযে দেবে খুঁটির সঙ্গে| 33 পর্দাটি সোনার আংটাগুলির নীচে টাঙিযে দাও| তারপর ঠিক পর্দার পিছনে সাক্ষ্যসিন্দুক রাখবে| টাঙানো পর্দা দিয়ে পবিত্র স্থান এবং অতি পবিত্র স্থানের মধ্যে বিভাজন করবে| 34 অতি পবিত্র স্থান হিসাবে সাক্ষ্যসিন্দুকের ওপর একটি আবরণ রাখবে| 35 “পবিত্র স্থানে পর্দার উল্টো দিকে নির্মিত বিশেষ টেবিলটি রাখবে| টেবিলটি বসানো হবে পবিত্র তাঁবুর উত্তর দিকে| এবার দীপদানটিকে বসাবে দক্ষিণ দিকে টেবিলের থেকে খানিকটা দূরে| 36 “এবারে একটি পর্দা দিয়ে পবিত্র তাঁবুর প্রবেশ পথ ঢেকে দেবে| পর্দাটি বানাবে লাল, নীল, বেগুনী সুতো ও মসৃণ শনের কাপড় দিয়ে| এবং তাতে চিত্র ফুটিযে তুলবে| 37 এই পর্দা টাঙানোর জন্য সোনার আংটা বানাবে| এবং বাবলা কাঠের পাঁচটি খুঁটি বানাবে| সেগুলিও সোনার পাতে মোড়া থাকবে| পাঁচটি খুঁটির পায়া পিতল দিয়ে বানাবে|”
1 প্রভু মোশিকে বললেন, “বাবলা কাঠের একটি বেদী বানাবে| বেদীখানা হবে চৌকো আকারের| বেদীটি উচ্চতায় হবে 3 হাত, লম্বায হবে 5 হাত এবং চওড়ায হবে 3 হাত| 2 বেদীর চার কোণার প্রত্যেকটির জন্য একটি করে শিখর বানাও এবং প্রত্যেকটি শিখর বেদীর কোনায যুক্ত কর যাতে তারা অখণ্ড হয়| তারপর ওটিকে পিতলের পাত দিয়ে মুড়ে দাও| 3 “বেদীর সমস্ত যন্ত্রপাতি এবং বাসন-কোসন পিতল দিয়ে তৈরী কর| বেদী থেকে ছাই তুলে নেওয়ার জন্য পাত্র, তার বেলচাসমূহ, সিঞ্চনকারী পাত্রসমূহ, আঁকশি এবং উনুন তৈরী কর| ব্যবহারের পর বেদীর হোমবলির ছাই দিয়ে এগুলো পরিষ্কার করবে| 4 বেদীর জন্য ছাকনীর আকারের একটি ঝাঁঝরি রাখবে| ঝাঁঝরির চারকোণার জন্য পিতলের আংটা বানাবে| 5 বেদীর নীচে এই ঝাঁঝরি রাখবে| কিন্তু এর উচ্চতা হবে বেদীর মধ্যভাগ পর্য়ন্ত| 6 “বেদীর জন্য পিতলে মোড়া বাবলা কাঠের খুঁটি ব্যবহার করবে| 7 বেদীর দুপাশে লাগানো আংটার মধ্যে খুঁটি ঢুকিয়ে বেদীকে যেখানে ইচ্ছে বয়ে নিয়ে বেড়াও| 8 খালি ধারগুলিতে কাঠের তক্তা ব্যবহার করে বেদীটি একটি শূন্য সিন্দুকের আকারে বানাও| এবং পর্বতে আমি য়েভাবে দেখালাম ঠিক সেইভাবেই বানাবে| 9 “পবিত্র তাঁবুর জন্যে একটি আদালত চত্বর বানাবে| দক্ষিণ দিকে 100 হাত লম্বা পর্দা দেওয়া দেওয়াল থাকবে| এই পর্দা মসৃণ শনের কাপড়ের তৈরী হওয়া চাই| 10 কুড়িটি খুঁটি এবং খুঁটিগুলোর নীচে 20টি পিতলের ভিত্তি তৈরী কর| আংটা এবং পর্দার দণ্ডগুলি রূপো দিয়ে তৈরী কর| 11 উত্তরদিকেও একইভাবে 100 হাত লম্বা একটি পর্দার দেওয়াল থাকবে| এর জন্য অবশ্যই 20টি খুঁটি ও 20টি পিতলের ভিত্তি থাকবে| এই খুঁটিগুলির জন্য আংটাসমূহ ও পর্দার দণ্ডগুলি হবে রূপোর তৈরী| 12 “আদালত চত্বরের পশ্চিম দিকে 50 হাত লম্বা পর্দা থাকবে| আর এর জন্য চাই দশটি খুঁটি ও পায়া| 13 পূর্ব দিকেও 50 হাত লম্বা পর্দা থাকবে| 14 এই পূর্ব দিকটিই হবে প্রবেশ পথ| প্রবেশ পথের একদিকে থাকবে 15 হাত লম্বা পর্দা| তার জন্যও চাই তিনটি খুঁটি ও পায়া| 15 অন্যদিকেও করতে হবে একই ব্যাপার সেই 15 হাত লম্বা পর্দা ও তার জন্য চাই 3টি খুঁটি ও 3টি পায়া| 16 “আদালত চত্বরের পথটি ঢাকতে বানাবে 20 হাত লম্বা পর্দা| পর্দা তৈরী হবে মিহি ক্ষৌমবস্ত্রের এবং লাল, নীল, বেগুনী ও লাল সুতোর এবং তাতে সুন্দর চিত্র ফুটিযে তুলবে| পর্দাটি টাঙ্গানোর জন্য চারটি খুঁটি ও চারটি পায়া থাকবে| 17 উঠোনের চারিদিকের সমস্ত খুঁটি পর্দার রূপোর দণ্ড দিয়ে যুক্ত হবে| খুঁটির ওপর পর্দা টাঙ্গানোর আংটাগুলি হবে রূপোর এবং খুঁটির নীচে পায়াগুলি হবে পিতলের| 18 আদালত চত্বরটি হবে 100 হাত লম্বা ও 50 হাত চওড়া| আদালত চত্বরের চারিদিকে 5 হাত উচ্চতার টানা পর্দার দেওয়াল থাকবে| পর্দাটি হবে মিহি মসীনা কাপড়ের| খুঁটির নীচের পায়াগুলি হবে পিতলের| 19 পবিত্র তাঁবু তৈরীর যাবতীয় জিনিসপত্র হবে পিতলের| উঠোনের চারিদিকের, পর্দায় ব্যবহারের জন্য কীলকগুলি পিতলের তৈরী হবে| 20 “ইস্রায়েলের লোকদের আদেশ করো, তারা য়েন প্রত্যেক সন্ধ্যায় য়ে প্রদীপ জ্বালানো হবে তার জন্য সব থেকে ভাল জলপাইযের তেল নিয়ে আসে| 21 হারোণ ও তার পুত্রদের কাজ হল প্রতি সন্ধ্যায় প্রভুর সামনে প্রদীপ জ্বালানোর জন্য প্রদীপ তৈরী করে রাখা| আর সাক্ষ্য সিন্দুকের ঘরের বাইরে পর্দা দিয়ে বিভাজন করা অন্য একটি ঘরে বা সমাগম তাঁবুর ঘরে তারা সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্য়ন্ত সর্বদা প্রভুর সামনে প্রদীপ বালিয়ে রাখবে| ইস্রায়েলের লোকরা এবং তাদের পরবর্তী উত্তরপুরুষরা এই চিরস্থায়ী বিধি মেনে চলবে|”
1 প্রভু মোশিকে বললেন, “তোমার ভাই হারোণ ও তার পুত্রগণ নাদব, অবীহূ, ইলীয়াসর এবং ঈথামরকে তোমার কাছে আসতে বলো| তারাই যাজকরূপে ইস্রায়েলের লোকদের হয়ে আমাকে সেবা করবে| 2 “তোমার ভাই হারোণের জন্য একটি বিশেষ ধরণের পোশাক বানাবে| ঐ পোশাক হারোণকে বিশেষ সম্মান ও গৌরব প্রদান দেবে| 3 কযেকজন দক্ষ দর্জি সেই পোশাক তৈরী করবে| আমি সেই দর্জিদের বিশেষ জ্ঞান ও দক্ষতা প্রদান করেছি| সেই দর্জিদের বলো হারোণের জন্য বিশেষ পোশাক তৈরী করতে| এই পোশাকই প্রমাণ করবে সেই যাজক আমাকে বিশেষ ভাবে সেবা করছে| তখন সে আমাকে যাজকের মতোই সেবা করবে| 4 তাদের য়ে পোশাকগুলি বানাতে হবে তা হল এই : একটি বক্ষাবরণ, একটি এফোদ, একটি নীল রঙের পরিচ্ছদ এবং একটি সাদা বোনা বস্ত্র, একটি পাগড়ি এবং একটি কোমর বন্ধনী| এই বিশেষ পোশাক পরিচ্ছদগুলি বানানো হবে হারোণ ও তার পুত্রদের জন্য| এই পোশাক পরার পরেই ওরা আমায যাজক হিসেবে সেবা করতে পারবে| 5 পোশাকগুলিতে ব্যবহার হবে সোনার জরি, মসৃণ মসীনা এবং লাল, নীল, বেগুনী সুতো| 6 “এফোদ বানাতে সোনার জরি, মসৃণ শনের কাপড় ও লাল, নীল, বেগুনী সুতো ব্যবহার করবে| দক্ষতার সঙ্গে অতি যত্নে তা তৈরী করতে হবে| 7 এফোদের প্রতিটি কাঁধে একটি করে কাঁধ পট্টি থাকবে| এফোদের দুই কোণার সঙ্গে কাঁধ পট্টি সংযুক্ত হবে| 8 “এফোদের জন্য কোমর বন্ধনী তৈরীর সময় দর্জীদের সতর্ক থাকতে হবে| এফোদের মতো কোমর বন্ধনীতেও সোনার জরি, মসৃণ শণের কাপড় ও লাল, নীল, বেগুনী সুতো ব্যবহার করা হবে| 9 “দুটো গোমেদমনি নাও এবং তার ওপর ইস্রায়েলের পুত্রদের নাম খোদাই কর| 10 ছয় জনের নাম এক মণিতে ও অন্য ছয় জনের নাম অপর মণিতে খোদাই করবে| নাম খোদাই করার সময় বযস অনুযায়ীবড় থেকে ছোট এইভাবে পর পর সাজাবে| 11 শীলমোহরের মতো নামগুলো খোদাই করে সোনা দিয়ে বাঁধিযে নেবে| 12 এবারে ঐ দুটি মণি এফোদের দুই কাঁধে লাগাবে| হারোণ যখন প্রভুর সামনে দাঁড়াবে তখন সে ইস্রায়েলের পুত্রদের নামের স্মারক হিসেবে ঐ বিশেষ আচ্ছাদনটি পরবে| 13 এফোদের দুই কাঁধে যাতে খোদাই করা মণি দুটি সঠিকভাবে আটকে থাকে তার জন্য খাঁটি সোনা ব্যবহার করবে| 14 খাঁটি সোনার দুটি শিকল তৈরী কর, প্রত্যেকটি দড়ির মত পাকানো এবং তাদের ঐ মণি দুটির সঙ্গে আটকে দাও| 15 “মহাযাজকের জন্য বক্ষাবরণ তৈরী করবে| দক্ষ দর্জিরা এফোদের মতোই য়ত্ন করে বক্ষাবরণ তৈরী করবে| বক্ষাবরণ তৈরী হবে সোনার জরি, মসৃণ মসীনা কাপড় ও লাল, নীল, বেগুনী সুতো দিয়ে| 16 বক্ষাবরণটিকে চারকোণা করবার জন্য অবশ্যই দুবার ভাঁজ করতে হবে| এর দৈর্য়্ঘ হবে 1 বিঘত্ ও প্রস্থ হবে 1 বিঘত্| 17 বক্ষাবরণে চার সারিতে মণিমানিক্য বসাও| প্রথম সারিতে থাকবে চূনী, পীতমণি ও মরকত| 18 দ্বিতীয সারিতে থাকবে পদ্মরাগ, নীলকান্ত ও পান্না| 19 তৃতীয় সারিতে থাকবে পোখরাজ, য়িস্ম ও কটাহেলা| 20 চতুর্থ সারিতে থাকবে বৈদুর্য়্য়, গোমেদ ও সূর্য়্য়কান্ত মণি| এই মণিগুলি নিজের নিজের সারিতে সোনায আঁটা থাকবে| 21 বারোটি মণির ওপর ইস্রায়েলের সন্তানদের নাম আলাদা আলাদা করে খোদাই থাকবে| সীলমোহরের মতো ঐ মণিগুলিতে বারোজনের নাম খোদাই করা থাকবে| 22 “বক্ষাবরণের ওপরের অংশটির জন্য খাঁটি সোনা দিয়ে প্রত্যেকটিকে দড়ির মত পাকিযে শেকল তৈরী কর| 23 দুটো সোনার আংটা লাগানো থাকবে বক্ষাবরণের দুই কোণে| 24 দুটো সোনার চেন বক্ষাবরণের দুপাশের আংটায লাগাবে| 25 পাকানো শেকল দুটির অন্য প্রান্ত এফোদের কাঁধের পট্টিগুলোর সঙ্গে অবশ্যই সামনে দিয়ে জোড়া থাকবে| 26 আরও দুটো সোনার আংটা বানিয়ে বক্ষাবরণের অন্য দুই প্রান্তে লাগাবে| এফোদের পরে বক্ষাবরণের ভিতর ভাগে এই আংটা থাকবে| 27 আরও দুটো সোনার আংটা এফোদের সামনের দিকে কাঁধের পট্টির নীচে লাগাবে| এফোদের কোমর বন্ধনীর ওপরে এই আংটা স্থাপন করতে হবে| 28 বক্ষাবরণ থেকে এফোদ যাতে খসে পড়ে না যায তার জন্য বক্ষাবরণের আংটার সঙ্গে এফোদের আংটা নীল রঙের ফিতে দিয়ে বেঁধে নেবে| এইভাবে বক্ষাবরণ কোমর বন্ধনীর কাছাকাছি থেকে এফোদকেও ধরে রাখতে সক্ষম হবে| 29 “হারোণ পবিত্র স্থানে প্রবেশ করলে তাকে বক্ষাবরণ পরতেই হবে| এইভাবে যখন সে প্রভুর সামনে দাঁড়াবে তখন সে তার বক্ষের ওপর স্মারক হিসেবে ইস্রায়েলের বারোজন সন্তানের নাম পরে থাকবে| 30 আর সেই বক্ষাবরণের অভ্যন্তরে উরীম ও তূম্মীম রাখবে| প্রভুর সামনে গেলে সর্বদা সেগুলি হারোণের হৃদয়ের ওপর থাকবে| এইভাবে হারোণ প্রভুর সামনে ইস্রায়েলের সন্তানদের বিচার প্রতিনিযত নিজের হৃদয়ের ওপর বয়ে নিয়ে বেড়াবে| 31 “এফোদের জন্য একটি সম্পূর্ণরূপে নীল রঙের আলখাল্লা তৈরী করবে| 32 আলখাল্লার মাঝখান দিয়ে মাথা ঢোকানোর জন্য একটি ছিদ্র করবে এবং এই ছিদ্রটির চারধার জুড়ে একটি বোনা কাপড়ের টুকরো সেলাই করে দাও যাতে এটি ছিঁড়ে না যায| এই কাপড় ছিদ্রটির চারদিকে গলাবন্ধনীর কাজ করবে, ফলে তা ছিঁড়ে যাবে না| 33 লাল, নীল, বেগুনী সুতো দিয়ে ডালিমের মতো সুতোর গোলা তৈরী কর এবং আলখাল্লার নীচে ঝুলিয়ে দেবে আর সুতোর বলের মাঝখানে সোনার ছোট ছোট ঘন্টা লাগাবে| 34 পুরো আলখাল্লার নীচের চারিদিকে এই রকম একটা করে সুতোর গোলা ও একটা করে সোনার ঘন্টা লাগানো হবে| 35 যাজকরূপে প্রভুকে সেবা করার সময় হারোণ এই আলখাল্লাটি পরবে| প্রভুর সামনে দাঁড়ানোর জন্য হারোণ পবিত্র স্থানের দিকে এগোলে ঐ ঘন্টাগুলি বাজবে এবং পবিত্র স্থান ছেড়ে বেরনোর সময়ও ঘন্টাগুলি বাজবে| এইভাবে হারোণ কখনও মারা যাবে না| 36 “নির্মল সোনার ফলক বানিয়ে তাতে শীলমোহরের মতো জনগণের উদ্দেশ্যে খোদাই করবে এই কথাগুলি: এটি প্রভুর কাছে উত্সর্গীকৃত| 37 সোনার ফলকটিকে নীল ফিতেতে আবদ্ধ করবে| পাগড়ির ওপর চারিদিকে নীল ফিতে বাঁধা থাকবে| পাগড়ির সামনের দিকে থাকবে সোনার ফলকটি| 38 হারোণ পাগড়ি সমেত ঐ সোনার ফলকটি মাথায় পরবে| আর তা সবসময় হারোণের মাথায় থাকবে| তার ফলে ইস্রায়েলের লোকরা প্রভুকে য়ে সমস্ত উপঢৌকন দেবে হারোণ তা দোষ মুক্ত করে সব কিছু পবিত্র করে তুলবে যাতে সেই সমস্ত উপঢৌকন প্রভু গ্রহণ করতে পারেন| 39 “মসৃণ সাদা মসীনা সুতো দিয়ে আরও একটা আলখাল্লা বুনবে| পাগড়িও বানাবে মসৃণ মসীনা কাপড়ের| চিহ্নিত কোমর বন্ধনী বানাবে| 40 হারোণের পুত্রদের জন্যও গায়ের পোশাক, কোমর বন্ধনী ও পাগড়ি বানাবে| এই পোশাকই তাদের গৌরবান্বিত ও সম্মানিত করবে| 41 এই পোশাকগুলি তোমার ভাই হারোণ ও তার পুত্রদের পরাবে| যাজক হিসেবে অভিষেকের জন্য তাদের গায়ে বিশেষ সুগন্ধি তেল ছেটাবে| এইভাবে তারা পবিত্র হবে এবং প্রভুর সেবা করার য়োগ্য যাজক হয়ে উঠবে| 42 “যাজকদের নগ্নতা ঢাকার জন্য শরীরের ভেতরের পোশাক মসৃণ মসীনা কাপড়ে তৈরী হবে| এই ভেতরের পোশাক তাদের জঙঘা থেকে কোমর পর্য়ন্ত ঢেকে রাখবে| 43 সমাগম তাঁবুতে প্রবেশের সময় হারোণ ও তার পুত্রদের অবশ্যই এই পোশাকগুলি পরাতে হবে| পবিত্র স্থানে প্রভুর সেবার উদ্দেশ্যে বেদীর কাছে আসতে হলে তাদের এই পোশাক পরতে হবে| তারা যদি এই পোশাক না পরে তাহলে তাদের মরতে হবে কারণ তারা অপরাধী| এই পোশাক পরার বিধি হারোণ ও তার পরবর্তী বংশধরদের চিরস্থায়ীভাবে মেনে চলতেই হবে|”
1 প্রভু মোশিকে বললেন, “এখন আমি তোমাকে বলব আমার সেবায বিশেষ যাজক হিসেবে নিয়োগ করার জন্য হারোণ ও তার পুত্রদের কি কি করতে হবে| একটি নির্দোষ ছোট বলদ ও দুটি মেষশাবক জোগাড় করে আনো| 2 তারপর উত্কৃষ্ট মানের গমের আটা থেকে খামিরবিহীন রুটি তৈরী করো এবং একই আটা বা মযদা দিয়ে জলপাইযের তেল মিশিয়ে পিঠে তৈরী করবে| তেলে ভাজা সরু পিঠেও বানাবে| 3 এই রুটি ও পিঠেগুলি ঝুড়িতে ভরবে| এবার এই ঝুড়িটি এবং ষাঁড় ও মেষ দুটি সমাগম তাঁবুতে নিয়ে এসো| 4 “এরপর হারোণ ও তার পুত্রদের সমাগম তাঁবুর দরজায় নিয়ে আসবে| পরিষ্কার জলে তাদের স্নান করাবে| 5 বিশেষভাবে বানানো পোশাকটি হারোণকে পরাবে| তাকে বোনা সাদা পোশাকটি এবং নীল বস্ত্র সমেত এফোদ পরাবে| এফোদের সঙ্গে যুক্ত করবে বক্ষাবরণ| এরপর সুদৃশ্য কোমরবন্ধনী লাগিয়ে দেবে| 6 তার মাথায় পাগড়ি পরাও এবং পাগড়িটি ঘিরে বিশেষ পবিত্র মুকুটটি পরাও| 7 এবার অভিষেকের তেল হারোণের মাথায় ছিটিয়ে দেবে| এইভাবে হারোণ যাজকরূপে অভিষিক্ত হবে| 8 “এরপর হারোণের পুত্রদের ঐ স্থানে নিয়ে এসে সাদা আলখাল্লা পরাবে| 9 তাদের কোমরে বাঁধবে কোমরবন্ধনী| তাদের মাথায় পরাবে শিরোভূষণ| এইভাবে তারা যাজক হিসাবে চিহ্নিত হবে| চিরস্থায়ী অধিকার বিধি অনুযায়ীতারা যাজক পদে উত্তীর্ণ হবে| এইভাবে তুমি হারোণ ও তার পুত্রদের যাজক হিসাবে অভিষিক্ত করবে| 10 “এবার সেই বলদকে সমাগম তাঁবুর সামনে আনো| হারোণ ও তার পুত্ররা সেই বলদের ওপর তাদের হাত রাখবে| 11 সমাগম তাঁবুর প্রবেশপথে ঐ বলদটিকে প্রভুর উপস্থিতিতে বলি দাও| প্রভু তা দেখবেন| 12 সেই বলদ বলির কিছু পরিমাণ রক্ত নাও এবং তোমার আঙ্গুল দিয়ে বেদীর শৃঙ্গগুলির ওপরে ঐ রক্তের প্রলেপ লাগিয়ে দাও| বাকি রক্ত বেদীর নীচে ছড়িয়ে দেবে| 13 এবার বলি দেওয়া সেই বলদের শরীরের সমস্ত চর্বি, য়কৃত্ এবং চর্বি এবং দুটো মুত্রগ্রন্থী ও তার চারপাশের চর্বি জড়ো করে বেদীর ওপর জ্বালাবে| 14 এবার ঐ বলদের মাংস, চামড়া এবং গোবর তাঁবুর বাইরে নিয়ে যাও এবং তা আগুনে পুড়িয়ে দাও| এই পদ্ধতিতে যাজকদের পাপমোচনের হোমবলি হবে| 15 “এবার হারোণ ও তার পুত্রদের বলো একটি মেষের ওপর হাত রাখতে| 16 ঐ মেষটিকে কেটে ফেল| তার এবং বলির রক্ত সংগ্রহ কর এবং ঐ রক্ত বেদীর চারপাশে লাগিয়ে দাও| 17 এরপর মেষটিকে খণ্ড খণ্ড করে কাটো| মেষের অভ্যন্তর ভাগ এবং পা-গুলি ধোও| এই অংশগুলি অন্যান্য অংশের সঙ্গে এবং মাথার সঙ্গে রাখো| 18 এবার সেগুলি বেদীতে এনে পুড়িয়ে দেবে| বেদীতে পোড়ালে তা হবে হোমবলি| প্রভুর উদ্দেশ্যে আগুনের উপহার| প্রভু এর গন্ধে খুশী হবেন| 19 “এবার অন্য একটি মেষ নিয়ে এসো এবং হারোণ ও তার পুত্রদের বলো মাথায় হাত রাখতে| 20 ছাগলটিকে বলি দাও ও তার একটু রক্ত নাও এবং সেটি হারোণ ও তার পুত্রদের ডান কানের লতিতে লাগিয়ে দাও| একটু রক্ত লাগাও ডান হাতের বুড়ো আঙুলে এবং কিছু রক্ত লাগাবে ডান পায়ের বুড়ো আঙুলে| এরপর বাকী রক্ত বেদীর চারদিকে ঢেলে দেবে| 21 এবার বেদী থেকে একটু রক্ত তুলে নাও এবং একটি বিশেষ অভিষেকের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে হারোণ ও তার পুত্রদের ওপর ও তাদের পোশাকের ওপর ছিটিয়ে দেবে| এতে বোঝা যাবে য়ে হারোণ ও তার পুত্রদের পোশাকগুলি প্রভুর কাছে উত্সর্গীকৃত| 22 “এরপর সেই মেষের চর্বি ছাড়িয়ে নেবে| (এটা সেই ছাগল বা মেষ য়েটা হারোণের মহাযাজকরূপে অভিষেকের সময় ব্যবহৃত হয়েছে|) বলি দেওয়া ছাগলের লেজের এবং শরীরের ভেতরের চর্বি ছাড়িয়ে নেবে| যকৃত্ ও মুত্রগ্রন্থীর ওপরের চর্বি এবং ডান পায়ের চর্বিও সংগ্রহ করবে| 23 এবার প্রভুর সামনে রাখার জন্য খামিরবিহীন রুটি এবং তেলে ভাজা পিঠে ভর্তি ঝুড়িটিকে আনবে| ঝুড়ি থেকে একটি রুটি, একটি তেলেভাজা পিঠে ও একটি ছোট সরুচাক্লী পিঠে তুলে নেবে| 24 এই জিনিসগুলি হারোণ ও তার পুত্রদের দেবে এবং ওদের বলবে এইগুলি হাতে নিতে এবং প্রভুর সামনে সেগুলি দোলাতে| এটা হবে দোলনীয় নৈবেদ্য| 25 এবার এই জিনিসগুলি তাদের কাছ থেকে নিয়ে নাও এবং তাদের বেদীর ওপর রাখো এবং এইগুলি মেষের সঙ্গে পুড়িয়ে দাও| এটি একটি হোমবলি| এর গন্ধ প্রভুকে খুশী করবে| 26 “এরপর বলি দেওয়া মেষটির বক্ষ কেটে নেবে| (হারোণের মহাযাজকের পদে অভিষেক উত্সবে এই মেষটিকে ব্যবহার করা হয়েছিল|) মেষটির বক্ষ প্রভুর সামনে দোলনীয় নৈবেদ্যর মত দোলাও এবং তারপরে রেখে দাও| এটি তোমার খাবার জন্য থাকবে| 27 হারোণের মহাযাজকরূপে অভিষেকের শিষ্টাচারে ব্যবহৃত ছাগলের পা ও স্তন এই বিশেষ অঙ্গ দুটি পবিত্র হল| এবার ঐ দুটি অঙ্গ হারোণ ও তার পুত্রদের দিয়ে দেবে| 28 এরপর থেকে সর্বদা ইস্রায়েলের জনগণ প্রভুকে যাজকের মাধ্যমে ঐ বিশেষ অঙ্গ দুটি উত্সর্গ করবে| তারা যখন যাজককে ঐ অঙ্গ দুটি দেবে তা হবে প্রভুকে দেওয়ারই সমান| 29 “বিশেষভাবে তৈরী করা বিশেষ পোশাকগুলো হারোণের জন্য তৈরী করা হলেও সেগুলো যত্ন করে রেখে দেবে| কারণ হারোণের পর য়ে মহাযাজক হবে সে ঐ পোশাকগুলো পরেই প্রভুর সেবা করবে| 30 হারোণের পর তার ছেলেদের মধ্যে থেকেই একজন মহাযাজকের দায়ভার সামলাবে| সে যখন সমাগম তাঁবুতে পবিত্র স্থানের সেবায নিযোজিত হবে তখন সে সাতদিন ঐ পোশাকগুলোই পরবে| 31 “হারোণের মহাযাজকরূপে অভিষেক উত্সবে ব্যবহৃত মেষের মাংস সেদ্ধ কর| পবিত্র স্থানেই ঐ মাংস রান্না হবে| 32 সমাগম তাঁবুর সামনের দরজায় বসে হারোণ ও তার পুত্ররা ঐ রান্না করা মাংস খাবে| ঝুড়ির রুটি দিয়ে তারা মাংস খাবে| 33 এই পদ্ধতিতে তাদের পাপমোচন হবে এবং তারা প্রাযশ্চিত্তের মাধ্যমে যাজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে| আর কাউকে ওগুলো খেতে দেওয়া হবে না, কারণ সেগুলি পবিত্র| 34 যদি কোন খাবার রুটি বা মাংস অবশিষ্ট থাকে তাহলে পরদিন সকালে সেগুলো পুড়িয়ে ফেলতে হবে| কেউ এ খাবার খাবে না কারণ এই খাবার বিশেষ উপায়ে বিশেষ সময়ে খেতে হয়| 35 “আমার আদেশ মতো তুমি হারোণ ও তার পুত্রদের এগুলি করাবে| আমি যা যা বলেছি তুমি তাদের জন্য ঠিক তাই করবে| তাদের যাজক পদে অভিষেকের শিষ্টাচার সাত দিন ধরে চলবে| 36 সাতদিন ধরে তুমি প্রত্যেকদিনে একটি করে বলদ বলি দেবে| হারোণ ও তার পুত্রদের পাপমোচনের জন্য এই উপায় অবলম্বন করতে হবে| এই প্রাযশ্চিত্ত বেদীকে পূণ্য করার জন্য করতে হবে| এবং বেদীকে পবিত্র করার জন্য জলপাইযের তেল ঢালবে| 37 তুমি সাত দিন ধরে প্রায়শ্চিত্ত করে সাতদিন ধরে বেদীকে পূণ্য ও পবিত্র করে তুলবে| সে সময় বেদীটি অতি পবিত্র স্থান হয়ে উঠবে| বেদীর সংস্পর্শে যা আসবে তাই-ই পবিত্র হয়ে যাবে| 38 “প্রত্যেকদিন তুমি বেদীতে কিছু না কিছু নৈবেদ্য দেবে| তোমাকে এক বছর বয়সের দুটো মেষ বলি দিতেই হবে| 39 একটা মেষকে সকালে ও অন্যটিকে সন্ধ্যায় বলি দেবে| 40 যখন তুমি প্রথম মেষটিকে বলি দেবে তখন তার সঙ্গে এক পোয়া খাঁটি জলপাই তেল আর তিন পোয়া দ্রাক্ষারসের সঙ্গে আট বাটি ভাল গমের আটাও উত্সর্গ করো| 41 এবার দ্বিতীয মেষটি গোধূলি বেলায বলি দেবে| এটির শস্য নৈবেদ্য এবং এটির পেয নৈবেদ্য হবে সকালের নৈবেদ্যর মতোই| এটা হবে একটি সুগন্ধ সৌরভ, প্রভুকে নিবেদিত একটি হোমবলি| এবং প্রভু তা নিঃশ্বাসে গ্রহণ করবেন এবং তার গন্ধ প্রভুকে খুশী করবে| 42 “প্রভুর প্রতিদিনের নৈবেদ্যগুলোকেই পুড়িয়ে ফেলতে হবে| সমাগম তাঁবুর দরজাতেই এটা করবে| প্রভুকে নৈবেদ্য দেবার সময় সর্বদা এটাই করবে| আমি, প্রভু তোমাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য ওখানেই দর্শন দেব| 43 ইস্রায়েলের লোকদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করব ঐ স্থানেই এবং আমার মহিমা ঐ স্থানকে পবিত্র করে তুলবে| 44 “তাই সমাগম তাঁবুকে আমি পবিত্র করে তুলব এবং বেদীকেও পবিত্র করে তুলব| হারোণ ও তার পুত্ররা যাতে আমাকে যাজক হয়ে সেবা করতে পারে তার জন্য আমি ওদেরও পবিত্র করে তুলব| 45 ইস্রায়েলের লোকদের সঙ্গেই আমি থাকব| আমিই হব তাদের ঈশ্বর| 46 লোকরা জানবে আমিই তাদের প্রভু এবং ঈশ্বর| তারা জানতে পারবে য়ে আমিই ‘সেই জন’ য়ে তাদের নেতৃত্ব দিয়ে মিশর থেকে বের করে এনেছে তাই আমি তাদের মাঝেই বাস করব| আমিই তাদের প্রভু, আমিই তাদের ঈশ্বর|”
1 প্রভু মোশিকে বললেন, “বাবলা কাঠের একটা বেদী তৈরী করবে| ধূপদান হিসাবে এই বেদী ব্যবহার করবে| 2 বেদীটি হবে চারকোণা| বেদীর দৈর্য়্ঘ ও প্রস্থ হবে 1 হাত করে এবং উচ্চতা হবে 2 হাত| বেদীর এই শৃঙ্গগুলি বেদীর সঙ্গে একটি অখণ্ড টুকরো হবে| 3 ওটিকে খাঁটি সোনা দিয়ে মুড়ে দাও - এর উপরিভাগে, বেদীকে ঘিরে তার চার ধারে এবং বেদীর চারধারে তার শৃঙ্গগুলি সোনার নিকেল দাও| 4 সোনার নিকেলের নীচে বেদীর বিপরীত দুদিকে দুটো সোনার আংটা লাগাবে| এই আংটায দণ্ড ঢুকিয়ে বেদীকে বয়ে নিয়ে যাওয়া হবে| 5 দণ্ডও বাবলা কাঠের হবে এবং দণ্ডকে সোনা দিয়ে মুড়ে দেবে| 6 ধূপবেদীটি বিশেষ পর্দার সামনে বসাও| ঐ পর্দাটি সাক্ষ্যসিন্দুকের ওপর য়ে আচ্ছাদন আছে তার সামনে থাকবে| এটা সেই স্থান সেখানে আমি তোমাদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করব| 7 “প্রতি সকালে হারোণ যখন বাতিগুলো ঠিক করতে আসবে তখন সে বেদীতে সুগন্ধি ধূপ জ্বালাবে| 8 সন্ধ্যায যখন সে প্রদীপ জ্বালাতে আসবে তখনও তাকে বেদীতে ধূপ জ্বালাতে হবে| এখন থেকে, এই ধূপ নিয়মিতভাবে প্রভুর সামনে অর্পণ করতে হবে| 9 এই বেদীর ওপর অন্য কোন ধূপ অথবা হোমবলি উত্সর্গ করবে না| কোন রকম শস্য নৈবেদ্য ও পেয় নৈবেদ্যর জন্য এই বেদী ব্যবহার করা হবে না| 10 “বছরে একবার হারোণ প্রভুর প্রতি একটি বিশেষ পশু উত্সর্গ করবে| মানুষের পাপমোচনের উদ্দেশ্যে সে পাপ বলির রক্ত দিয়ে প্রাযশ্চিত্ত করবে| পাপমোচনের নৈবেদ্যর রক্ত দিয়ে এই প্রাযশ্চিত্ত করতে হবে| এটি প্রভুর কাছে সবচেয়ে পবিত্র| এই দিনটি চিহ্নিত হবে প্রাযশ্চিত্তের দিন হিসেবে| এই দিনটি হবে প্রভুর কাছে একটি বিশেষ দিন|” 11 প্রভু মোশিকে বললেন, 12 “ইস্রায়েলের জনসংখ্যা গণনা করো তাহলে বুঝতে পারবে কতজন ইস্রায়েলে বসবাস করে| তাদের প্রত্যেকে প্রভুকে কিছু না কিছু অর্থ দান করবে| যদি প্রত্যেকে এটা মেনে চলে তাহলে তাদের জীবনে কোন ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটবে না| 13 এই লোকদের প্রত্যেককে আমলাতান্ত্রিক মান অনুযায়ী1/2 শেকল দিতে হবে| এই আমলাতান্ত্রিক শেকলের ওজন হল 20 গেরা| এই 1/2 শেকল প্রভুর প্রতি একটি নৈবেদ্য| 14 কুড়ি বছর হলে তাকে গণনার আওতায় আনা হবে| এবং গণনার আওতায় চলে আসা প্রত্যেকে এই নৈবেদ্য দেবে প্রভুর প্রতি| 15 বড় লোকরা 1/2 শেকলের বেশী দেবে না আবার গরীবরা 1/2 শেকলের কম দেবে না| তাদের জীবনের প্রাযশ্চিত্তের জন্য প্রত্যেককে অবশ্যই সমপরিমাণ নৈবেদ্য প্রভুকে অর্পণ করতে হবে| 16 প্রায়শ্চিত্ত নৈবেদ্যর সমস্ত অর্থ জমা কর এবং ঐ অর্থ সমাগম তাঁবুর যাবতীয় খরচের জন্য ব্যবহার কর| এই নৈবেদ্য এরকমভাবে প্রভুকে তাঁর লোকদের কথা মনে রাখাবার জন্য| তারা তাদের নিজেদের জীবনের জন্য মূল্য দেবে|” 17 প্রভু মোশিকে বললেন, 18 “পিতলের একটি পায়া তৈরী করে তার ওপর একটি পিতলের পাত্র বসাবে| এই পাত্রে অন্য সব কিছু পরিষ্কার করে ধোযা হবে| সমাগম তাঁবু ও বেদীর মাঝখানে ঐ পাত্র বসিয়ে তাতে জল ভর্তি করবে| 19 হারোণ ও তার পুত্ররা ঐ পাত্রের জলে তাদের হাত পা ধোবে| 20 যখনই তারা সমাগম তাঁবুতে প্রবেশ করবে অথবা প্রভুর কাছে নৈবেদ্য পোড়াবার জন্য বেদীর কাছে আসবে তখনই তাদের ঐ পাত্রের জল দিয়ে নিজেদের পরিষ্কার করতে হবে যাতে তারা মারা না যায| এটা মেনে চললে তারা মারা যাবে না| 21 যদি তারা মরতে না চায় তাহলে এই বিধি তাদের মেনে চলতে হবে| এই বিধি হারোণ এবং তার উত্তরপুরুষদের চিরকাল মেনে চলতে হবে|” 22 প্রভু মোশিকে বললেন, 23 “সুগন্ধি মশলা খুঁজে আনো| 12 পাউণ্ড ওজনের তরল মস্তকি, 6 পাউণ্ড ওজনের সুগন্ধি দারুচিনি, 6 পাউণ্ড ওজনের সুগন্ধি এবং 24 বারো পাউণ্ড ওজনের সূক্ষ্ম ধরণের দারুচিনি নিয়ে এসো| এগুলিকে প্রচলিত শেকলের মান অনুযায়ীওজন কর| 1 গ্য়ালন জলপাইযের তেলও এনো| 25 “সুগন্ধি অভিষেকের তেল তৈরী করবার জন্য এই জিনিসগুলি বিশেষজ্ঞের মতো মেশাও| 26 সমাগম তাঁবুর ওপর ও সাক্ষ্যসিন্দুকের ওপর ঐ তেল ছিটিয়ে দাও| এর ফলে ঐ জিনিসগুলোর বিশেষত্ব প্রকাশ পাবে| 27 টেবিল এবং টেবিলের ওপর রাখা প্লেটে ওই তেল ছিটোবে| দীপদান ও তার সকল পাত্র ও ধূপবেদীতেও ঐ তেল ছিটোবে| 28 হোমবলির বেদীতে এবং হোমবলির জন্য ব্যবহৃত সমস্ত পাত্রে এবং হাত পা ধোযার সেই পাত্র ও পাত্রের নীচে রাখা পায়াতেও ঐ তেল ছিটিয়ে দাও| 29 প্রভুর সেবার জন্য এই সমস্ত জিনিসগুলোকে তোমাকে পবিত্র করে তুলতে হবে| তাহলেই তারা পবিত্র হয়ে উঠবে| এই জিনিসগুলোকে অন্য কিছু স্পর্শ করলে সেগুলোও পবিত্র হয়ে উঠবে| 30 “যাজকরূপে বিশেষ উপায়ে আমাকে সেবার জন্য হারোণ ও তার পুত্রদের গায়েও ঐ তেল ছিটিয়ে দেবে| 31 ইস্রায়েলের লোকদের বলো য়ে এই অভিষেকের তেল হল পবিত্র| ইস্রায়েলের লোকদের বলো য়ে এই তেল অবশ্যই তোমাদের বংশ পরম্পরায একমাত্র আমার জন্যই ব্যবহৃত হবে| 32 সাধারণ সুগন্ধি হিসেবে কেউ য়েন এই তেল ব্যবহার না করে| এই সূত্র অনুসারে অন্য কোন তেল তৈরী করবে না| এই তেল পবিত্র এবং তোমাদের কাছে এর বিশেষ অর্থ আছে| 33 যদি কেউ এই পবিত্র তেল সাধারণ সুগন্ধি হিসাবে তৈরী করে অথবা এটি কারো ওপর আরোপ করে, তার লোকদের থেকে তাকে বিতাড়িত করে দেওয়া হবে|” 34 এরপর প্রভু মোশিকে বললেন, “এই সুগন্ধি মশলাগুলো জোগাড় করে আনো: ধুনো, নখী, গুগ্গুল, কুন্দুরু| মনে রাখবে প্রত্যেকটি মশলার পরিমাণ হবে সমান| 35 পরিষ্কার লবনের সঙ্গে এই সুগন্ধি মশলাগুলো মেশাও এবং সুগন্ধি তৈরী করার মতো সুগন্ধি ধূপ বানাও| এই প্রক্রিযা ধূপকে খাঁটি এবং পবিত্র করবে| 36 খানিকটা পাউডারের মতো ধূপের গুঁড়ো করে নিয়ে সেই মিহি করা ধূপের গুঁড়ো য়ে সমাগম তাঁবুতে আমি তোমাদের দর্শন দেব তার মধ্যে রাখা সাক্ষ্যসিন্দুকের সামনে রাখবে| বিশেষ প্রযোজনেই শুধুমাত্র এই ধূপের গুঁড়ো ব্যবহার করবে| 37 প্রভুর জন্য বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া এর ব্যবহার হবে না| 38 সুগন্ধি ধূপের গন্ধ অনুভব করতে কেউ যদি নিজের জন্য এই ধূপের গুঁড়ো নিয়ে যায তাহলে সে সমাজচ্য়ূত হবে|”
1 তখন প্রভু মোশিকে বললেন, 2 “আমার বিশেষ কাজের জন্য আমি যিহূদা বংশীয় একজনকে নির্বাচন করেছি| তার নাম হল বত্সলেল| বত্সলেল হল হূরের পৌত্র এবং উরির পুত্র| 3 আমি বত্সলেলকে ঈশ্বরের আত্মা, পটুতা, দক্ষতা এবং সমস্ত রকমের কলা ও শিল্পের জ্ঞান দিয়ে ভরে দিয়েছি| 4 বত্সলেল একজন ভাল শিল্পকার এবং সে সোনা, রূপো ও পিতল থেকে নানা জিনিসপত্র তৈরী করতে পারে| 5 বত্সলেল নানা মণি মাণিক্য কাটতে ও তাতে খোদাই করে সুন্দর অলঙ্কার তৈরী করতে পারে| সে কাঠের শিল্পকর্মেও পারদর্শী| বত্সলেল সব ধরণের কাজ করতে পারে| 6 বত্সলেলের সঙ্গে কাজ করার জন্য আমি অহলীযাবকে নির্বাচন করেছি| অহলীযাব হল দান পরিবারগোষ্ঠীর অহীষামকের পুত্র| আমি বাকী কারিগরদের সব রকম দক্ষতা দিয়েছি যাতে ওরা তোমাকে দেওয়া আমার নির্দেশগুলো পালন করতে পারে: 7 সমাগম তাঁবু, সাক্ষ্যসিন্দুক, সাক্ষ্য সিন্দুকের ওপরের আচ্ছাদন এবং সমাগম তাঁবুর সমস্ত আসবাবপত্র| 8 টেবিল ও তার ওপর রাখা যাবতীয় সব কিছু, আনুষঙ্গিক অংশসহ খাঁটি সোনার বাতিস্তম্ভটি এবং ধূপবেদী| 9 হোমবলির বেদী এবং বেদীতে ব্যবহৃত জিনিসপত্র| হাত পা ধোযার পাত্র ও পাত্রের নীচের পায়া| 10 যাজক হারোণের জন্য বোনা বিশেষ পোশাক পরিচ্ছদ এবং হারোণের পুত্ররা যখন যাজকের কাজ করবে তখন তাদের জন্য বোনা বিশেষ পোশাক পরিচ্ছদ| 11 সুগন্ধি অভিষেকের তেল, পবিত্র স্থানে ব্যবহারের সুগন্ধি ধূপ|আমি তোমাকে ঠিক য়েভাবে নির্দেশ দিয়েছি ঠিক সেইভাবেই তাদের এই জিনিসগুলো তৈরী করতে হবে|” 12 প্রভু মোশিকে বললেন, 13 “ইস্রায়েলের লোকদের এই কথাগুলি বলো: তোমরা অবশ্যই আমার বিশ্রামের দিন বিধি অনুসারে পালন করবে| তোমরা এটা অবশ্যই করবে কারণ প্রজন্মের পর প্রজন্ম এটা তোমার এবং আমার মধ্যে একটি প্রতীক চিহ্ন হিসাবে বিরাজ করবে| এই চিহ্ন দেখাবে য়ে, আমিই প্রভু, তোমাদের পবিত্র করেছি| 14 “এই বিশ্রামের দিনকে একটি বিশেষ দিনের মর্য়াদা দেবে| যদি কেউ এই বিশেষ বিশ্রামের দিনকে অন্য একটি সাধারণ দিনের মতো পালন করে তাহলে তাকে অবশ্যই হত্যা করতে হবে| যদি কেউ এই বিশ্রামের দিনেও কাজ করে, তাহলে তাকে তার লোকদের থেকে বিতাড়িত করতে হবে| 15 কাজ করার জন্য সপ্তাহের বাকি ছয় দিন নির্দিষ্ট থাকবে কিন্তু সপ্তম দিনটি হবে বিশেষ বিশ্রামের দিন| এই দিনটি তোলা থাকবে প্রভুর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের দিন হিসেবে| এই বিশেষ বিশ্রামের দিনে কেউ কাজ করলে তার মৃত্য়ু অনিবার্য়| 16 বিশ্রামের দিনটিকে সর্বদা মনে রেখে ইস্রায়েলের মানুষ বিশেষ দিন হিসেবে পালন করবে| তারা সর্বদা এটা মেনে চলবে| এটা হল আমার ও তাদের মধ্যে এক চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত| 17 বিশ্রামের দিনটি একটি চিরস্থায়ী চিহ্ন হিসেবে বেঁচে থাকবে আমার ও ইস্রায়েলের লোকদের মধ্যে| প্রভু সপ্তাহের ছয় দিন পরিশ্রম করে এই স্বর্গ ও মর্য়্ত তৈরী করেছেন| কিন্তু সপ্তম দিনে তিনি বিশ্রাম ও অবসরের মধ্যে কাটিযেছেন|” 18 সীনয় পর্বতে এরপর প্রভু মোশির সঙ্গে কথোপকথন শেষ করলেন| তারপর তিনি বন্দোবস্ত লেখা দুটো সমান্তরাল পাথর ফলক মোশিকে দিলেন| ঈশ্বর নিজের হাতে ঐ দুই পাথর ফলকে লিখেছেন|
1 পর্বত থেকে মোশির নামতে দেরী হচ্ছে দেখে লোকরা উদ্বিগ্ন হয়ে হারোণকে ঘিরে ধরল| তারা বলল, “মোশি আমাদের পথ দেখিয়ে মিশর দেশ থেকে বের করে এনেছে কিন্তু আমরা তো এখান থেকে কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না য়ে মোশির কি হয়েছে| সুতরাং এসো, আমরা আমাদের নেতৃত্ব দেবার জন্য দেবতাদের তৈরী করি|” 2 হারোণ তখন ঐ লোকদের বলল, “তোমরা আমার কাছে তোমাদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যাদের কানের সোনার দুল এনে দাও|” 3 সুতরাং সবাই তাদের স্ত্রী, পুত্র ও কন্যাদের কানের দুল এনে হারোণকে দিল| 4 হারোণ সবার কাছ থেকে সোনার দুলগুলো নিয়ে সেগুলো গলিযে একটি বাছুরের মূর্তি গড়ল| হারোণ বাটালি দিয়ে বাছুরের মূর্তি গড়ল এবং সোনা দিয়ে মূর্তিটির আচ্ছাদন তৈরী করল|তখন লোকরা বলল, “হে ইস্রায়েল, এই তোমার দেবতা যিনি তোমাকে মিশর দেশ থেকে বের করে এনেছেন|” 5 সব দেখার পর হারোণ বাছুরের মূর্তির সামনে একটি বেদী তৈরী করল| এরপর হারোণ ঘোষণা করে জানাল, “আগামীকাল প্রভুর সম্মানার্থে একটি বিশেষ চড়ুই ভাতি উত্সব পালন করা হবে|” 6 পরদিন খুব ভোরে লোকরা উঠে কিছু পশুকে মেরে হোমবলি ও মঙ্গল নৈবেদ্য দিল| তারপর তারা বসে পাত পেড়ে খাওয়া দাওযা করে আনন্দ স্ফূর্তিতে মেতে উঠল| 7 ঠিক সেই সমযে প্রভু মোশিকে বললেন, “তোমার লোকরা, যাদের তুমি মিশর দেশ থেকে বের করে এনেছো, তারা মারাত্মক পাপ কাজে লিপ্ত হয়েছে| 8 আমার নির্দেশ সম্পূর্ণরূপে অগ্রাহ্য করে সোনা গলিযে তারা একটি বাছুরের মূর্তি তৈরী করেছে| তারা গলা সোনা দিয়ে তৈরী একটি বাছুরের মূর্তিকে পূজো করছে এবং তাকে নৈবেদ্য দিচ্ছে| আবার তারা বলছে, ‘ইস্রায়েল, এই হচ্ছে তোমার দেবতা যিনি তোমাকে মিশর থেকে বের করে এনেছেন|” 9 প্রভু মোশিকে বললেন, “আমি ঐ লোকদের ভাল করে চিনি| ওরা ভীষণ জেদী ও উদ্ধত| 10 সুতরাং আমাকে একা থাকতে দাও| আমি তাদের ওপর ক্রুদ্ধ, আমি তাদের ধ্বংস করব| তারপর আমি তোমাকে দিয়ে একটা বড় জাতির সৃষ্টি করব|” 11 কিন্তু মোশি বিনযের সঙ্গে, প্রভু তার ঈশ্বরকে অনুরোধ করল, “আপনি ক্রোধ দিয়ে আপনার লোকদের ধ্বংস করবেন না| আপনি আপনার শক্তি ও পরাক্রম দিয়ে ঐ মানুষদের মিশর দেশ থেকে বের করে এনেছিলেন| 12 কিন্তু আপনি যদি ওদের ধ্বংস করেন তাহলে মিশরীয়রা বলতে পারে য়ে, ‘প্রভু নিজের লোকদের জন্য খারাপ কিছু করার পরিকল্পনা করেছিলেন| তাই তিনি ঐ লোকদের মিশর থেকে বের করে নিয়ে গিয়েছিলেন| তিনি চেযেছিলেন পর্বতের ওপর নিয়ে গিয়ে তাদের হত্যা করতে| তিনি চেযেছিলেন তাদের পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে| তাই আপনি তাদের ওপর রাগ করবেন না| দযা করে আপনার মনকে বদলান| আপনার জনগণকে ধ্বংস করবেন না| 13 আপনার দাসগণ অব্রাহাম, ইসহাক এবং যাকোবকে স্মরণ করুন| এবং আপনি তাদের কাছে নিজের নামে শপথ নিয়ে বলেছিলেন: ‘আমি প্রতিজ্ঞা করছি য়ে আকাশের অসংখ্য তারার মতো তোমাদের বংশ বৃদ্ধি হবে| এই দেশ তোমাদের বংশধরদের দিয়ে দেব| ওরা এখানে চিরকালের জন্য থাকবে|”‘ 14 তাই প্রভু তাঁর মন পরিবর্তন করলেন এবং তাঁর লোকদের ধ্বংস করবার ভীতি প্রদর্শন পালন করলেন না| 15 তখন মোশি ঘুরে দাঁড়াল এবং পর্বতের নীচে নামল| তার হাতে ছিল বন্দোবস্ত লেখা দুই পাথর ফলক| ঐ দুই পাথর ফলকের দুপাশেই লেখা ছিল প্রভুর নির্দেশগুলি| 16 ঈশ্বর নিজের হাতে ঐ দুই পাথর ফলক তৈরী করে নিজেই ঐ নির্দেশগুলি লিখেছেন| 17 যিহোশূয় শিবিরের গভীরে লোকজনের কোলাহল শুনতে পেল এবং মোশিকে বলল, “মনে হচ্ছে শিবিরের লোকরা যুদ্ধ করছে|” 18 উত্তরে মোশি বলল, “এই কোলাহল কোন যুদ্ধ জয়ের উল্লাস নয় আবার পরাজয়ের কান্নাও নয়| আমি কিন্তু গান বাজনা শুনতে পাচ্ছি|” 19 মোশি সেই শিবিরের কাছে গেল| সে দেখল সোনার বাছুরের মূর্তিটি এবং লোকরা তা নিয়ে নাচানাচি করছে| এসব দেখে মোশি রেগে গেল, রাগের চোটে হাত থেকে পাথর ফলকগুলি নীচে ফেলে দিল এবং পর্বতের পাদদেশে তাদের ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিল| 20 মোশি সেই সোনার বাছুরের মূর্তিকে আগুনে ছুঁড়ে ফেলে দিল| তারপর আগুনে সেই মূর্তি গলে গেলে সেই ছাই জলে মিশিয়ে ইস্রায়েলের লোকদের সেই জল পান করতে বাধ্য করল| 21 মোশি হারোণকে বলল, “এই লোকরা তোমার সঙ্গে কি করেছিল য়ে তুমি ওদের এমন পাপের দিকে ঠেলে দিলে?” 22 হারোণ উত্তর দিল, “মহাশয, রাগ করো না| তুমি তো জানো এরা সব সময়ই ভুল পথে পা বাড়ায| 23 ওরা আমায বলেছিল, ‘মোশি আমাদের মিশর দেশ থেকে নেতৃত্ব দিয়ে বের করে আনলেও এখন কিন্তু তার কোন খবর পাওয়া যাচ্ছে না| তাই আমাদের জন্য এমন দেবতাসমূহ তৈরী করে দাও যারা আমাদের নেতৃত্ব দেবে|” 24 তখন আমি ওদের বলেছিলাম, ‘যদি তোমাদের কোন সোনার দুল থাকে তাহলে আমাকে সব দাও|’ ওরা আমাকে সোনার দুল দিলে আমি সেগুলো আগুনে ফেলে দিলে আগুন থেকে ঐ বাছুরটি বের হয়ে এলো|” 25 মোশি দেখল হারোণ লোকদের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিযেছে এবং তারা স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছে| লোকরা বন্য হয়ে উঠেছে| এবং তাদের সমস্ত শত্রুরা এই বোকামী দেখতে পেয়েছে| 26 তাই মোশি সেই শিবিরের প্রবেশ দ্বারে দাঁড়িয়ে বলে উঠল, “কেউ যদি প্রভুকে অনুসরণ করতে চাও তাহলে আমার কাছে এসো|” এবং লেবি বংশজাত লোকরা সবাই দৌড়ে মোশির কাছে চলে এল| 27 তখন মোশি তাদের বলল, “প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর কি বলেন তা আমি তোমাদের বলব: ‘প্রত্যেকে তার নিজের নিজের তরবারি হাতে তুলে নিয়ে শিবিরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে গিয়ে সমস্ত লোকদের হত্যা করে তাদের শাস্তি দাও| প্রত্যেকে তার বন্ধু ভাই এবং প্রতিবেশীকে হত্যা করবে|” 28 লেবি বংশজাত প্রত্যেক মানুষ মোশির নির্দেশ পালন করল| সেই দিন অন্তত 3000 ইস্রায়েলবাসীকে হত্যা করা হয়েছিল| 29 তখন মোশি বলল, “আজ থেকে প্রভু তোমাদের তাঁর সেবার জন্য উত্সর্গ করেছেন এবং আজ তিনি তোমাদের আশীর্বাদ করেছেন কারণ তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের পুত্রদের এবং ভাইদের বিরুদ্ধে ঝগড়া করেছ|” 30 পরদিন সকালে মোশি সবাইকে বলল, “তোমরা মারাত্মক পাপ কাজ করেছো কিন্তু এখন আমি প্রভুর কাছে যাব এবং চেষ্টা করব যাতে তিনি তোমাদের এই পাপকে ক্ষমা করে দেন|” 31 সুতরাং মোশি আবার প্রভুর কাছে ফিরে গিয়ে বলল, প্রভু অনুগ্রহ করে শুনুন| ওরা সোনার দেবতা তৈরী করে মারাত্মক পাপ করেছে| 32 এখন আপনি ওদের এই পাপকে ক্ষমা করে দিন| যদি আপনি ওদের ক্ষমা না করেন তাহলে আপনার লেখা পুস্তকথেকে আমার নাম মুছে দিন|” 33 প্রভু মোশিকে বললেন, “য়ে আমার বিরুদ্ধে পাপ কাজ করেছে আমি কেবল তার নামই আমার পুস্তক থেকে কেটে ফেলব| 34 তাই এখন তুমি নীচে গিয়ে লোকদের য়ে দেশে নিয়ে য়েতে বলেছি সেই দেশে নিয়ে যাও| আমার দূত তোমাদের আগে পথ দেখাতে দেখাতে যাবে, পাপীর যখন বিনাশের সময় হবে তখন সে শাস্তি পাবেই|” 35 তাই প্রভু লোকদের ওপর একটি মহামারী ঘটালেন কারণ তারা হারোণকে বাছুরের মূর্তি তৈরী করতে বাধ্য করেছিল|
1 তখন প্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি এবং তোমার লোকদের, যাদের তুমি মিশর থেকে এনেছিলে তাদের অবশ্যই এখান থেকে চলে য়েতে হবে| অব্রাহাম, ইস্হাক ও যাকোবকে আমি য়ে দেশ দেব বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম সেই দেশে চলে যাও| আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম য়ে আমি ওদের পরবর্তী উত্তরপুরুষদের ঐ দেশ দিয়ে যাব| 2 তাই আমি তোমার আগে একজন দূত পাঠাব এবং কনানীয, ইমোরীয়, হিত্তীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দের পরাজিত করে ঐ দেশ থেকে তাড়িয়ে দেব| 3 তোমরা সেই ভাল দেশে যাও সেখানে সব কিছু সুন্দর| কিন্তু আমি তোমার সঙ্গে যাব না| তোমরা ভীষণ একগুঁযে ও জেদী| তোমরা আমাকে ক্রুদ্ধ করেছ| যদি আমি তোমাদের সঙ্গে যাই তাহলে হয়তো আমি তোমাদের ধ্বংস করতে পারি|” 4 এই দুঃসংবাদ শোনার পর লোকরা ভীষন হতাশ হয়ে পড়ল এবং তারা মণিমাণিক্য ব্যবহার করা বন্ধ করে দিল| 5 কেন? কারণ মোশিকে প্রভু বলেছেন, “ইস্রায়েলবাসীকে বলো, “তোমরা একগুঁয়ে জেদী প্রকৃতির মানুষ| খুব কম সমযের জন্যও আমি যদি তোমাদের সঙ্গে ভ্রমণ করি তাহলে তোমাদের বিনাশ হতে পারে| সুতরাং যখন আমি স্থির করব ইস্রায়েলকে কি করতে হবে তখন তোমরা নিজেদের দেহ থেকে অলঙ্কারাদি খুলে ফেল|” 6 সুতরাং ইস্রায়েলবাসীরা হোরেব পর্বত থেকে তাদের যাত্রাপথে নিজেদের অলঙ্কারাদি খুলে ফেলল| 7 মোশি শিবিরের একটু দূরে অন্য একটি তাঁবু স্থাপন করল| মোশি এই তাঁবুর নাম দিল “সমাগম তাঁবু|” প্রভুকে কেউ যদি কিছু জিজ্ঞাসা করতে চায তাহলে সে শিবিরের বাইরে ঐ সমাগম তাঁবুতে য়েতে পারে| 8 যখন খুশি মোশি ঐ সমাগম তাঁবুতে য়েত| সবাই তাকে লক্ষ্য করত| সকলে নিজস্ব তাঁবুর দরজায় দাঁড়িয়ে মোশির সমাগম তাঁবুর অভ্যন্তরে যাওয়া দেখতো| 9 মোশি যখনই ঐ সমাগম তাঁবুতে প্রবেশ করতো তখনই তাঁবুর দরজায় মেঘস্তম্ভ নেমে আসত এবং প্রভু তখন মোশির সঙ্গে কথা বলতেন| 10 লোকরা সমাগম তাঁবুর দরজায় মেঘস্তম্ভ দেখতে পেলেই তারা নিজের নিজের তাঁবুর মধ্যে হাঁটু গেড়ে ঈশ্বরের উপাসনা করতো| 11 এভাবেই প্রভু মোশির সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলত| প্রভু বন্ধুর মতো মোশির সঙ্গে কথা বলতেন| প্রভুর সঙ্গে কথা শেষ করার পর মোশি শিবিরে ফিরে য়েত কিন্তু মোশির পরিচারক (দাস), নূনের পুত্র যিহোশূয় তাঁবুর বাইরে বেরোত না| 12 মোশি প্রভুকে বলল, “আপনি এই লোকদের নেতৃত্ব দিতে বলেছিলেন কিন্তু আমার সঙ্গে আপনি কাকে পাঠাবেন তা কিন্তু বলেন নি| আপনি বলেছেন, ‘আমি তোমাকে ভাল করে চিনি এবং তোমার ওপর আমি সন্তুষ্ট|’ 13 আমি যদি সত্যিই আপনাকে সন্তুষ্ট করে থাকি তাহলে আমাকে আপনার শিক্ষা ও জ্ঞান দিন| আমি আপনাকে জানতে চাই| তাহলে আমি আপনাকে বরাবর সন্তুষ্ট করতে পারব| মনে রাখবেন য়ে তাদের সবাই আপনার লোক|” 14 প্রভু উত্তরে বললেন, “আমি নিজে তোমার সঙ্গে যাব, আমি তোমাকে বিশ্রাম দেব|” 15 তখন মোশি প্রভুকে বললেন, “আপনি যদি আমাদের সঙ্গে না যান তাহলে আমাদের এই স্থান থেকে সরাবেন না| 16 তাছাড়া, আমরা কি করে বুঝব আপনি আমার এবং আপনার লোকদের ওপর সন্তুষ্ট? আপনি যদি আমাদের সঙ্গে যান তাহলে বুঝব আপনি আমাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়েছেন| আপনি যদি আমাদের সঙ্গে না আসেন, তাহলে আমার এবং আপনার লোকদের মধ্যে এবং পৃথিবীর অন্য জাতির মধ্যে আর কোন পার্থক্য থাকবে না|” 17 তখন প্রভু মোশিকে বললেন, “বেশ আমি তোমার ইচ্ছা পূরণ করব| কারণ আমি তোমার ওপর সন্তুষ্ট এবং আমি তোমাকে ভাল করে জানি|” 18 তখন মোশি বলল, “দযা করে আপনার মহিমা আমায় দেখান|” 19 তখন প্রভু উত্তর দিলেন, “আমি আমার সমস্ত গুণাবলীকে তোমার সামনে দিয়ে গমণ করাবো| আমিই প্রভু এবং তোমরা যাতে শুনতে পাও সেইজন্য আমি আমার নাম ঘোষণা করব| কারণ আমার যাকে খুশী আমি আমার করুণা ও ভালবাসা দেখাতে পারি| 20 কিন্তু তোমরা আমার মুখ দেখতে পাবে না| আমাকে দেখার পর কেউ বাঁচতে পারবে না| 21 “আমার খুব কাছেই একটি পাথর আছে তোমরা সেই পাথরের ওপর দাঁড়াতে পারো| 22 ঐ স্থান দিয়েই আমার মহিমা প্রকাশ পাবে| আমি তোমাদের ঐ পাথরের একটি বিশাল ফাটলে রেখে দেব এবং আমি যখন ওখান দিয়ে যাব তখন আমার হাত তোমাদের ঢেকে দেবে| 23 এরপর আমি তোমাদের ওপর থেকে হাত সরিয়ে নেব এবং তোমরা আমার পিছন দিক দেখতে পাবে কিন্তু আমার মুখ দেখতে পাবে না|”
1 তখন প্রভু মোশিকে বললেন, “পূর্ববর্তী দুটি প্রস্তর ফলকের মতো, য়ে দুটি তুমি ভেঙ্গেছিলে আরো দুটি প্রস্তর ফলক তুমি তৈরী কর| প্রথম ফলক দুটিতে য়েসব কথা লেখা হয়েছিল সেইসব কথা আমি আবার এই ফলক দুটিতে লিখব| 2 কাল সকালে প্রস্তুত হয়ে নিও এবং আমার সঙ্গে দেখা করবার জন্য সীনয় পর্বতের চূড়ায় এসো| 3 আর কেউ তোমার সঙ্গে আসবে না| অন্য কাউকে য়েন পর্বতের কোথাও না দেখা যায| এমনকি কোনও পশুর দল বা মেষের পালকেও পর্বতের নীচে চরতে দেওয়া যাবে না|” 4 তাই মোশি প্রথম পাথরের ফলকের মতো আরও দুটি ফলক তৈরী করল| তারপর পরদিন সকালে উঠে সীনয় পর্বতের চূড়ায় গেল| মোশি প্রভুর আদেশ অনুসারে সব কিছু করল| সে পাথরের ফলক দুটি সঙ্গে করে নিয়ে গেল| 5 অতঃপর প্রভু মেঘের মধ্যে মোশির কাছে নেমে এলেন এবং তার সঙ্গে দাঁড়ালেন এবং তাঁর নাম (প্রভুর) ঘোষণা করলেন| 6 প্রভু মোশির সামনে দিয়ে গেলেন এবং বললেন, “যিহোবা, প্রভু হলেন দয়ালু ও করুণাময়| তিনি ক্রোধের ব্যাপারে ধৈর্য়্য়শীল| তিনি পরমস্নেহে পরিপূর্ণ এবং বিশ্বস্ত| 7 হাজার হাজার পুরুষ ধরে প্রভু তাঁর করুণা দেখান| তিনি ভুল কাজ, অবাধ্যতা এবং পাপ ক্ষমা করে দেন| কিন্তু তবু তিনি দোষীদের শাস্তি দিতে ভোলেন না| তিনি কেবলমাত্র দোষীদেরই শাস্তি দেন না, তাদের দণ্ডনীয অপরাধের জন্য তাদের তৃতীয় ও চতুর্থ পুরুষের উত্তরপুরুষদেরও শাস্তি দেন|” 8 তখন মোশি সঙ্গে সঙ্গে হাঁটু গেড়ে বসল ও আভুমি মাথা নত করে প্রভুর কাছে প্রার্থনা করল এবং বলল, 9 “প্রভু, আপনি যদি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হন তাহলে আমাদের সঙ্গে চলুন| আমি জানি আমরা জেদী কিন্তু আমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দিন| আমাদের ওপর আপনার নিজের পূর্ণ অধিকার আছে বলে মনে করুন এবং আমাদের গ্রহণ করুন|” 10 তখন প্রভু বললেন, “আমি তোমার লোকদের সঙ্গে এই চুক্তি করি য়ে আমি তোমার লোকদের সামনে এমন সব আশ্চর্য়্য় কার্য়্য় করব যা ইতিপূর্বে পৃথিবীর কোনও দেশে হয় নি| তখন তোমাদের চারপাশের সমস্ত জাতিসমূহ দেখতে পাবে আমি কত মহান| তারা এইসব আশ্চর্য়্য় জিনিস দেখবে যা আমি তোমাদের জন্য করব| 11 আমি যা আদেশ দিচ্ছি, আজ তা পালন কর তাহলে আমি তোমাদের শত্রুদের তোমাদের দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করব| আমি ইমোরীয়, কনানীয়, হিত্তীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দের বিতাড়ন করব| 12 সাবধান! তোমরা যেখানে যাচ্ছো সেখানকার লোকদের সঙ্গে কোনও চুক্তি কোরো না| তাহলে তোমরা বিপদে পড়বে| 13 তাদের বেদী ধ্বংস কর| য়ে পাথরকে তারা পূজো করে তা ভেঙ্গে ফেলো| তাদের পবিত্র দণ্ডগুলি ধ্বংস করো| 14 অন্য কোনও দেবতাকে পূজা করো না কারণ আমার নাম “ঈর্ষা|” আমি হলাম ঈর্ষাপরাযণ ঈশ্বর| 15 “ঐ দেশের লোকদের সঙ্গে কোনও চুক্তি না করার ব্যাপারে সাবধান থেকো| কারণ তোমরা তাদের দেবতাদের পূজো করে এবং তাদের নৈবেদ্য উত্সর্গ করে ব্যভিচার করবে| তারা তাদের নৈবেদ্য ভক্ষণ করতে তোমাদের নিমন্ত্রণ করবে| 16 তোমরা যদি তাদের কন্যাদের পুত্রবধূরূপে গ্রহণ করো তাহলে ঐ মহিলারা তোমাদের পুত্রদের তাদের ঐ দেবতাদের পূজো করাবে এবং তারা তোমাদের পুত্রদের প্রভুর প্রতি অবিশ্বস্ত করে তুলবে| 17 “কোনও মূর্ত্তি তৈরী করবে না| 18 “খামিরবিহীন রুটির উত্সব পালন করবে| আমি তোমাদের য়েমন আদেশ দিয়েছিলাম সেই মতো সাতদিন ধরে খামিরবিহীন রুটি খাবে| তোমরা এটা আবীব মাসে করবে কারণ ঐ মাসে তোমরা মিশর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলে| 19 “কোনও নারীর প্রথম গর্ভজাত পুত্র সন্তান হবে আমার| এমনকি গবাদি পশুর অথবা মেষের প্রথমজাত পুরুষশাবকও আমার অধিকারভুক্ত| 20 তোমরা যদি গাধার প্রথমজাত পুরুষশাবককে রাখতে চাও, তবে তোমরা একটি মেষশাবকের বিনিময়ে তা রাখতে পারো| কিন্তু তোমরা যদি ঐ গাধার শাবকটিকে একটি মেষের বিনিময়ে না কেনো তাহলে তোমাদের ঐ গাধার ঘাড় মটকাতে হবে| তোমাদের সমস্ত প্রথমজাত পুত্র সন্তানদের আমার কাছে থেকে ফেরত্ নিতে হবে| কিন্তু কোনও লোকই উপহার ছাড়া আমার কাছে আসবে না| 21 “তোমরা ছয়দিন যাবত্ পরিশ্রম করবে ও সপ্তম দিনে বিশ্রাম নেবে| চাষের বীজ রোপন ও ফসল কাটার সময় তোমরা অবশ্যই বিশ্রাম নেবে| 22 “সাত সপ্তাহের উত্সব পালন করবে| গম কাটার পর প্রথম কাটা ফসলের দানাগুলো এই উত্সবের জন্য ব্যবহার করবে এবং বছরের শেষে ফসল কাটার উত্সব পালন করবে| 23 “বছরে তিনবার তোমাদের সমস্ত লোক সর্বশক্তিমান প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বরের সামনে উপস্থিত হবে| 24 “তোমরা যখন তোমাদের দেশে যাবে তখন আমি তোমাদের শত্রুদের সেখান থেকে বিতাড়িত করতে বাধ্য করব| আমি তোমাদের দেশের সীমা বিস্তার করে দেব যাতে তোমরা আরও বেশী জমি পাও| তোমাদের অবশ্যই প্রতি বছরে তিনবার প্রভু, তোমাদের ঈশ্বরের সামনে য়েতে হবে| এবং তখন কেউ তোমাদের দেশ অধিকার করার চেষ্টা করবে না| 25 “যখন তোমরা আমাকে নৈবেদ্য হিসাবে রক্ত উত্সর্গ করবে তখন তার সঙ্গে খামির দেবে না|“নিস্তারপর্বে উত্সর্গীকৃত মাংস পরদিন সকাল পর্য়ন্ত রাখা উচিত্ হবে না| 26 “তোমাদের ক্ষেতের প্রথম ফসল প্রভুকে দেবে| ঐ ফসল প্রভু, তোমাদের ঈশ্বরের গৃহে নিয়ে আসবে|“কখনও কোনও ছাগশিশুকে তার মায়ের দুধ দিয়ে রান্না করবে না|” 27 তারপর প্রভু মোশিকে বললেন, “তোমাকে আমি যা বলেছি সব কিছু লিখে রাখো| এইগুলিই হল তোমার এবং ইস্রায়েলের লোকদের মধ্যে চুক্তির দলিল|” 28 মোশি সেখানে প্রভুর সঙ্গে 40 দিন ও 40 রাত বাস করেছিল| মোশি 40 দিন কোন কিছু ভোজন করল না বা জল পান করল না| মোশি দুটি পাথরের ফলকের ওপর চুক্তির কথাগুলি লিখেছিল| 29 তারপর মোশি সীনয় পর্বত থেকে নেমে এল| সে সেই চুক্তি লেখা পাথরের ফলক দুটি বয়ে নিয়ে এল| প্রভুর সঙ্গে কথা বলার পর মোশির মুখ জ্বলজ্বল করছিল| কিন্তু মোশি নিজে তা জানত না| 30 হারোণ ও ইস্রায়েলের অন্য সব লোকরা তার উজ্জ্বল মুখ দেখে তার কাছে য়েতে ভয় পাচ্ছিল| 31 তখন মোশি তাদের ডেকে পাঠাল| মোশি হারোণ এবং দলপতির সঙ্গে কথা বলল| 32 তারপর সমস্ত ইস্রায়েলবাসী মোশির কাছে এল| সীনয় পর্বতে প্রভু য়েসব আদেশ দিয়েছেন মোশি সেই আদেশের কথা তাদের শোনাল| 33 মোশি তার কথা শেষ করে নিজের মুখ আবরণ দিয়ে ঢেকে ফেলল| 34 কিন্তু মোশি যখনই প্রভুর সঙ্গে কথা বলতে য়েত তখন সে যতক্ষণ না বাইরে আসত ততক্ষণ সেই আবরণ খুলে রাখত| মোশি যখন প্রভুর সান্নিধ্য থেকে বেরিয়ে আসত এবং ইস্রায়েলের লোকদের প্রভুর আদেশসমূহ বলত, 35 তখন তারা মোশির মুখমণ্ডলের ওপর একটি দীপ্তি দেখতে পেত| তাই সে আবার তার মুখ ঢেকে ফেলত, পরের বার প্রভুর সঙ্গে কথা বলতে না যাওয়া পর্য়ন্ত সে ঐভাবেই মুখ ঢেকে রাখত|
1 মোশি সমস্ত ইস্রায়েলবাসীকে একত্র করল| সে তাদের বলল, “প্রভু তোমাদের যা আদেশ করেছেন তা আমি তোমাদের বলব: 2 “তোমরা ছয়দিন ধরে কাজ করবে কিন্তু সপ্তম দিনটি বিশেষভাবে বিশ্রামের জন্য থাকবে| তোমরা ঐদিন বিশ্রাম নেবে এবং এইভাবে প্রভুকে সম্মান জানাবে| য়ে ব্যক্তি সপ্তম দিন কাজ করবে তাকে হত্যা করা হবে| 3 “ঐ বিশ্রামের দিন তোমাদের বাড়ীর কোথাও তোমরা আগুন পর্য়ন্ত জ্বালাবে না|” 4 মোশি ইস্রায়েলের সমস্ত মণ্ডলীকে বলল, “এইগুলি হল প্রভুর আদেশসমূহ: 5 প্রভুর জন্য বিশেষ উপহার সংগ্রহ কর| প্রত্যেকে মনে মনে ঠিক করে নেবে তোমরা কি দেবে| তারপর তোমরা প্রভুর কাছে উপহারসমূহ আনবে| সোনা, রূপো, পিতল; 6 নীল, বেগুনী ও লাল সুতো ও সূক্ষ্ম মসীনা বস্ত্র; ছাগলের লোম; 7 লাল রঙ করা মেষ চর্ম ও মসৃণ চর্ম; বাবলা কাঠ; 8 প্রদীপের জন্য তেল, অভিষেকের তেলের জন্য মশলাপাতি এবং সুগন্ধি ধূপকাঠির জন্য মশলা এনে তোমরা প্রভুকে দেবে| 9 এফোদ ও বক্ষাবরণের জন্য গোমেদ ও অন্যান্য মূল্যবান মণিমাণিক্যও সঙ্গে এনো| 10 তোমাদের মধ্যে যারা দক্ষ কারিগর তারা এসে প্রভুর আদেশমতো জিনিস তৈরী করো: 11 পবিত্র তাঁবু, তার বাইরের তাঁবু, তার আস্তরণ, আংটাগুলি, তক্তাসমুহ, আগল, খুঁটি ও ভিত্তিসমূহ; 12 পবিত্র সিন্দুক, তার খুঁটিগুলি, আস্তরণ এবং পর্দা যা পবিত্র সিন্দুক যেখানে রাখা আছে সেই জায়গা ঢেকে দেয়; 13 সেই টেবিল ও তার পায়াগুলি, টেবিলের ওপরের সমস্ত জিনিস এবং টেবিলের ওপরের বিশেষ রুটি| 14 বাতির জন্য বাতিদানসমূহ, তার আনুষঙ্গিক অঙ্গ এবং বাতির জন্য তেল| 15 ধূপ বেদী এবং তার খুঁটিসমূহ; অভিষেকের তেল এবং সুগন্ধি ধূপ; য়ে পর্দা পবিত্র তাঁবুর প্রবেশদ্বার ঢেকে রাখবে| 16 হোমবলির জন্য বেদী এবং তার পিতলের জাল, খুঁটিগুলি এবং তার বাসনকোসন, পিতলের পাত্র ও তার দান; 17 প্রাঙ্গণের চারদিকের পর্দা, তাদের খুঁটি ও ভিত্তিসমূহ এবং প্রাঙ্গণের প্রবেশদ্বারের পর্দা 18 সমাগম তাঁবুর জন্য এবং প্রাঙ্গণের জন্য কীলকগুলি এবং তাদের দড়িগুলি; 19 পবিত্র স্থানে পরার জন্য যাজকের বিশেষ বস্ত্র -এসবই তোমরা আনবে| এই বিশেষ বস্ত্র যাজক হারোণ ও তার পুত্ররা পরবে| তারা যখন যাজক হবে তখন তারা এই বস্ত্র পরবে|” 20 তারপর ইস্রায়েলের সমগ্র মণ্ডলী মোশির কাছ থেকে চলে গেল| 21 প্লত্যেকে, যাদের হৃদয়ে প্রবৃত্তি ও মনে ইচ্ছা হল তারা প্রভুর জন্য উপহার নিয়ে এল| এই উপহার সামগ্রীগুলি সমাগম তাঁবুর জন্য, তাঁবুর ভেতরের প্রযোজনীয জিনিস এবং বিশেষ বস্ত্র তৈরীর কাজে লাগানো হল| 22 পুরুষ, স্ত্রী যারা ইচ্ছুক ছিল প্রভুর জন্য উপহার সামগ্রী নিয়ে এলো| তারা পিন, দুল, আংটি ও অন্যান্য গযনা নিয়ে এল এবং সমস্ত প্রভুকে দিয়ে দিল| এটা ছিল প্রভুর জন্য বিশেষ নৈবেদ্য. 23 য়ে সমস্ত লোকের কাছে মিহি শনের কাপড় ছিল এবং নীল, বেগুনী ও লাল সুতো ছিল তারা তা নিয়ে প্রভুর কাছে এলো, যাদের কাছে ছাগলের লোম বা লাল রঙ করা মেষের চামড়া বা মসৃণ চামড়া ছিল তারা নিয়ে এল এবং প্রভুকে দিল| 24 যারা প্রভুকে রূপো বা পিতল দিতে চাইল তারা সেটা নিয়ে এল| যাদের কাছে বাবলা কাঠ ছিল যা সমাগম তাঁবু নির্মাণের কাজে ব্যবহার করা য়েতে পারে তারা সেটা আনল এবং তা প্রভুকে দিল| 25 প্রতিটি দক্ষ মহিলা তাদের হাত দিয়ে সুতো কিটে মিহি শনের কাপড় বুনল এবং লাল, নীল ও বেগুনী সুতো কাটল| 26 ঐ দক্ষ মহিলারা যারা সাহায্য করতে চাইল, তারা ছাগলের লোম থেকে কাপড় তৈরী করল| 27 ইস্রায়েলবাসীদের দলপতিরা গোমেদ ও অন্যান্য মণিমাণিক্য নিয়ে এলো য়েগুলি এফোদ ও যাজকের বক্ষাবরণের উপর লাগানো হবে| 28 তারা মশলা ও জলপাই তেলও নিয়ে এল, এগুলি সুগন্ধি ধূপ, অভিষেকের তেল ও প্রদীপের তেল হিসেবে ব্যবহৃত করবার জন্য| 29 সমস্ত পুরুষ ও নারী, যারা সাহায্য করতে চাইছিল তারা প্রভুর জন্য উপহার সামগ্রী নিয়ে এল| তারা নিজেদের ইচ্ছায স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এই উপহারসামগ্রী প্রদান করল| প্রভু মোশি ও তার লোকদের য়েসব জিনিস বানাতে আদেশ করেছিলেন সেইসব জিনিসই এই উপহার সামগ্রীর সাহায্যে তৈরী করা হল| 30 তারপর মোশি ইস্রায়েলবাসীদের বলল, “দেখ, প্রভু যিহূদা বংশের হূরের পৌত্র, উরির পুত্র বত্সলেলকে মনোনীত করেছেন| 31 তিনি তাকে ঐশ্বরিক ক্ষমতা দিয়েছেন| তিনি তাকে জ্ঞানে ও সর্বপ্রকার বিদ্য়ায পারদর্শী করে তুলেছেন| 32 সে সোনা, রূপো ও পিতলের জিনিস তৈরী করে তার ওপর কারুকার্য়্য় করতে পারে| 33 সে মূল্যবান পাথর ও মণিমাণিক্য কেটে বসাতে পারে| সে কাঠ দিয়েও সর্বপ্রকার জিনিস তৈরী করতে পারে| 34 প্রভু বত্সলেল ও অহলীযাবকে শিক্ষাদান করার বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছেন| অহলীযাব হল দান বংশীয অহীষামকের পুত্র| 35 প্রভু এই দুজনকেই সর্বপ্রকার কাজ করার জন্য বিশেষ দক্ষতা দিয়েছেন| তারা ছুতোর এবং ধাতুর কাজে দক্ষ| তারা মিহি শনের কাপড়, নীল, বেগুনী এবং লাল সুতোর সাহায্যে কাপড়ে কারুকার্য়্য় করে ও কাপড় বোনে| তারা পশম দিয়েও কাপড় বুনতে পারে|
1 “অতএব বত্সলেল, অহলীযাব ও অন্যান্য সব দক্ষ কারিগরদের অবশ্যই প্রভুর আদেশ অনুসারে কাজটি করতে হবে| প্রভু এদের জ্ঞান ও বুদ্ধি দিয়েছেন যাতে এরা পারদর্শিতার সঙ্গে পবিত্র স্থান তৈরীর কাজ করতে পারে|” 2 তারপর মোশি বত্সলেল, অহলীযাব এবং য়েসব লোকদের প্রভু বিশেষ দক্ষতা দিয়েছিলেন তাদের ডেকে ইস্রায়েলবাসীদের আনা উপহার সামগ্রীগুলি তাদের হাতে তুলে দিল| এই সব লোকরা পবিত্র স্থান তৈরীর কাজে সাহায্য করার জন্যই এসেছিল এবং তারা এই উপহারগুলি ঈশ্বরের পবিত্র স্থান তৈরীর কাজে লাগাল| লোকরা প্রত্যেক দিন সকালেই উপহার নিয়ে আসত| 3 4 শেষকালে ঐসব কারিগররা পবিত্র স্থানের কাজ ছেড়ে মোশির কাছে এল| তারা বলল, 5 “আমাদের তাঁবুর কাজ শেষ করার জন্য যা প্রযোজন তার চেযে লোকরা অনেক বেশী জিনিস এনেছে|” 6 তখন মোশি শিবিরের চারদিকে খবর পাঠাল: “কোনও নারী বা পুরুষ পবিত্র স্থানের জন্য আর কোনও উপহার তৈরী করবে না|” তাই লোকদের উপহার না দিতে বাধ্য করা হল| 7 তারা প্রয়োজনের চেযে অনেক বেশী জিনিস এনেছিল| 8 তারপর দক্ষ কারিগররা পবিত্র তাঁবু তৈরী করবার কাজ আরম্ভ করল| তারা মিহি শনের কাপড়, বেগুনী, নীল ও লাল সুতো দিয়ে দশটি পর্দা তৈরী করল| তারা তার ওপর সূতো দিয়ে ঈশ্বরের বিশেষ ডানাযুক্ত করূব দূতের ছবি বসাল| 9 প্রত্যেকটি পর্দাই ছিল সমান মাপের - 28 হাত লম্বা ও 4 হাত চওড়া| 10 তারপর কারিগররা সেই পর্দাগুলি জুড়ে দুভাগে ভাগ করল| পাঁচটি করে পর্দা নিয়ে একেকটি ভাগ হলো| 11 তারা নীল কাপড় দিয়ে প্রত্যেক ভাগের পর্দার কিনারায একটি ফাঁস তৈরী করল| 12 প্রতিটি ভাগের পর্দার ধারে 50টি করে ফাঁস দিল| ফাঁসগুলি ছিল একে অপরের বিপরীতে| 13 তারা দুটি পর্দাকে জোড়া দেবার জন্য 50টি সোনার আংটা তৈরী করল| এইভাবে পবিত্র তাঁবুটিকে একসঙ্গে একটি খণ্ডে যুক্ত করা হল| 14 তারপর কারিগররা সেই পবিত্র তাঁবুর আচ্ছাদনের জন্য আরেকটি তাঁবু তৈরী করল| তারা ছাগলের লোম দিয়ে এগারোটি পর্দা বানাল| 15 সবগুলি পর্দাই ছিল সমান মাপের - 30হাত লম্বাও 4 হাত চওড়া| 16 তারপর পাঁচটি পর্দা জুড়ে একটি ও ছয়টি পর্দা জুড়ে আরেকটি ভাগ করা হল| 17 দুই ভাগের পর্দার মাঝেই 50টি করে ফাঁস লাগানো হল| 18 দুই ভাগের পর্দাগুলি জুড়ে একটি তাঁবু বানানোর জন্য তারা 50টি পিতলের আংটা তৈরী করল| 19 তারপর তারা পবিত্র তাঁবুর জন্য আরো দুটি আচ্ছাদন তৈরী করল| একটি বানানো হলো লাল রঙ করা ভেড়ার চামড়া দিয়ে আর অন্যটি বানানো হল মসৃণ চামড়া দিয়ে| 20 তারপর কারিগররা পবিত্র তাঁবুকে দাঁড় করানোর জন্য বাবলা কাঠের কাঠামো বানালো| 21 প্রতিটি কাঠামো ছিল 10 হাত লম্বা ও 1.5 হাত চওড়া| 22 প্রতিটি কাঠামো পাশাপাশি দুটি তক্তা জোড়া দিয়ে তৈরী হয়েছিল| প্রতিটি কাঠামো ছিল একইরকম| 23 এইভাবে তারা পবিত্র তাঁবুর কাঠামোগুলো তৈরী করল| তারা পবিত্র তাঁবুর দক্ষিণ দিকের জন্য 20টি কাঠামো তৈরী করল| 24 তারপর ঐ কাঠামোর জন্য 40টি রূপোর পায়া তৈরী করল| প্রত্যেকটি কাঠামোতে দুটি করে পায়া ছিল| প্রতিটি তক্তার ধারে একটি করে পায়া| 25 তাঁবুর উত্তর দিকের জন্যও তারা 20টি কাঠামো তৈরী করল| 26 তারা 40টি রূপোর ভিত্তি তৈরী করল, প্রত্যেক কাঠামোর জন্য দুটি করে ভিত্তি| 27 তাঁবুর পিছনে পশ্চিম দিকের জন্য তারা আরো দুটি কাঠামো তৈরী করল| 28 পবিত্র তাঁবুর পিছনে কোনার দিকের জন্যও তারা দুটি কাঠামো তৈরী করল| 29 এই কাঠামোগুলিকে একত্র করে নীচের দিকে জোড়া দেওয়া হল এবং ওপর দিকে একটা আংটা দিয়ে দুদিকের কোনার কাঠামোগুলি জোড়া হল| 30 পবিত্র তাঁবুর পশ্চিম দিকের জন্য মোট আটটি কাঠামো ছিল| সেখানে 16টি রূপোর পায়াও ছিল যা প্রতিটি কাঠামোতে দুটি করে লাগানো হল| 31 তারপর কারিগররা বাবলা কাঠ দিয়ে কাঠামোর আগল তৈরী করল| তাঁবুর প্রথম পাশে পাঁচটি আগল, 32 অন্য দিকে পাঁচটি আগল লাগালো এবং পেছনদিকে অর্থাত্ পশ্চিম দিকে পাঁচটি আগল লাগালো| 33 মাঝের আগলটিকে রাখা হল কাঠামোর একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত জুড়ে| 34 কাঠামোগুলিকে সোনায মুড়ে দেওয়া হল| তারপর তারা সোনার আংটা তৈরী করল আগলগুলি ধরে রাখার জন্য এবং আগলগুলি সোনা দিয়ে মুড়ে দেওয়া হল| 35 তারা মিহি শনের কাপড় দিয়ে পর্দাসমূহ তৈরী করল এবং তারা বিশেষ পর্দাটি তৈরী করবার জন্য নীল, বেগুনী ও লাল সূতো তৈরী করল| তারা সেগুলোর ওপর করূব দূতদের চেহারা সেলাই করল| 36 চারটি বাবলা কাঠের খুঁটি বানিয়ে সোনা দিয়ে মুড়ে দেওয়া হল| তারা খুঁটির জন্য সোনার আংটা তৈরী করল এবং চারটি করে রূপোর পায়া তৈরী করল| 37 তারপর তারা তাঁবুতে ঢোকার জন্য দরজার পর্দা বানাল মিহি শনের কাপড় এবং নীল, বেগুনী ও লাল সুতা ব্যবহার করে| এর ওপর তারা সুতার কাজও করল| 38 তারপর তারা এই ঢোকার দরজার পর্দার জন্য পাঁচটি খুঁটি ও আংটা তৈরী করল| তারপর এই খুঁটির ও পর্দার আংটার মাথাগুলি সোনা দিয়ে মুড়ে দেওয়া হল| তারপর খুঁটির জন্য পাঁচটি করে পিতলের পায়া প্রস্তুত করা হল|
1 বত্সলেল বাবলা কাঠ দিয়ে পবিত্র সিন্দুক তৈরী করল| সিন্দুকটি 2.5 হাত লম্বা, 1.5 হাত চওড়া আর 1.5 হাত উঁচু| 2 তারপর সে খাঁটি সোনা দিয়ে সিন্দুকের ভেতর ও বাইরের দিকে মুড়ে দিল| সে সিন্দুকের চারিদিকে সোনার জরি দিয়ে ঘিরেও দিল| 3 এরপর সে চারটি সোনার আংটা চারকোণায় রাখল সিন্দুকটি বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য| এর একদিকে দুটি আংটা লাগানো ছিল এবং দুটি আংটা লাগানো ছিল এর অন্য দিকে| 4 সিন্দুকটি বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাবলা কাঠের খুঁটি তৈরী করে সে সেগুলি খাঁটি সোনায মুড়ে দিল| 5 তারপর সে পবিত্র সিন্দুকের প্রতিটি ধারে আংটাগুলির ভেতর দিয়ে খুঁটিগুলি ঢুকিয়ে দিল| 6 তারপর সে খাঁটি সোনা দিয়ে আচ্ছাদনটি তৈরী করল| এটা ছিল 2.5 হাত লম্বা ও 1.5 হাত চওড়া| 7 তারপর সে পেটানো সোনা দিয়ে দুটি করূব দূত তৈরী করল এবং সেগুলো আচ্ছাদনের দুধারে রেখে দিল| 8 তারপর সে করূব দূতের মূর্ত্তি দুটি পাপমোচন স্থানের আচ্ছাদনের সঙ্গে জুড়ে একত্র করল| 9 দূতরা ডানা আকাশে ছড়িয়ে পবিত্র সিন্দুকটিকে ঢেকে দিল| দূতরা পরস্পর মুখোমুখি হয়ে পাপমোচন স্থানের দিকে তাকিযে রইল| 10 বত্সলেল বাবলা কাঠ দিয়ে একটি 2 হাত লম্বা, 1 হাত চওড়া ও 1.5 হাত উঁচু টেবিল বানাল| 11 টেবিলের চারধার খাঁটি সোনার পাত দিয়ে সে মুড়ে দিল| এবং তার চারধারে একটি সোনার ঝালর লাগিয়ে দিল| 12 তারপর সে একটি 1 হাত চওড়া কাঠামো তৈরী করল টেবিলের সব ধার ঘিরে এবং কাঠামোর চারপাশে সোনার ঝালর লাগালো| 13 তারপর সে টেবিলের চারকোণায চারপায়ায চারটি সোনার আংটা লাগাল| 14 সে টেবিলটাকে বইবার জন্য আংটাগুলো কাঠামোর খুব কাছে আটকে দিল| 15 তারপর সে টেবিলটি বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাবলা কাঠের খুঁটি তৈরী করল| খাঁটি সোনা দিয়ে খুঁটিগুলিও মুড়ে দিল| 16 এরপর সে টেবিলে ব্যবহারের জন্য সোনার প্লেট, চামচ, বাটি ও কলসী বানাল| পেয নৈবেদ্য ঢালার জন্য বাটি ও কলসী ব্যবহার করা হল| 17 তারপর সে সোনার বাতিদানটি তৈরী করল| সে খাঁটি সোনা হাতুড়ি দিয়ে পেটালো এবং তৈরী করল বাতিদানের বিস্তৃত পাদানী| সে ফুল, পাতা, কুঁড়ি দিয়ে কারুকার্য়্য় করে সবকিছু একত্রে জুড়ে দিল| 18 বাতিদানের ছয়টি শাখা, একদিকে তিনটি অপরদিকে আরও তিনটি| 19 প্রতিটি ডালে থাকল তিনটি করে ফুল| সেগুলি কাঠ বাদামের ফুলের মতো তাতে কুঁড়ি ও পাতা রাখা হল| 20 বাতিদানের দণ্ডে আরও চারটি ফুল রাখা হল কুঁড়ি ও পাপড়ি সমেত যা দেখতে বাদাম ফুলের মতো| 21 তাতে একেক দিকে তিনটি করে মোট ছয়টি ডালও রাখা হল| প্রতি জোড়া ডালগুলির নীচে য়েগুলি বিস্তৃত পাদানীর সঙ্গে যুক্ত ছিল, সেখানে কুঁড়ি ও পাপড়িসহ একটি ফুল ছিল| 22 পুরো বাতিদানটি খাঁটি সোনায ফুলপাতাসহ একসাথে জোড়া দিয়ে তৈরী করা হল| 23 এই বাতিদানের জন্য সাতটি প্রদীপ তৈরী করা হল| তারপর সে খাঁটি সোনা দিয়ে সলতের চিমটা ও শীষদানী পাত্র তৈরী করল| 24 সে মোট 75 পাউণ্ড খাঁটি সোনা ব্যবহার করে এই বাতিদান ও তার আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র তৈরী করল| 25 এরপর ধূপ-ধূনা পোড়াবার জন্য সে বাবলা কাঠ দিয়ে একটি ধূপদানী তৈরী করল| এটা ছিল 1 হাত লম্বা, 1 হাত চওড়া এবং 2 হাত উচ্চতা বিশিষ্ট একটি চৌকোনা জিনিস| ধূপদানের চারকোণের প্রতিটিতে একটি করে শৃঙ্গ ছিল| এই শৃঙ্গগুলি ও ধূপবেদী একটি অখণ্ড টুকরো ছিল| 26 সে ধূপদানের ওপর চারপাশ এবং শৃঙ্গগুলি খাঁটি সোনা দিয়ে মুড়ে দিল| তারপর ধূপদানের চারপাশ সোনার জরি দিয়ে মুড়ে দিল| 27 এই জরির নীচে দুধারে আংটা লাগানো হল| এই আংটা লাগানো হল বয়ে নিয়ে যাওয়ার খুঁটি ধরে রাখার জন্য| 28 সে এই খুঁটিগুলি বাবলা কাঠ দিয়ে তৈরী করে সোনা দিয়ে মুড়ে দিল| 29 তারপর সে একজন সুগন্ধি প্রস্তুতকারক য়েমন করে সুগন্ধ তৈরী করে সেইভাবে পবিত্র অভিষেকের তেল এবং খাঁটি ও সুগন্ধি ধূপ-ধূনা তৈরী করল|
1 তারপর বত্সলেল বাবলা কাঠ দিয়ে হোমবলির বেদী তৈরী করলেন| এটা ছিল 5 হাত লম্বা, 5 হাত চওড়া ও 3 হাত উচ্চতা বিশিষ্ট চৌকোনা আকারের| 2 তারপর সে বেদীর প্রত্যেকটি কোণের জন্য একটি করে শৃঙ্গ বানালো এবং তাদের কোণায জুড়ে দিল যাতে তা অখণ্ড হয় এবং বেদীটি পিতল দিয়ে ঢেকে দিল| 3 সে বেদীতে ব্যবহারের সব সরঞ্জাম পিতল দিয়ে তৈরী করল| সে পাত্র, বেলচা, বাটি, কাঁটা চামচ, চাটু ইত্যাদি তৈরী করল| 4 তারপর সে পিতল দিয়ে জালের মতো একটি ঝাঁঝরি তৈরী করল| বেদীর বেড়ের নীচে থেকে মাঝখান পর্য়ন্ত এই ঝাঁঝরি বসানো হল| 5 তারপর সে বেদীটি বয়ে নিয়ে যাওয়ার খুঁটি লাগাবার জন্য ঝাঁঝরির চারকোণা়য চারটি আংটা লাগাল| 6 তারপর সে বাবলা কাঠ দিয়ে খুঁটি তৈরী করে পিতল দিয়ে মুড়ে দিল| 7 বেদীটি বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য খুঁটিগুলো আংটার ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হল| বেদীর ধারগুলো তৈরী করা হল তক্তা দিয়ে| এটা ছিল একটা খালি সিন্দুকের মতো ফাঁপা| 8 তারপর সে পিতল দিয়ে পাত্র এবং পাত্রের পায়া তৈরী করল| এটা মহিলাদের দেওয়া পিতলের আযনা থেকে নেওয়া হয়েছিল| এই মহিলারা সমাগম তাঁবুর প্রবেশ দরজায় সেবা করার জন্য এসেছিল| 9 তারপর সে প্রাঙ্গণের চারিদিকে পর্দার একটি দেওয়াল তৈরী করল| দক্ষিণ দিকে সে 100 হাত লম্বা পর্দার একটি দেওয়াল তৈরী করল| এই পর্দাগুলো ছিল মিহি শনের কাপড় দিয়ে তৈরী| 10 কুড়িটি খুঁটির সাহায্যে এই পর্দাগুলিতে অবলম্বন দেওয়া ছিল| খুঁটিগুলো ছিল 20টি পিতলের ভিত্তির উপর| খুঁটির আংটা ও পর্দার বন্ধনী ছিল রূপোর তৈরী| 11 উত্তর দিকের প্রাঙ্গণেও ছিল 100 হাত লম্বা পর্দার একটি দেওয়াল| সেখানে 20টি পিতলের ভিত্তির ওপর 20টি খুঁটি ছিল| খুঁটির আংটা ও পর্দার বন্ধনী ছিল রূপোর| 12 পশ্চিমদিকের প্রাঙ্গণে থাকল 50 হাত লম্বা পর্দার দেওয়াল| আর থাকল 10টি খুঁটি ও 10টি ভিত্তি| খুঁটির আংটা ও পর্দার বন্ধনী তৈরী করা হল রূপো দিয়ে| 13 প্রাঙ্গণের পূর্ব দিকে 50 হাত চওড়া| প্রাঙ্গণে প্রবেশের দরজা রাখা হল এই দিকেই| 14 প্রবেশ দরজার দিকের পর্দা ছিল 15 হাত লম্বা| এইদিকে তিনটি খুঁটি ও তিনটি ভিত্তি ছিল| 15 অন্যদিকের প্রবেশ দরজাও ছিল 15 হাত লম্বা| ঐদিকে তিনটি খুঁটি ও তিনটি পায়া ছিল| 16 প্রাঙ্গণের চারিদিকের সব পর্দাই ছিল মিহি শনের কাপড়ের তৈরী| 17 খুঁটির ভিত্তিগুলো ছিল পিতলের তৈরী| দণ্ডগুলির আংটা ও পর্দার বন্ধনী ছিল রূপো দিয়ে তৈরী| খুঁটির মাথাগুলো ছিল রূপো দিয়ে মোড়া| প্রাঙ্গণের সব খুঁটিতেই ছিল রূপোর পর্দাবন্ধনী| 18 প্রাঙ্গণের প্রবেশ দরজার পর্দা তৈরী করা হল মিহি শনের কাপড় দিয়ে| এবং নীল, বেগুনী ও লাল সুতো দিয়ে| পর্দার ওপর সুতোর কারুকার্য়্য়ও করা হল| পর্দাটি ছিল 20 হাত লম্বা এবং 5 হাত উঁচু| এগুলো প্রাঙ্গণের চারিদিকের পর্দার সমান উঁচু| 19 পর্দা ঠেকা দেওয়া হল চারটি খুঁটি ও চারটি পিতলের পায়া দিয়ে| খুঁটির আংটা তৈরী করা হল রূপো দিয়ে| খুঁটির ওপরের দিক আর পর্দার বন্ধনী রূপোর| 20 পবিত্র তাঁবুর সমস্ত কীলকগুলো এবং প্রাঙ্গণের চারিদিকের পর্দাগুলো ছিল পিতলের তৈরী| 21 মোশি লেবীয়দের আদেশ দিল পবিত্র তাঁবু বা সাক্ষ্যের তাঁবু তৈরীর কাজে যা কিছু ব্যবহার করা হয়েছে তা একটি তালিকায লিখে রাখতে| এই তালিকার দায়িত্ব দেওয়া হল যাজক হারোণের পুত্র ঈথামরকে| 22 যিহূদা বংশীয হূরের পৌত্র ও উরির পুত্র বত্সলেল মোশিকে দেওয়া প্রভুর আদেশ অনুসারে সব কিছু তৈরী করল| 23 দান বংশীয অহীষামকের পুত্র অহলীযাব তাকে এই কাজে সাহায্য করল| সে একজন দক্ষ কারিগর ও কারুশিল্পী| সে মিহি শনের কাপড়, নীল, বেগুনী ও লাল সুতো বোনায পারদর্শী ছিল| 24 এই পবিত্র স্থান নির্মাণের জন্য 2 টনেরও বেশী সোনা দেওয়া হয়েছিল| এটা ছিল সরকারি হিসাব অনুযায়ীওজন| 25 যতজন লোককে গোনা হয়েছিল তারা সবাই আমলাতান্ত্রিক পরিমাণ অনুসারে 3.75 টন রূপো দিয়েছিল| 26 কুড়ি বছর বা তার বেশী বযসের লোকদের গোনা হয়েছিল| মোট 6,03,550 জন পুরুষ ছিল এবং প্রত্যেককে আমলাতান্ত্রিক পরিমাপ অনুসারে 1.5 আউন্স রূপো কর হিসেবে দিতে হয়েছিল| 27 তারা 3.75 টন রূপো ব্যবহার করে প্রভুর পবিত্র স্থান এবং পর্দার জন্য 100টি ভিত্তি তৈরী করেছিল| তারা পবিত্র স্থানের ভিত্তির জন্য এবং পর্দার পায়ার জন্য 3.75 টন রূপো ব্যবহার করেছিল| মোট 100টি ভিত্তি করা হয়েছিল| তারা প্রতিটি ভিত্তির জন্য 75 পাউণ্ড রূপো ব্যবহার করেছিল| 28 বাকি 50 পাউণ্ড রূপো দিয়ে আংটা পর্দার বন্ধনী তৈরী করেছিল এবং খুঁটির মাথা মুড়ে দিয়েছিল| 29 প্রভুকে 26.5 টনেরও বেশী পিতল নৈবেদ্য দেওয়া হয়েছিল| 30 ঐ পিতল দিয়ে সমাগম তাঁবুর প্রবেশ দরজার পায়া তৈরী করা হয়েছিল| পিতল দিয়ে, বেদী ও ঝাঁঝরি তৈরী হয়েছিল| বেদীতে প্রযোজনীয সমস্ত জিনিসপত্র পিতল দিয়ে তৈরী করা হয়েছিল| 31 প্রাঙ্গণের চারিদিকের পর্দা ও প্রবেশ দরজার পর্দার পায়াও পিতল দিয়ে বানানো হয়েছিল| পবিত্র তাঁবুর খুঁটি এবং প্রাঙ্গণের চারদিকের পর্দার জন্য পিতল ব্যবহার করা হয়েছিল|
1 যাজকরা যখন প্রভুর পবিত্র স্থানে সেবা করবে তখন তারা য়ে বিশেষ পোশাক পরবে, সেটা নীল, বেগুনী ও লাল সুতো দিয়ে কারিগররা তৈরী করল| তারা মোশিকে দেওয়া প্রভুর আদেশ অনুযায়ীহারোণের জন্য বিশেষ পোশাক তৈরী করল| 2 তারা মিহি শনের কাপড়, সোনার জরি, নীল, বেগুনী ও লাল সুতো দিয়ে এফোদ তৈরী করল| 3 তারা সোনা পিটিযে সরু পাত তৈরী করে তারপর তা থেকে সোনার জরি বানাল| তারপর তারা সেই সোনার জরি নীল, বেগুনী, লাল সুতো ও শনের কাপড়ের সাথে একসাথে বুনল| এটা খুবই দক্ষ কারিগরের কাজ| 4 তারা এফোদের জন্য কাঁধের কাপড় বানাল য়েটা এফোদের দুই কোনে বেঁধে দেওয়া হল| 5 তারা কোমরবন্ধনী বুনে এফোদের সাথে জুড়ে দিল| মোশিকে দেওয়া প্রভুর আদেশ অনুযায়ীএটাও এফোদের মতই মিহি শনের কাপড় নীল, বেগুনী ও লাল সুতো এবং সোনার জরি দিয়ে বোনা হল| 6 কারিগররা এফোদের জন্য সোনার ওপর গোমেদ বসালো| তারা ঐ পাথরগুলোর ওপর ইস্রায়েলের পুত্রদের নাম খোদাই করল| 7 তারপর তারা এই মণিগুলো এফোদের ওপর বসিযে দিল| এই অলংকারগুলি ইস্রায়েলের লোকদের জন্য একটি স্মারক হয়ে থাকবে| এসবই করা হয়েছিল মোশিকে দেওয়া প্রভুর আদেশ অনুসারে| 8 তারপর তারা বক্ষাবরণ তৈরী করল| ঠিক এফোদের মতোই এটাও ছিল একজন দক্ষ কারিগরের কাজ| এটা তৈরী করা হল সোনার জরি, মিহি শনের কাপড় এবং নীল, বেগুনী ও লাল কাপড় দিয়ে| 9 বক্ষাবরণটিকে অর্ধেক করে ভাঁজ করে চারকোণা একটি পকেটের আকার দেওয়া হল| এটা ছিল 9 ইঞ্চি লম্বা আর 9 ইঞ্চি চওড়া| 10 তারপর কারিগররা বক্ষাবরণটির ওপর চার সারি মণিমাণিক্য বসালো| প্রথম সারিতে ছিল চূনী, পীতমণি ও মরকত| 11 দ্বিতীয সারিতে ছিল পদ্মরাগ, নীলকান্ত ও পান্না, 12 তৃতীয় সারিতে ছিল পোখরাজ, য়িস্ম ও কটাহেলা| 13 চতুর্থ সারিতে ছিল বৈদুর্য়্য়, গোমেদ ও সূর্য়কান্তমণি| এইসব মণি সোনার ওপর বসানো হল| 14 বক্ষাবরণটির ওপর মোট বারোটি মণি ছিল| ইস্রায়েলের প্রত্যেক পুত্রের জন্য ছিল একটি করে মণি| প্রত্যেক অলঙ্কারের ওপর শীলমোহরের মতো ইস্রায়েলের বারোটি পরিবারগোষ্টীর একটি করে নাম খোদাই করা ছিল| 15 কারিগররা বক্ষাবরণের জন্য খাঁটি সোনার শেকলসমূহ বানালো| এই শেকলগুলি দড়ির মত পাকানো ছিল| 16 কারিগররা দুটি সোনার আংটা বানিয়ে বক্ষাবরণের দুই কোণে আটকে দিল| তার কাঁধের জন্য দুটি সোনার স্থালীও তৈরী করল| 17 তারা সোনার চেন দুটিকে বক্ষাবরণের কোণের আংটার সাথে বেঁধে দিল| 18 তারা আরো দুটি সোনার আংটা বানিয়ে বক্ষাবরণের অপর দুটি কোণে আটকে দিল| এটা ছিল বক্ষাবরণের ভিতরের দিকে এফোদের ঠিক পরেই| তারা সোনার শেকলের অপর প্রান্তগুলি সামনের দিক দিয়ে এফোদের কাঁধের পট্টির সোনার অলঙ্কারের সঙ্গে যুক্ত করেছিল| 19 তারপর তারা আরো দুটি সোনার আংটা তৈরী করল এবং সেগুলি এফোদের পাশে বক্ষাবরণের ভেতরদিকের ধারে আটকে দিল| 20 তারা আরো দুটি সোনার আংটা বসাল কাঁধের পট্টির নীচে এফোদের সামনে| এই আংটাগুলি ছিল বন্ধনীর কাছে, কোমরবন্ধনীর ওপর| 21 তারপর তারা একটি নীল ফিতের সাহায্যে বক্ষাবরণীর আংটার সাথে এফোদের আংটা বেঁধে দিল| এইভাবে প্রভুর আদেশ অনুযায়ীবক্ষাবরণটি এফোদের সাথে শক্তভাবে বাঁধা থাকল| 22 তারপর তারা এফোদের জন্য সম্পূর্ণরূপে নীল কাপড় দিয়ে একটি পোশাক বুনল| 23 তারা আলখাল্লার মাঝখানে একটি ফুটো করল এবং এই ফুটোর চারধার দিয়ে এক টুকরো কাপড় সেলাই করে দিল, ফুটোটি যাতে না ছেঁড়ে তার জন্য| 24 তারপর তারা মিহি শনের কাপড় এবং নীল, বেগুনী ও লাল সুতো দিয়ে বেদানা তৈরী করল| এই বেদানাগুলি তারা আলখাল্লার নীচের ধারে ঝুলিয়ে দিল| 25 তারা খাঁটি সোনার ঘন্টা তৈরী করল এবং সেগুলি আলখাল্লার নীচের ধারে বেদানার মাঝে মাঝে লাগিয়ে দিল| 26 আলখাল্লার নীচের ধারে প্রত্যেকটি বেদানার মাঝখানে একটি করে ঘন্টা লাগানো হল| মোশিকে দেওয়া প্রভুর আদেশমতই প্রভুর সেবা করার সময় যাজকের পরার জন্য পোষাক তৈরী করা হল| 27 দক্ষ কারিগররা হারোণ ও তার পুত্রদের জন্য মিহি শনের কাপড়ের জামা তৈরী করল| 28 তারা মিহি শনের কাপড় দিয়ে একটি পাগড়ি, মাথায় বাঁধার ফিতে ও ভেতরে পরার পোশাক তৈরী করল| 29 মোশিকে দেওয়া প্রভুর আদেশমতো তারা মিহি শনের কাপড় এবং নীল, বেগুনী ও লাল সুতো দিয়ে কাপড়ের ওপর সুঁচের কাজ করে বন্ধনী তৈরী করল| 30 তারপর তারা খাঁটি সোনা থেকে সোনার পাত তৈরী করল পবিত্র মুকুটের জন্য| তারা সোনার ওপর এই কথাগুলি খোদাই করল; ‘পবিত্র প্রভুর কাছে|’ 31 তারপর তারা এই সোনার পাতটিকে একটি নীল ফিতের সঙ্গে বেঁধে দিল| তারা মোশিকে দেওয়া প্রভুর আদেশ অনুসারে নীল ফিতেটিকে পাগড়ির সঙ্গে জড়িয়ে বেঁধে দিল| 32 অবশেষে পবিত্র তাঁবু বা সমাগম তাঁবুর কাজ শেষ হল| মোশিকে প্রভু যা যা আদেশ দিয়েছিলেন ইস্রায়েলবাসী ঠিক সেইভাবেই সবকিছু করল| 33 তারপর তারা মোশিকে ডেকে পবিত্র তাঁবু ও তার ভেতরের সব জিনিস দেখাল| তারা মোশিকে আংটা, কাঠামো, আগল, খুঁটি এবং পায়া দেখাল| 34 তারা তাকে তাঁবুর লাল রঙ করা মেষের চামড়ার তৈরী আবরণ দেখাল| তারা তাকে মসৃণ চামড়ার তৈরী আবরণও দেখাল| তাকে সর্বোচ্চ পবিত্রতম স্থানের প্রবেশ দরজার পর্দাও দেখানো হল| 35 মোশিকে সাক্ষ্য সিন্দুকটিও দেখানো হল| সিন্দুকটি বহন করার জন্য খুঁটি ও সিন্দুকটির আবরণও তারা দেখাল| 36 তারা তাকে টেবিল ও তার উপরে রাখা জিনিস এবং বিশেষ রুটিও দেখাল| 37 তারা তাকে খাঁটি সোনার তৈরী দীপদান ও তার দীপগুলিও দেখাল| তারা দীপের জন্য ব্যবহৃত তেল ও দীপের আনুষঙ্গিক অংশগুলিও দেখাল| 38 মোশিকে সোনার বেদী, অভিষেকের তেল, সুগন্ধী ধূপ-ধূনা এবং তাঁবুর প্রবেশ দরজার পর্দাও দেখানো হল| 39 তারা পিতলের বেদী ও পিতলের খুরা দেখাল| তারা বেদী বহন করার খুঁটি ও বেদীতে ব্যবহার্য় সব জিনিস দেখাল| পাত্র এবং পাত্রের পায়াও দেখাল| 40 তারা মোশিকে প্রাঙ্গণের চারিদিকের পর্দা, তার খুঁটি এবং পায়াও দেখাল| প্রাঙ্গণের প্রবেশ দরজার পর্দা, দড়ি, তাঁবুর খুঁটি এবং পবিত্র তাঁবু বা সমাগম তাঁবুর সমস্ত কিছুই মোশিকে দেখানো হল| 41 তারা পবিত্র স্থানে সেবার জন্য যাজকদের পোশাক, হারোণ এবং তার পুত্রদের জন্য তৈরী বিশেষ পোশাক মোশিকে দেখাল| এই পোশাক হারোণের পুত্ররা যাজকের কাজ করার সময় পরবে| 42 ইস্রায়েলবাসীরা মোশিকে দেওয়া প্রভুর আদেশ মতোই সমস্ত কাজ করেছিল| 43 মোশি সবকিছু ভাল করে পর্য়বেক্ষণ করে দেখল য়ে সবকিছুই হুবহু প্রভুর আদেশ মতোই হয়েছে| তাই মোশি তাদের আশীর্বাদ করল|
1 তখন প্রভু মোশিকে বললেন, 2 “প্রথম মাসের প্রথম দিনে তোমরা পবিত্র তাঁবু অর্থাত্ সমাগম তাঁবু স্থাপন করবে| 3 সাক্ষ্য সিন্দুকটি পবিত্র তাঁবুতে রাখো এবং আবরণ দিয়ে ঢেকে দাও| 4 টেবিলটি নিয়ে এসো এবং ওপরে য়ে সব জিনিস থাকার কথা সেগুলি রাখো| তারপর দীপদানটি তাঁবুতে নিয়ে এসে দীপগুলি ঠিক জায়গা মতো রাখো| 5 এরপর তাঁবুতে নৈবেদ্য দেওয়ার জন্য সোনার বেদীটি নিয়ে এসো| সাক্ষ্য সিন্দুকটির সামনে বেদীটি রাখো| পবিত্র তাঁবুর প্রবেশ দরজায় পর্দা টাঙিযে দাও| 6 “হোমবলি দেওয়ার জন্য বেদীটি পবিত্র তাঁবুর প্রবেশ দরজার সামনে রাখো| 7 হাতমুখ ধোওযার জন্য পাত্রটিতে জল রেখে সেটি সমাগম তাঁবু ও বেদীর মাঝখানে রাখো| 8 প্রাঙ্গণের চারিদিকে পর্দার দেওয়াল টাঙিযে দাও| তারপর প্রাঙ্গণের প্রবেশ দরজায় পর্দা লাগিয়ে দাও| 9 “অভিষেক তেল ব্যবহার করে পবিত্র তাঁবু ও তার ভেতরের সবকিছুর অভিষেক করো| তুমি যখন ঐসব জিনিসের ওপর তেল ছেটাবে তখন সবকিছু পবিত্র হয়ে যাবে| 10 হোমবলির জন্য বেদীটি অভিষেক করো এবং অভিষেকের তেল দিয়ে বেদীর সমস্ত জিনিস অভিষিক্ত করো| এতে বেদীটি খুব পবিত্র হয়ে উঠবে| 11 পাত্র ও পাত্র দানকে পবিত্র করবার জন্য তাদের অভিষেক করো| 12 “হারোণ ও তার পুত্রদের সমাগম তাঁবুর প্রবেশ দরজায় নিয়ে এসো| তাদের জল দিয়ে স্নান করাও| 13 তারপর হারোণকে বিশেষ পোশাক পরাও| তাকে তেল দিয়ে অভিষেক করে পবিত্র করো| তাহলে সে যাজকরূপে আমার সেবা করতে পারবে| 14 তার পুত্রদের পোশাক পরাও| 15 তার পুত্রদের ঠিক সেভাবে অভিষেক করাও য়েভাবে তাদের পিতাকে করেছ| তাহলে তারাও যাজক হিসেবে আমার সেবা করতে পারবে| যখন তুমি তাদের অভিষেক করবে তখন তারা যাজক হয়ে যাবে| এবং এই পরিবার আগামী দিনেও চিরকালের মত যাজকের কাজ করবে|” 16 মোশি প্রভুর আদেশ মেনে তাঁর নির্দেশ মতো সবকিছু করল| 17 তাই ঠিক সমযে পবিত্র তাঁবু স্থাপন করা হল| তারা মিশর ছেড়ে যাবার দ্বিতীয বছরের প্রথম মাসের প্রথম দিন তাঁবু স্থাপন করা হয়েছিল| 18 মোশি তাঁবুর ভিত্তিগুলো জায়গামত স্থাপন করল| তারপর সে ভিত্তিগুলোর ওপর কাঠামোটি বসাল এবং আগল দিয়ে খুঁটিগুলো বসাল| 19 তারপর মোশি পবিত্র তাঁবুর ওপর বাইরের তাঁবু বসাল| এবং তার ওপর আচ্ছাদন দিল| সে সব কিছুই প্রভুর আদেশ মতো করল| 20 মোশি চুক্তিপত্র নিয়ে পবিত্র সিন্দুকে রাখল| খুঁটিগুলো সিন্দুকের ওপর রেখে সেটিকে আবরণ দিয়ে ঢেকে দিল| 21 তারপর মোশি পবিত্র সিন্দুকটি পবিত্র তাঁবুতে রাখল| সিন্দুকটির সুরক্ষার জন্য সে ঠিক জায়গায় পর্দা টাঙ্গালো এবং এভাবেই সে প্রভুর আদেশ মতো সাক্ষ্য সিন্দুকটির সুরক্ষার ব্যবস্থা করল| 22 তারপর সে পবিত্র তাঁবুর উত্তরদিকে পবিত্র স্থানের পর্দার সামনে টেবিলটি রাখলো| 23 প্রভুর আদেশ অনুসারে মোশি প্রভুর সামনে টেবিলের ওপর রুটি রাখল| 24 তারপর সে তাঁবুটির দক্ষিণ দিকে টেবিলের বিপরীত দিকে দীপদানটি রাখল| 25 প্রভু য়েমনটি আদেশ করেছিলেন সেই মতো মোশি দীপগুলি স্থাপন করল এবং সেগুলো প্রভুর সামনে রাখল| 26 এরপর মোশি সমাগম তাঁবুর পর্দার সামনে সোনার বেদীটি রাখল| 27 প্রভুর আদেশ মতো মোশি তার ভেতরে সুগন্ধি ধূপ-ধূনো পোড়ালো| 28 তারপর মোশি পবিত্র তাঁবুর প্রবেশ দরজায় পর্দা টাঙালো| 29 মোশি হোমবলির বেদীটি সমাগম তাঁবুর প্রবেশ দরজার সামনে রাখল| তারপর মোশি সেই বেদীতে একটি হোমবলি দিল| সে প্রভুকে শস্য নৈবেদ্যও দিল| সে সবকিছুই প্রভুর আদেশ মতো করল| 30 মোশি এরপর সমাগম তাঁবু ও বেদীর মাঝখানে হাত মুখ ধোওযার জন্য জল ভর্ত্তি পাত্রটি রাখল| 31 হাত ও পা ধোযার জন্য মোশি, হারোণ ও তার পুত্ররা এই পাত্রের জল ব্যবহার করল| 32 তারা প্রত্যেকবার তাঁবুতে ঢোকার সময় এবং বেদীর কাছে যাওয়ার সময় তাদের হাত পা ধুয়ে নিল| এসব কিছুই করা হল প্রভুর আদেশ অনুসারে| 33 তারপর মোশি পবিত্র তাঁবুর প্রাঙ্গণের চারিদিকে পর্দা দিয়ে দিল| সে বেদীটি প্রাঙ্গণে রেখে প্রাঙ্গণের প্রবেশ দরজায় পর্দা লাগাল| এইভাবেই মোশি তার সব কাজ শেষ করল| 34 এরপরই মেঘ এসে পবিত্র সমাগম তাঁবু ঢেকে ফেলল| এবং প্রভুর মহিমায পবিত্র তাঁবু পরিপূর্ণ হল| 35 মোশি সমাগম তাঁবুতে ঢুকতে পারল না| কারণ তা মেঘে ঢেকে ছিল এবং প্রভুর মহিমায ছিল পরিপূর্ণ| 36 এই মেঘই ইস্রায়েলের লোকদের দেখিয়ে দিয়েছিল য়ে কখন যাত্রা শুরু করতে হবে| যখন পবিত্র তাঁবুর ওপর থেকে মেঘ সরে যাবে তখনই ইস্রায়েলের লোকরা যাত্রা শুরু করতে পারবে| 37 কিন্তু যখন মেঘ পবিত্র তাঁবুর ওপর ছিল তখন লোকরা তাদের যাত্রা শুরু করার চেষ্টা করেনি| যতক্ষণ না মেঘ ওপরে উঠেছিল ততক্ষণ তারা সেখানেই ছিল| 38 তাই প্রভুর মেঘ দিনের বেলায় ছিল সমাগম তাঁবুর ওপরে এবং রাতে আগুন ছিল মেঘের ভেতরে| তাই ইস্রায়েলের সমগ্র পরিবার তাদের পুরো যাত্রাপথে মেঘটি দেখতে পাচ্ছিল| |